০৫ নভেম্বর ২০২৪, ২০ কার্তিক ১৪৩১,
`

সাটুরিয়ায় জমিদার নেই, আছে দৃষ্টিনন্দিত বাড়ি

সাটুরিয়ার দৃষ্টিনন্দিত জমিদার বাড়ি - ছবি : নয়া দিগন্ত

মানিকগঞ্জ জেলা শহর থেকে মাত্র আট কিলোমিটার এবং ঢাকা জেলা সদর থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরে সাটুরিয়া উপজেলায় অবস্থিত বালিয়াটি জমিদার বাড়ি। বাড়িটির গোড়াপত্তন হয় আনুমানিক ১৭৯০ খ্রিস্টাব্দে।

ধনাঢ্য লবণ ব্যবসায়ী গোবিন্দ রায় সাহা ছিলেন বাড়িটির পূর্বপুরুষ। সাটুরিয়ায় বর্তমানে জমিদারি প্রথা না থাকলেও কালের স্বাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে এক অনন্য সৃষ্টি। জেলার মধ্যে যতগুলো ঐতিহাসিক স্থাপনা রয়েছে তার মধ্যে বালিয়াটি জমিদার বাড়িটি অন্যতম।

জানা গেছে, জমিদার বাড়িটি প্রায় ১৬ হাজার ৫৫৪ বর্গমিটার জমির ওপর নির্মিত। বাড়িটির সামনেই রয়েছে পাকা ঘাটলা বাঁধা বড় একটি পুকুর। শান বাঁধানো ছয়টি ঘাট রয়েছে পুকুরের চার পাশে, যা দেখতে সত্যিই মনোমুগ্ধকর। সাতটি প্রাসাদতুল্য ইমারতে রয়েছে মোট ২০০টি কক্ষ। প্রবেশ পথের চূড়ায় রয়েছে সিংহ মূর্তি। প্রবেশ করতেই ভিতরে নানা রকমের ফুলরাজী সমৃদ্ধ প্রাচীন সৌন্দয্য যেন দৃষ্টি নন্দিত।

বাড়িতে পাঁচটি বড় ভবন রয়েছে। যা পূর্ব বাড়ি, পশ্চিম বাড়ি, উত্তর বাড়ি, মধ্য বাড়ি এবং গোলা বাড়ি নামে পরিচিত। প্রথম সাড়িতে রয়েছে চারটি ভবন। এগুলো নির্মাণশৈলী প্রায় একই রকম। আট ইঞ্চি করে সিঁড়ির উত্থান আর বিশাল স্তম্ভ চুন, সুরকি ও ইট দিয়ে তৈরি প্রায় ৫০ফিট উঁচু কারুকার্যে ভরা এক একটা প্রাসাদ। মাঝখানের দু’টি প্রাসাদ দুইতলা এবং দুই পাশের দুইটা প্রসাদ তিনতলা করে।

ভবনটির ভেতরে জাদুঘরের অবস্থান। নিদর্শনের মধ্যে রয়েছে জমিদারদের ব্যবহৃত সিন্দুক, আয়না, ঝাড়বাতি, লণ্ঠন, বল্লম, শ্বেত পাথরের তৈরি টেবিল, পালঙ্ক, আলনা, কাঠ ও বেতের চেয়ারসহ আরো অনেক মূল্যবান নিদর্শন। দ্বিতীয় তলায় রয়েছে রংমহল।
মজলিস কক্ষের দেওয়ালে হাতে আঁকা ছবি। এর অন্দর মহলে রয়েছে তিনটি অট্টালিকা। এখানে ছিল অথিতিদের থাকার জায়গা, রন্ধনশালা, পরিচারকদের থাকার জায়গা।

আরো জানা গেছে, জমিদাররা ১৯ শতকের প্রথমার্ধ থেকে শুরু করে ২০ শতকের প্রথমার্ধ পর্যন্ত প্রায় এক শ’ বছরের প্রাচীনতম পূরাকীর্তির নিদর্শন রেখে গেছে যা জেলার পূরাকীর্তিকে বিশেষভাবে সমৃদ্ধ করেছে। বালিয়াটি প্রাসাদটি বালিয়াটি জমিদার বাড়ি নামেই বেশি পরিচিত।

জমিদার গোবিন্দ রায় সাহার পরবর্তী বংশধরা হলেন, দাধী রাম, পণ্ডিত রাম, আনন্দ রাম ও গোলাপ রাম।

এই পরিবারের স্মরণীয় অন্য ব্যক্তিদের মধ্যে ছিলেন নিত্যানন্দ রায় চৌধুরী, বিন্দাবন চন্দ্র, জগন্নাথ রায়, কানায় লাল, কিশোরীলাল রায়, ঈশ্বর চন্দ্র রায় চৌধুরী প্রমূখ।

ঢাকার জগন্নাথ মহাবিদ্যালয় (বর্তমানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়) প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তাদেরই বংশধর বাবু কিশোরীলাল রায়।

উল্লেখ্য, ১৯২৩ সালের দিকে বালিয়াটিতে জমিদার কিশোরীলাল রায় চৌধুরী নিজ অর্থে একটি অ্যালোপ্যাথিক দাতব্য চিকিৎসালয় স্থাপন করেন। যা বর্তমানে সরকারিভাবে পরিচালিত হচ্ছে।

এছাড়াও জমিদার হীরালাল রায় চৌধুরী সাটুরিয়া থেকে বালিয়াটির প্রবেশ পথের পাশে উত্তর কাওন্নরা গ্রামে দীঘির মাঝখানে একটি প্রমোদ বাগানবাড়ি নির্মাণ করেন। সেখানে সুন্দরী নর্তকী বা প্রমোদ বালাদের নাচগান ও মদ্যপান চলত। বর্তমানে প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর প্রাসাদটির রক্ষণাবেক্ষণ করছে।

বালিয়াটি জমিদার বাড়িতে দেশী দর্শনার্থীরা ২০ টাকা দিয়ে টিকিট কিনে ঢুকতে পারবে। এছাড়া সার্কভুক্ত দেশের দর্শনার্থীরা ১০০ টাকা এবং বিদেশী দর্শনার্থীরা ২০০ টাকা দিয়ে টিকিট কিনে ঢুকতে পারবে। বালিয়াটি প্রাসাদটি রোববার পূর্ণদিবস ও সোমবার অর্ধদিবস বন্ধ থাকে।


আরো সংবাদ



premium cement