১৮ অক্টোবর ২০২৪, ২ কার্তিক ১৪৩০, ১৪ রবিউস সানি ১৪৪৬
`

সাভারে লাশের ভ্যান থেকে ফেরা হারুন ভালো নেই

গুলিতে গুরুতর আহত ব্যবসায়ী হারুন মিয়া - ছবি : নয়া দিগন্ত

সাভারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গুলিতে গুরুতর আহত ব্যবসায়ী হারুন মিয়া (৪৮) হাসপাতালে চিকিৎসা নিলেও শরীরের ক্ষত এখনো শুকায়নি এবং প্রচণ্ড যন্ত্রণা নিয়ে বেঁচে আছেন।

স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে দেড় মাস চিকিৎসা শেষে বাসায় শুইয়ে দিন কাটাচ্ছেন। ব্যবসা বন্ধ থাকায় পরিবার নিয়ে কষ্টে আছেন তিনি। ওষধ কেনা এবং আনুসাঙ্গিক ব্যয় বহন করা তার জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

পুরোপুরি সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে কতো সময় লাগবে তা নিয়ে ভাবনায় পড়েছে তার পরিবার। গুলি করার পর মৃত ভেবে পুলিশ তাকে ভ্যানে তুলে দিয়েছিল অন্য লাশের সাথে। ভাগ্যক্রমে বেঁচে ফেরা হারুনের চোখমুখে এখনো আতঙ্কের ছাপ।

পরিবার নিয়ে আগামীর দিনগুলো কিভাবে কাটবে সেই দুশ্চিন্তা ভর করেছে মাথায়। শরীরের এখনো জ্বালা করে। ক্ষতস্থান পুরোপুরি শুকায়নি। গায়ে কাপড় রাখলে শরীর জ্বালা করে। আয় রোজগার বন্ধ রয়েছে। স্ত্রী, একমাত্র ছেলে হিমেল খান হিসাব বিজ্ঞান বিষয়ে অনার্স শেষ করলেও রয়েছেন বেকার। দুই মেয়ের মধ্যে বড় মেয়ে মোহয়া খান মুক্তি এইচএসসি পাশ করলেও এ বছর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া অনেকটা অনিশ্চিত। আর ছোট মেয়ে ফাতেমা তুজ-জোহরা এইচএসসিতে অধ্যায়নরত। এমন সুন্দর ও পরিপাটি সংসারটির একমাত্র উপার্জন করা ব্যক্তিটির উপার্জন করতে না পারায় তাদের ভভিষ্যৎ এখন অন্ধকার।

হারুন মিয়া সাভার উপজেলা কমপ্লেক্সের এলাকায় ৩০ বছর ভাড়া বাসায় থাকেন। তার গ্রামের বাড়ি মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর উপঝেলার ঝিটকা। বিএনপির একজন সক্রিয় সমর্থক এবং শেখ হাসিনা সরকারবিরোধী আন্দোলনে চেনা মুখ হলেও সাংগঠনিকভাবে খোঁজ নিলেও আর্থিকভাবে দলীয় এবং সরকারি কোনো সহায়তা তিনি এখনো পাননি। উন্নত চিকিৎসার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের সহায়তা কামনা করেছেন হারুন ও তার পরিবার।

জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর বিকেলে সাভার থানা বাসস্ট্যান্ড থেকে মডেল থানা পর্যন্ত সেদিন ছিল রণক্ষেত্র। ওই দিন বিকেলে পুলিশের গুলিতে নিহত ও আহত হন অনেকে। তাদের মধ্যে একজন গার্মেন্টসের স্টকলট ব্যবসায়ী হারুন।

শরীরে তিনটি বুলেট বিদ্ধ হলে তার অপারেশন করতে হয়। এখন তিনি অসহায় জীবনযাপন করছেন, হাঁটাচলাও তেমন করতে পারছেন না। বাসার একটি কক্ষে বিছানায় শুয়ে মোবাইল হাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চোখ রেখে সময় পার করছেন তিনি। এ প্রতিবেদকের সাথে মোবাইলে শুক্রবার (১৮ অক্টোবর) সন্ধ্যায় কথা হলে হারুন কষ্টের কথা জানান।

তিনি বলেন, ৫ আগস্ট বিকেলে থানার গেটের কাছে ডাকঘরের সামনে দাঁড়িয়ে পুলিশের উদ্দেশে চিৎকার করে প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন শেখ হাসিনা সরকার পালিয়ে গেছে। আপনারা কার ওপর গুলি করছেন? এরা তো সবাই আপনাদের ভাই। ঠিক সেইমুহূর্তে হেলমেট পরহিত বিপুলসংখ্যক পুলিশ সদস্য তাকে ঘিরে ধরে গুলি করে। প্রথম গুলিটি লাগে তার বুকের বাম পাশে এরপর আরো দুটি গুলি তার ডান পায়ের উরু এবং হাঁটুতে বিদ্ধ হয়।

গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হারুন মাটিতে লুটিয়ে পড়লে থানার এক পুলিশ কর্মকর্তা সেখানে উপস্থিত এক ভ্যানচালককে বলেন, সে মারা গেছে, তাকে ভ্যানে তুলে দাও। পরে পুলিশ ও ভ্যানচালক তাকে ধরে আরো কয়েকটি লাশের সাথে ভ্যানের উপর তুলেন। গুলিবিদ্ধ হারুন তখনো অবচেতন মনে পুলিশের কথাগুলো শুনছিলেন। ভ্যানে থাকা কয়েকটি লাশের সাথে ভ্যানচালক হারুনকে নিয়ে যান থানার অদূরে সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। ভ্যানে থাকা লাশ দেখতে এগিয়ে আসেন স্বেচ্ছাসেবী কয়েক যুবক। তারা গুলিবিদ্ধ হারুনকে নড়াচড়া করতে দেখে তার কাছে মোবাইল নম্বর জানতে চাইলে তিনি (হারুন) তার ছেলের মোবাইল নম্বর দেন। মোবাইল কলের মাধ্যমে তার পরিবারের সাথে যোগাযোগ করেন স্বেচ্ছাসেবী যুবকরা। পরে সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে থেকে পরিবারের সহায়তায় উন্নত চিকিৎসার জন্য স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে তাকে ভর্তি করা হয়।

আহত হারুন জানিয়েছেন, তিনি বিএনপির একজন সমর্থক। কিন্তু সংগঠনে তার কোনো পদপদবী নেই। সবার সাথে তার উঠাবসা আছে। তিনি কোটা সংস্কার আন্দোলনের শুরু থেকে সক্রিয়ভাবে রাস্তায় থেকে আন্দোলনকারীদের উৎসাহ যোগিয়েছেন।

তিনি নয়া দিগন্তকে আরো জানান, আমার সব শেষ। মানুষের ভালবাসায় আমি এখনো বেঁচে আছি।


আরো সংবাদ



premium cement