১২ অক্টোবর ২০২৪, ২৭ আশ্বিন ১৪৩১, ৮ রবিউস সানি ১৪৪৬
`

পদ্মায় ইলিশ জেলেদের কাছে এখন সোনার হরিণ

- ছবি : নয়া দিগন্ত

রাজবাড়ীর পদ্মার উড়াকান্দা ঘাট এলাকা থেকে কয়েকজন জেলে মাছ ধরতে নদীতে যাওয়ার অপেক্ষা করছেন। বাকি জেলেরা নদীতে মাছ শিকার করে পাড়ে এসেছেন। সব মিলে অর্ধশত জেলে সেখানে।

জানতে চাওয়া হয় জালে কেমন ইলিশ ধরা পড়ছে। উত্তরে কয়েকজন জেলে জানায়, পদ্মায় ইলিশের আকাল চলছে। আগে যেখানে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ মাছ জালে আটকা পড়ত, সেখানে জালে এখন তেমন ইলিশ ধরা পড়ে না। ইলিশ এখন সোনার হরিণ জেলেদের কাছে। আর আজ শনিবার থেকে ২২ দিন নদীতে জাল ফেলাই নিষিদ্ধ। তবে আমরা খাবো কি? এ সময় মৌসুমী জেলেরা মৎস্য বিভাগকে ম্যানেজ করে ইলিশ ধরে। এ সময় ভাটিতে কোনো বাধ না থাকায় সাগর থেকে ইলিশ ডিম ছাড়ার জন্য পদ্মায় আসে।

এছাড়া রাজবাড়ী সদরের গোদার বাজার, সোনাকান্দর, উড়াকান্দা এলাকার কয়েকজন জেলে ক্ষোভ প্রকাশ করে জানায়, আগামী ১৩ অক্টোবর থেকে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত ইলিশ ধরা নিষেধ থাকবে। আমরা ইলিশ সম্পদ রক্ষায় নদীতে নামবো না। কিন্তু বাহিরের জেলেরা এসে ঠিকই মাছ মেরে নিয়ে যাবে। মৎস্য বিভাগসহ প্রশাসনকে এ বিষয়ে নজর দিতে হবে। নদীতে অভিযান চলাকালে দেখা যায়, যেদিকে অভিযান চলে তার উল্টা দিকে জেলেরা মাছ ধরে। মৎস্য বিভাগের সাথে কিছু অসাধু ব্যক্তিদের আঁতাত থাকে। যারা অভিযানের তথ্য জেলেদের দিয়ে দেয়। এই বিষয়গুলো প্রশাসনকে খেয়াল রাখতে হবে।

জেলেরা বলেন, এক সময় প্রতি খেও বেড় জালে এক থেকে দেড় মণ করে ইলিশ পাওয়া যেত। জাল তুলতে কষ্ট হতো। অথচ এখন সারা দিনে খুবই কম ইলিশ পাওয়া যায়। ভাগ্যক্রমে সারা দিনে সর্বোচ্চ ১০ থেকে ১৫ কেজি ইলিশ পাওয়া যায়। তবে বেশিরভাগ জেলে তিন থেকে চার কেজি করে ইলিশ পেয়ে থাকেন। অনেক জেলে খালি হাতে বাড়িতে আসেন।

অন্যদিকে বাজারে ইলিশের চড়া দাম। নিম্নবিত্তরা তো আগে থেকেই ইলিশ খেতে পারেন না, আবার এখন মধ্যবিত্তরের ধরা ছোঁয়ার বাহিরে চলে গেছে। খেতে মন চাইলেও মধ্যবিত্তদের ইলিশ খেতে গেলে ভাবতে হচ্ছে ১০ বার।

তবে ক্রেতারা বলছেন, সুষ্ঠুভাবে বাজার তদারকি ও মনিটরিং করলে কিছুটা স্থিতিশীল থাকবে ইলিশের দাম। নদীতে ইলিশ মাছ চাষ করতে হয় না, কোনো খরচ ছাড়াই প্রাকৃতিকভাবে যে ইলিশ মাছ বেড়ে ওঠে। সেই মাছ ধরা-ছোঁয়ার বাহিরে হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা।

দৌলতদিয়া ইউনিয়নের প্রদীপ হালদার (৬২) নামে একজন জেলে। তিনি বলেন, ‘মাছ ধরা আমার বাপ-দাদার পেশা। বর্তমানে এ পেশা লাভজনক না হলেও জীবিকার তাগিদে ধরে রেখেছি। আমার মাছ ধরার বয়স ৩০ বছরের কম না। ১৯৯০ সালের পর থেকে এই পদ্মায় মাছ শিকার করি। বাপ-দাদার কাছে শুনেছি ১৯৮৮ সালের বন্যার পর পদ্মায় ইলিশের আকাল শুরু হয়েছে। এরপর থেকেই ইলিশের আর সোনালী দিন ফেরেনি। তারপরও এই পৈতৃক পেশা ধরে রেখেছি। কিন্তু আমি চাই না আমার সন্তান বা পরের প্রজন্ম এই পেশায় আসুক। অনেকেই এখন এই পেশা পরিবর্তন করেছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘মাছ যা পাই তা বিক্রি করে আমার পোষায় না। পদ্মায় মাছ শিকারে গেলে পাঁচ থেকে ছয়জনের কমে যাওয়া যায় না। সবার দিনের একটা হাজিরা আছে। নৌকার তেল খরচ, জালের খরচ, দাদনের টাকা ইত্যাদি মিলে অনেক খরচ। কিন্তু মাছ বিক্রি করে আমরা লাভ করতে পারছি না। আবার ২২ দিন ইলিশ মাছ ধরা বন্ধ থাকবে। এই ২২ দিন কিভাবে চলবো বুঝতে পারছি না।’


আরো সংবাদ



premium cement

সকল