১৫ অক্টোবর ২০২৪, ৩০ আশ্বিন ১৪৩১, ১১ রবিউস সানি ১৪৪৬
`

সিআরপিতে ছাত্র আন্দোলনে আহতদের সেবা নিয়ে অসন্তুষ্ট সমন্বয়ক সারজিস

সিআরপিতে ছাত্র আন্দোলনে আহতদের সেবা নিয়ে অসন্তুষ্ট সমন্বয়ক সারজিস - ছবি : নয়া দিগন্ত

ঢাকার সাভারে অবস্থিত পক্ষাঘাতগ্রস্তদের পুনর্বাসন কেন্দ্র- সেন্টার ফর দ্য রিহ্যাবিলিটেশন অফ দ্য প্যারালাইজ্‌ড (সিআরপি) পরিদর্শন করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম।

মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) সকালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসার খোঁজ-খবর নিতে সেখানে আকস্মিক পরিদর্শনে আসেন।

পরিদর্শনে এসে আহতদের চিকিৎসার অবস্থা দেখে এবং রোগীদের সাথে কথা বলে তিনি সাংবাদিকদের কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

সারজিস আলম বলেন, ‘সিআরপির ব্যবস্থায় অনেক সমস্যা রয়েছে। আমাদের কাছে একাধিক তথ্য ও ছবি এসেছে, এখানের রোগীরাও আমাদের কাছে পাঠিয়েছেন। সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো এখানে রোগীদের বেডপ্যাড দেয়ার কথা যেখানে সেখানে পেপার দেয়া হচ্ছে। যেখানে গুলি লেগেছে সেখানের কাটা জায়গায় পেপারে ইনফেকশন করবে। এই পেপার তো ময়লা জিনিস, দোকানেও কিনতে পাওয়া যায়।’

সারজিস আলম আরো বলেন, ‘সিআরপির আরেকটি সমস্যা হলো এখানের পরিবেশ অনেক নোংরা। এখানের নতুন বিল্ডিং যা আছে সেগুলোর পরিবেশ সুন্দর। কিন্তু এখানের ম্যানেজারের দায়িত্বে থাকা একজন নিজেই বললেন, আজ থেকে কয়েকবছর আগে যে কক্ষগুলো পরিত্যক্ত হয়েছে সে কক্ষগুলোতে রোগী রাখা হয়েছে। এখানে রোগীর আধিক্য থাকায় তাদেরকে পরিত্যক্ত গোডাউনের মধ্যে রাখা হবে সেটা তো যৌক্তিক হতে পারে না।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের হেলথ টিম আসার খবর শুনে হাসপাতালের বিভিন্ন কক্ষ তড়িঘড়ি করে পরিষ্কার করা হচ্ছে, স্যাভলন দিয়ে জীবাণু মুক্তের কাজ করা হয়েছে সেই খবরও আমরা পেয়েছি। এগুলোতো দু’দিনের জন্য আমাদের দেখিয়ে লাভ নেই। এটা হতে হবে ৩৬৫ দিনের জন্য। আমরা তো প্রতিদিন এখানে আসব না। তাহলে এই রোগীরা এখানে এক প্রকার জিম্মি হয়ে আছে।’

সমন্বয়ক সারজিস আলম জানান, ‘হাসপাতালের মান শুধু এই সিআরপিতেই খারাপ এমনটা না, সারাদেশে একই অবস্থা। এখন হাসপাতালগুলোতে সেবার মান যারা দেখেন তাদের কি পরিবার নাই? নিজেদের পরিবারের সদস্যরা যদি হাসপাতালে ভর্তি হন তখন কি তারা এ রকম অবহেলা করতে পারতেন? তিনি সকাল ৮টা ২০ মিনিটের দিকে নোটিশে এসে দেড় ঘণ্টা অতিবাহিত করে পৌনে ১০টার দিকে সাভার ত্যাগ করেন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত কিশোর তাহসিন হোসেন নাহিয়ানের (১৫) সাথে কথা বললে জানান, ‘তিনি সাভারের সিআরপির ১ নম্বর ওয়ার্ডের ১ নম্বর বেডে চিকিৎসা নিচ্ছেন।’

তিনি বলেন, ‘৪ আগস্ট সাইন্সল্যাব এলাকায় ছাত্রলীগের গুলিতে গুরুতর আহত হন নাহিয়ান। পীঠে গুলিবিদ্ধ হলে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। প্রথমে তাকে ধানমন্ডির পপুলার হাসপাতালে, পরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অপারেশন এবং ঢাকার সিএমএইচ থেকে ২১ সেপ্টম্বর সাভারের সিআরপিতে ভর্তি করা হয়। নাহিয়ান জানান, এখানে চিকিৎসকরা নিয়মিত আসেন না। ওয়ার্ড বয়দের ব্যবহার অনেক খারাপ।‘

নবম শ্রেণির ছাত্র মাসুম আহমেদের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, ‘তিনিও একই ওয়ার্ডে ভর্তি হন ২৮ সেপ্টেম্বর। বনশ্রীতে পেটের ডান পাশের নিচের অংশে গুলিবিদ্ধ হন তিনি। প্রথমে মুগদা হাসপাতাল পরে ঢাকার সিএমএইচ থেকে সাভারের সিআরপিতে ভর্তি হন।’

মাসুম আহমেদের বোন মীম জানান, ‘আমার ভাই ১৭ দিন ধরে সিআরপিতে ভর্তি। এখনো পর্যন্ত কোনো ডাক্তার আসেনি আমার ভাইকে দেখার জন্য। এখানকার নার্স ও ওয়ার্ড বয়দের ব্যবহার অনেক খারাপ।’

মাসুম আহমেদের মা জানান, ‘আমার ছেলে গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হলেও এখনো পর্যন্ত আমি কোনো সরকারি টাকা পাইনি। মাসুমের বাবার ইচ্ছা ছিল ছেলেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ পাঠাবে।

উল্লেখ্য, গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই সময় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের হামলা ও পুলিশের গুলিতে সহস্রাধিক মানুষ আহত হয়। এদের মধ্যে ৫৭ জন সাভারের সিআরপিতে চিকিৎসা নিচ্ছেন।


আরো সংবাদ



premium cement