১৬ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ১৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
হাফেজ দ্বীন ইসলামের মা

‘আমার ছেলেকে কেন পাখির মতো গুলি করে হত্যা করা হলো?’

শহীদ হাফেজ দ্বীন ইসলাম - ছবি - বাসস

হাফেজ দ্বীন ইসলাম (২২) বাবা-মায়ের সাথেই থাকতেন ঢাকার যাত্রাবাড়ির ভাড়া বাড়িতে। তিনি চাঁদপুর জেলার মতলব উত্তর উপজেলার তেপুর পূর্ব ইউনিয়নের মধ্য ঠেটালিয়া গ্রামের শাহ আলম বেপারীর ছেলে।

গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বিকেলে বিজয় মিছিলে গিয়ে যাত্রাবাড়ি থানার সামনে পুলিশের গুলিতে নিহত হন দ্বীন ইসলাম।

পুলিশ প্রথমে তাকে গুলি করলে দুই হাতের তালুতে লাগে। পরে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে শরীরের নিচের অংশে বন্দুক ঠেকিয়ে গুলি করে। তাকে ওই স্থান থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যেতেও বাধা দেয় পুলিশ। পরে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ঘটনাস্থলেই শহীদ হন হাফেজ দ্বীন ইসলাম। এমন তথ্য জানান তার বাবা শাহ আলম (৪৫)।

সম্প্রতি শহীদ দ্বীন ইসলামের গ্রামের বাড়ি মতলব উত্তর উপজেলার মধ্য ঠেটালিয়া গ্রামের বেপারী বাড়িতে গিয়ে পাওয়া যায় তার দাদি লতিফা বেগমকে (৭০)। তিনিই কেবল গ্রামে থাকেন।

দ্বীন ইসলামের দাদি বলেন, আমি একাই বাড়িতে থাকি। গত কোরবানির ঈদে আমার ছেলে ও বউসহ দ্বীন ইসলাম বাড়িতে এসেছিল। ঈদের পর আবার ঢাকায় চলে যায়। আমার নাতি সব সময় আমার খোঁজ-খবর নিত। তার বাবা কাজে ব্যস্ত থাকত। সে জন্য আমার সাথে যেকোনো বিষয়ে নাতি কথা বলত। এখনো শুধু আমার চোখের সামনে নাতির চেহারা ভাসে। কান্না জড়িত কণ্ঠে আর বেশি কথা বলতে পারেননি দাদি।

দ্বীন ইসলামের চাচি শাহিনূর বেগম বলেন, ছোটবেলায় দ্বীন ইসলাম স্থানীয় একটি হেফজ মাদরাসায় পড়েছে। ওই মাদরাসাকে সবাই জসিম হুজুরের মাদরাসা বলে। তার বাবা সপরিবারে ঢাকায় চলে যাওয়ার পর যতবারই বাড়িতে এসেছে আমাদের সাথে দেখা হয়েছে এবং কথা হয়েছে। খুবই অমায়িক ব্যবহার ছিলো তার। তার মৃত্যুর পর পুরো গ্রামবাসী শোকাহত। কারণ তার বাবা দুর্ঘটনায় অনেকটা পঙ্গু। দ্বীন ইসলাম বড় ছেলে। বাবাকে সহযোগিতা করার মতো এখন আর কেউ রইল না।

শাহ আলম দুই ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে ভাড়া বাড়িতে থাকেন যাত্রাবাড়ি শহীদ জিয়া কলেজ সড়কের মুন্সীর বাড়িতে। বড় ছেলে শহীদ হাফেজ দ্বীন ইসলাম। ছোট ছেলে সামিউল বেপারী (১৭) শনির আখড়া কলেজে এইচএসসি প্রথম বর্ষে পড়ে। স্ত্রী শিল্পী বেগম (৪০) গৃহিণী। শাহ আলম বর্তমানে যাত্রাবাড়ি থানার মসজিদের পাশে ফুটপাতে চা বিক্রি করেন।

শহীদ দ্বীন ইসলামের মৃত্যুর বর্ণনা দেন বাবা শাহ আলম। টেলিফোনে তার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ৫ আগস্ট দুপুর আড়াইটার দিকে দুই ছেলেসহ দোকানের সামনে রাস্তায় এক লোকের সাথে কথা বলছিলাম। ওই সময় চারদিকে সংঘর্ষ আর গোলাগুলি। কথার মধ্যেই দুই ছেলে আমার সামনে থেকে চলে যায়। বড় ছেলে থানার সামনে গেলে পুলিশ গুলি করে। প্রথমে তার দুই হাতে গুলি লাগে। গুলিতে বাম হাতের অংশ উড়ে যায়। এরপর সেখান থেকে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করলে পুলিশ তার শরীরের নিচের অংশে অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি করে। বিকেল ৩টার দিকে আমি এই ঘটনা জানতে পেরে সেখান থেকে হাসপাতালে নেয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু পুলিশের বাধায় তাকে আর চিকিৎসার জন্য নিতে পারিনি। ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।

