২৫ অক্টোবর ২০২৪, ৯ কার্তিক ১৪৩১, ২১ রবিউস সানি ১৪৪৬
`

ঘাতকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান শহীদ শফিকুলের মা

- ছবি : বাসস

ঘাতকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির পাশাপাশি ভবিষ্যতের নিশ্চয়তা চেয়েছেন সাভারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনে গুলিতে শহীদ দিনমজুর শফিকুলের বৃদ্ধা মা সাহেরা বেগম (৫৯)।

ছেলে হত্যায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘উপার্জনক্ষম ছেলেকে হারিয়ে জীবনের শেষ বয়সে এসে ভবিষ্যত নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছি।’

শফিকুল ইসলাম (৩২) রংপুরের পীরগাছা থানার বড় দরগাঁর ফকিরা গ্রামের আবু বকরের ছেলে। প্রায় ২৫ বছর ধরে সাভারেই বসবাস করছিলেন তিনি ও তার পরিবার।

গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনে স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের পতন হলে বিজয় মিছিল দেখতে শফিকুল বাইরে বেরিয়ে যান। এ সময় মুক্তির মোড় সংলগ্ন একটি বহুতল ভবন থেকে এলোপাতাড়ি গুলি বর্ষণে সাভার পৌরসভার মুক্তির মোড় সংলগ্ন কেন্দ্রীয় ঈদগাঁ মাঠে গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই তিনি শহীদ হন।

শহীদ শফিকুল ইসলামের বড় বোন আয়েশা আক্তার বলেন, ‘৫ আগস্ট দুপুরে ছড়িয়ে পড়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়েছে। তখন আমার ছোট ভাই শফিকুল ইসলাম আনন্দে আত্মহারা হয়ে বাড়ির বাইরে বেরিয়ে যায়। সন্ধ্যা নেমে গেলেও আমার ভাইয়ের কোনো খোঁজ পাচ্ছিলাম না। এমন সময় আমাদের প্রতিবেশি আলমগীর মিয়া তার ছেলেকে খুঁজতে গিয়ে আমার ভাইকে মুক্তির মোড় সংলগ্ন ঈদগাঁ মাঠে পড়ে থাকতে দেখে আমাদের খবর দেন। আমার ভাই ওখানে গুলিবিদ্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে। তখন আমরা ঘটনাস্থল থেকে স্থানীয়দের সহায়তায় আমার ভাইকে উদ্ধার করে সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।’

তিনি বলেন, ‘ভাইকে তো আর ফিরে পাবো না, তবে আমরা চাই ভাই হত্যার বিচার। এছাড়াও আমাদের বৃদ্ধা মায়ের ভবিষ্যতের নিশ্চয়তা প্রদানে সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষন করছি।’

শহীদ শফিকুলের বড় ভাই রফিকুল ইসলাম জানান, ‘আমার ছোট ভাই শফিকুলই আমার মায়ের দেখাশোনা করতো। গত ৫ আগস্ট দুপুর ১টার দিকে গুলিবিদ্ধ হলেও এক প্রতিবেশির মাধ্যমে আমরা খবর পাই সন্ধ্যা ৬টার দিকে। ওকে বহুতল ভবন থেকে গুলি করে। একটি গুলি ওর মাথার পিছন দিক দিয়ে ঢুকে গলার পাশ দিয়ে বেরিয়ে যায়। কিন্তু ওখানকার আশপাশের অবস্থা ভালো না থাকায় আমরা ওখানে যেতে পারছিলাম না। পুলিশসহ অন্যরা গোলাগুলি করছিল। পরে পরিস্থতি একটু স্বাভাবিক হলে আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে শফিকুলকে ধরাধরি করে রাত ১০টার দিকে হাসপাতালে নিয়ে যাই।’

তিনি আরো বলেন, ‘হাসপাতালে নেয়ার পর ডাক্তাররা বলেন শফিকুল মারা গেছে। পর দিন ৬ আগস্ট সাভার পৌরসভার তালবাগ কবরস্তানে আমার ভাই শফিকুলের লাশ দাফন করি।’

শহীদ শফিকুল ইসলামের ছোট ভাই রবিউল ইসলাম জানান, ‘আমরা দুই ভাই আমি আর শফিকুল এক ঘরেই ঘুমাতাম। আমাদের মধ্যে অনেক মিল ছিল। অনেক সুখ দুঃখের গল্প করতাম। কী থেকে যে কী হয়ে গেলো, কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না। আমার ভাই আর নেই, কোনোভাবেই তা বিশ্বাস করতে পারছি না।’

শহীদ শফিকুল ইসলামের বৃদ্ধা মা সাহেরা বেগম কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমার বুকের মানিক শফিকুল আর নেই। ঘাতকরা ওকে মেরে ফেলেছে। আমাকে করেছে সন্তান হারা। আমি এর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। আমি চাই ওকে যারা মেরেছে তাদের ফাঁসি হোক।’

সাহেরা বেগম বলেন, ‘জীবনের শেষ প্রান্তে এসে ছেলে হারানোর শোক আমাকে তিলে তিলে শেষ করে দিচ্ছে। ছেলেটি ছিল আমার খুবই সাংসারিক। যা আয় করতো তা আমার হাতেই তুলে দিতো। এলাকার সবাই ওকে খুব ভালো জানতো। কারো সাথে কখনো খারাপ আচরণ করেনি।’

ছেলের জন্য সকলের কাছে দোয়া চেয়ে এসময় তিনি বলেন, ‘এখন আমি আমার ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তিত। কিভাবে চলবে আমার বাকি জীবন। এজন্য সংশ্লিষ্টদের সহায়তা চান তিনি।

উল্লেখ্য, শফিকুল ইসলামের মৃত্যুর পর তার বোন আয়েশা আক্তার সাভার মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামের পক্ষ থেকে ২ লাখ টাকা আর্থিক অনুদান পেয়েছে পরিবারটি। এছাড়া আর কোনো সহায়তা পাননি তারা।


আরো সংবাদ



premium cement
তুরস্কের অভিযানে ২৭ সিরীয় নাগরিক নিহত ছিনতাইয়ের অভিযোগে আটক পুলিশ কনস্টেবলকে গণপিটুনির পর থানায় হস্তান্তর চুয়াডাঙ্গার মহিলা লীগের নেত্রী অস্ত্রসহ আটক রাজনীতির বাইরে থেকে আসা সংস্কারের বাস্তবতার সাথে অনেক অমিল থাকে : গয়েশ্বর মাগুরায় আন্তর্জাতিক দাবা প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত ‘মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস কোনো দলের একক নয়’ ইন্দোনেশিয়া উপকূল থেকে দেড় শতাধিক রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু উদ্ধার : জাতিসঙ্ঘ লেবাননে ইসরাইলি বিমান হামলায় ৩ গণমাধ্যমকর্মী নিহত ‘বিপ্লব সংবিধান মেনে হয় না’ ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরে সেনাবাহিনীর গাড়িতে হামলা, নিহত ৪ অস্ট্রেলিয়া থেকে দেশের পথে মির্জা ফখরুল

সকল