১৫ অক্টোবর ২০২৪, ৩০ আশ্বিন ১৪৩১, ১১ রবিউস সানি ১৪৪৬
`

আওয়ামী নেতাদের বাধা উপেক্ষা করে পূজা উদযাপন করায় বাড়িঘরে হামলা

আওয়ামী নেতাদের বাধা উপেক্ষা করে পূজা উদযাপন করায় বাড়িঘরে হামলা - নয়া দিগন্ত

ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ নেতাদের বাধা উপেক্ষা করে দুর্গাপূজার আয়োজন করায় মন্দির কমিটি সাধারণ সম্পাদকসহ কয়েকজন সদস্যকে মারধর ও বাড়ি-ঘরে হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

মঙ্গলবার (১৫ অক্টোরব) সকালে সাংবাদিকদের এ কথা জানান মন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ সরকার। এর আগে রোববার (১৩ অক্টোবর) রাতে বোয়ালমারী পৌরসভার আধারকোঠা এলাকায় সংঘটিত এ ঘটনায় স্থানীয় থানায় পৃথক দু’টি অভিযোগ দায়ের করে ভুক্তভোগীরা।

প্রত্যক্ষদর্শী ও এজাহার সূত্রে জানা যায়, বরাবরের মতো এবারো আধারকোঠা শ্রী শ্রী রক্ষা চণ্ডী মন্দিরে দুর্গাপূজা আয়োজন করে মন্দির ব্যবস্থাপনা কমিটি। কিন্তু শুরুতেই এবার পূজা আয়োজন না করার জন্য মন্দির কমিটির ওপর চাপ সৃষ্টি করতে থাকেন ৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শচীন রাজবংশী, ওয়ার্ড যুবলীগ নেতা নিঠুর রাজবংশীসহ আওয়ামীপন্থী একাধিক সদস্য। তারা মন্দির কমিটির নেতাদের বোঝানোর চেষ্টা করেন, ‘এবার দেশের পরিস্থিতি ভালো না, এদেশে আমরা বসবাস করতে পারি কিনা সন্দেহ। এমন পরিস্থিতিতে পূজার আয়োজন না করলে হিন্দু সম্প্রদায় রাজনৈতিকভাবে লাভবান হবে। তাই এবার মন্দিরে পূজার আয়োজন করা যাবে না।’ চক্রান্তের এমন খবর পৌঁছে যায় স্থানীয় বিএনপি নেতাদের কাছে। পরে পৌর বিএনপি নেতা মো: ইমরান হোসাইনের হস্তক্ষেপে ষড়যন্ত্রকারীদের বাধা উপেক্ষা করে মন্দিরে দুর্গোৎসবের আয়োজন করেন সভাপতি নারায়ণ চন্দ্র সরকার ও সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ সরকারসহ কমিটির সংখ্যা গরিষ্ঠ একটি অংশ। এতে ব্যাপক ক্ষুদ্ধ ও অসন্তুষ্ট হয় বাধাদানকারীরা। এর জের ধরে তারা কেবল পূজার চাঁদা দেয়া থেকেই বিরত থাকে না, একইসাথে বিসর্জনের মদ খেয়ে পরিকল্পিতভাবে হট্টগোলের চেষ্টা করেন। তারা বিকট শব্দে আতশবাজি ফুটিয়ে নারী দর্শনার্থীদের সাথে অশোভন আচরণ করতে থাকলে পূজা কমিটির কোষাধ্যক্ষ সুভাষ রাজবংশী, কর্তব্যরত আনসার সদস্যরা তাতে বাধা দেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে অভিযুক্ত শচীন রাজবংশী, নিঠুর রাজবংশী, রিমন রাজবংশী, পলাশ রাজবংশী, বিনয় রাজবংশীর নেতৃত্বে আরো ১০-১২ জন সুভাষ রাজবংশীকে বেধড়ক মারধর করেন, লাঞ্ছিত করেন আনসার সদস্যদের।

এজাহার সূত্রে আরো জানা গেছে, বিবাদীরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করে চলে গেলেও রাত আনুমানিক সাড়ে ১১টার তারা সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ সরকারের বাসভবনে হামলা চালায়। দুষ্কৃতকারীরা ভারী অস্ত্র দিয়ে ঘরের দরজা-জানালা এলোপাতাড়ি কুপিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত করে। বিশ্বজিৎ বাড়িতে না থাকায় তার স্ত্রী শিল্পী সরকার, মেয়ে প্রার্থনা সরকারকে বিবাদীরা মারধর করে।

এ ঘটনায় পরদিন সোমবার (১৪ অক্টোবর) বোয়ালমারী থানায় পৃথক দু’টি অভিযোগ দায়ের করেন পূজা কমিটির সভাপতি নারায়ণ চন্দ্র সরকার ও সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ সরকার। সভাপতির এজাহারে মোট আসাসি সাতজন। সেখানে প্রধান করা হয়েছে শচীন রাজবংশীকে।

অন্যদিকে, সাধারণ সম্পাদকের এজাহারে নয় আসামির নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এতে নিঠুর রাজবংশীকে প্রধান করে অজ্ঞাতনামা আরো ১০ থেকে ১২ জনকে আসামি করা হয়েছে।

নারায়ণ চন্দ্র সরকার ও বিশ্বজিৎ সরকার বলেন, ‘অসৎ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রনোদীত শচীনরা আমাদেরকে পূজা আয়োজনে বিরত থাকতে বলে। আমরা তাদের কথায় সায় দেইনি। এই অপরাধে তারা পূজা বিসর্জন ঘাটে হট্টগোল বাধায়। মদ খেয়ে, বিকট শব্দের আতশবাজি ফুটিয়ে ত্রাস সৃষ্টি করে। কোষাধ্যক্ষকে মারধর করে তার কাছ থেকে ৬৫ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়েছে। সাধারণ সম্পাদকের বাড়ি হামলা করেছে। আমরা এর বিচার চাই।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে অভিযুক্ত নিঠুর রাজবংশী বলেন, ‘আর্থিক সঙ্কট, মন্দিরের অভ্যন্তরীণ অনেক সমস্যার কারণে কমিটির অনেকেই পূজায় আগ্রহী ছিল না। প্রতিমা বিসর্জনকালে আনন্দ-ফুর্তি করতে গিয়ে কিছু পোলাপান একটু বেশি হৈ-চৈ করছে বলে শুনেছি। এর বাইরে আমার কিছু জানা নেই।’

বিএনপি নেতা মো: ইমরান হোসেন বলেন, ‘পূজা আয়োজনে আপত্তির কথা জেনে দু’পক্ষকে নিয়ে বসি। সমঝোতায় মন্দির কমিটির আওয়ামীপন্থী সদস্যরা পূজা আয়োজনে সম্মত হলেও পরে চাঁদা দেয়া থেকে বিরত থাকেন। এসব নিয়ে ঝামেলার জেরে বিশৃঙ্খলা, মারধর, হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে জানতে পেরেছি।’

বোয়ালমারী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো: গোলাম রসূল বলেন, ‘দু’টি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। অনুসন্ধান কার্যক্রম চলছে। এ ঘটনায় প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।’


আরো সংবাদ



premium cement