শাহ আলম বলেন, সন্ধ্যায় যাত্রাবাড়িতে তার প্রথম নামাজে জানাজা হয়। পরবর্তীতে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে রাত ১২টায় দ্বিতীয় নামাজে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করি।

তিনি বলেন, আমার বড় ছেলে দ্বীন। তাকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিল। গ্রামের মাদরাসায় এক বছর পড়ার পরে এখানে নিয়ে আসি। যাত্রাবাড়ি কুতুবখানা বড় মাদরাসায় দিলে সেখান থেকে হিফজ শেষ করে। গত দুই বছর কোনো মাদ্রাসায় ভর্তি করাইনি। দ্বীন আমার কাজে সহযোগিতা করত। কারণ আমি বেশিরভাগ সময়ই অসুস্থ থাকি। তবে ভেবেছিলাম খুব তাড়াতাড়ি তাকে কিতাব পড়ার জন্য মাদরাসায় ভর্তি করাব। সেই স্বপ্ন আর পূরণ হলো না।

শাহ আলম জানান, ছেলে শহীদ হওয়ার পর থেকে আমার পরিবারের সকলে ভেঙে পড়েছে। ছেলের কথা মনে পড়লে কোনো কাজই ভালো লাগে না। তার মা সারাদিন কান্নাকাটি করে। এই ছেলে ছিল আমাদের হাতের লাঠি। কিন্তু এ লাঠি হারিয়ে আমরা এখন বড় অসহায়। আমরা চাই সরকার আমাদের পাশে থাকুক। আমরা সরকারের কাছে আর্থিক সহযোগিতা চাই। ছোট ছেলের একটা সরকারি চাকরিরর ব্যবস্থা হলে আমরা বেঁচে যাই।

দ্বীন ইসলামের ছোট ভাই সামিউল জানান, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর আমাদের দোকান বন্ধ ছিল। বাবার সাথেই ছিলাম আমরা দুই ভাই। পরে লোকজন আনন্দ মিছিল শুরু করলে সেখানে যাই। থানার সামনে গেলে বড় ভাই গুলি খায়। আমি সেখান থেকে দৌড়ে মাছ বাজারে চলে যাই। কিন্তু ভাই দৌড়ে যেতে পারে নাই। পুলিশ গুলি করলে মাটিতে পড়ে যায়।

দ্বীন ইসলামের মা শিল্পী বেগম টেলিফোনে বলেন, আমার ছেলে কি অন্যায় করেছে? তাকে কেন পাখির মত গুলি করে হত্যা করা হলো? পুলিশ প্রথমে গুলি করে হাতে। ছেলে আমার প্রাণে বাঁচার জন্য দৌড়ে পালাতে চেষ্টা করে। কিন্তু নিষ্ঠুর পুলিশ তাকে বাঁচতে দেয়নি। শরীরে অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি করে হত্যা করে। আমি বেঁচে থাকতে এই পুলিশের বিচার দেখে যেতে চাই। কারণ আমার বড় এই ছেলেকে নিয়ে আমার অনেক স্বপ্ন ছিলো। কিন্তু পুলিশ আমার সব স্বপ্ন ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে। আমি এ হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই।

সূত্র : বাসস


আরো সংবাদ



premium cement
অন্তর্বর্তী সরকারকে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে : রিজভী নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার নিয়ে রাজনৈতিক ঐকমত্যের আহ্বান বদিউল আলমের হামলার শিকার মার্কিন রণতরী অনেকটা পালিয়ে বেড়াচ্ছে : হাউছি প্রধান ‘স্বৈরাচার সরকারের লোকজন শিক্ষিত হলেও নৈতিক জ্ঞান ছিল না’ পুলিশকে জনগণের বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলতে হবে : আইজিপি যুদ্ধাপরাধের জন্য ইসরাইলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান বোরেলের কুষ্টিয়ায় পদ্মা নদী থেকে অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার আহত ও শহীদ পরিবারের বিষয়ে সরকারের উদাসীন থাকার সুযোগ নেই : সেলিম উদ্দিন দুই বছরের মধ্যে প্রথম ফোনালাপ করলেন পুতিন ও জার্মান চ্যান্সেলর পাকিস্তান-বাংলাদেশ জাহাজ চলাচল উপমহাদেশের ইতিহাসে টার্নিং পয়েন্ট! ‘দেশকে কল্যাণ রাষ্ট্র করতে জনগণের নেতা হতে হবে’

সকল