০৮ অক্টোবর ২০২৪, ২৩ আশ্বিন ১৪৩১, ৪ রবিউস সানি ১৪৪৬
`

আগুন নিমিষেই শেষ করে দিলো ৩০ ব্যবসায়ীর স্বপ্ন

আগুন নিমিষেই শেষ করে দিলো ৩০ ব্যবসায়ীর স্বপ্ন - ছবি : নয়া দিগন্ত

রাত তখন পৌনে ১২ টা। কিছুক্ষণ আগে দোকান বন্ধ কর ঘরে এসে হাতমুখ ধুয়ে বসছেন খাবার খেতে। তারপরই আসে ফোন, অপর পাশ থেকে একজন বলে উঠে ‘দোকানে আগুন লাগসে, জলদি আহেন: সব পুইরা যাইতাছে’।

খাবার আর গলা দিয়ে নামেনি, কোনোরকম হাত ধুয়ে রওনা দেয় দোকানের উদ্দেশে। এসেই দেখেন কিছুক্ষণ আগে সাজিয়ে বন্ধ করে যাওয়া সেই দোকানটার ভেতরে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে।

এই আগুনে দোকানে থাকা মালামাল-টাকাপয়সার সাথে পুড়েছে বহু স্বপ্ন ও পরিকল্পনা। সারারাত মাথায় হাত দিয়ে বসে দেখতে হয়েছে অগ্নিকাণ্ডের ধ্বংসলীলা।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে আগুন লাগার ও ক্ষতির বিবরণ দিলেন নারায়ণগঞ্জ কালিরবাজারের হাসান স্টোরের মালিক আব্দুর রহমান। শুধু তিনি নন, তার মতো এমনই কপাল পুড়েছে আরো ৩০ জনের অধিক ব্যবসায়ীর।

অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে গেছে বাজারের হাঁস-মুরগির দোকান থেকে শুরু করে মসলা, মরিচ ও প্লাস্টিকের বাটি-বালতির দোকানগুলোও।

সোমবার (৭ অক্টোবর) বিকেলে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্থ কালিরবাজারে সরেজমিনে দেখা যায়, দোকানগুলোর সামনে পরে আছে বিভিন্ন পন্যের ছাঁই। পোড়া গন্ধ এখনো বাতাসের সাথে মিশে আছে। বাজারের পাশের এক বসতভবন আগুনের কারনে একঅংশ পুরে গেছে। আগুন নিভাতে রাতে ফায়ার সার্ভিসের দেয়া পানিতে ভেসে যাচ্ছে গম, ডাল ও চালের দানাসহ আরো কতকিছু।

সকাল থেকে এনসিসির পরিচ্ছন্ন কর্মীরা এসে ব্যবসায়ীদের সাথে হাতে হাত মিলিয়ে করছেন পরিষ্কারের কাজ। ভাঙা-পোড়ার স্তুপ থেকে আলাদা করা হচ্ছে ব্যবহারযোগ্য কিছু পণ্য। কাল রাত থেকে নিজ নিজ দোকানের পাশেই ছিলেন ব্যবসায়ীরা।

আগুনে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়া আরেক ব্যবসায়ী সবুজ মিয়া জানায়, ‘আগুনের পর সকাল থেইকা ভাই আর ভাই পোলা সাথে নিয়া মালামাল ব্যাগে রাখতেসি। কিছু সাবান, শ্যাম্পু, সসের বোতল কোনো রকম একটু ভালো আছে সেগুলো নিয়ে যাইতেসি ঘড়ে তো কাজে লাগব। প্রায় ১২-১৪ লাখ টাকার মাল ছিল আমার দোকানে, কিচ্ছু বাঁচাইতে পারি নাই। বেশি দিন হয় নাই, মাল উডাইসি। এই লোকসান কি দিয়া কাটবে এক আল্লাহ জানে।’

একই বাজারের অল্পের জন্য রক্ষা পাওয়া দোকানের মালিক সোহেল বলেন, ‘কাল রাইতে যখন আগুন লাগে তখন এই বাজারের ১ নম্বর গলির সামনের তিন-চারটা দোকান খোলা আছিল, বাকি সব বন্ধ কইরা চলে গেছে। কিন্তু হটাৎ একটু পর দেখি উপর থেকে একটা আগুনের গোল্লা দোকানের চালের ওপর পরল। তখন বুঝতে পারলাম একটা দোকান থেইকা এই আগুন ছড়াইসে। মুহূর্তের মধ্যেই আগুন আশপাশের দোকানে লাইগা গেল। আগুন বেশি ছড়াইছে টিনের চাল দিয়া। কয়েকদিন বৃষ্টির লইগা আমরা দোকানের পাশে রাস্তার ওপর কিছু তেরপাল বাইন্দা দিসিলাম। আগুন ছড়াইব এই ডড়ে লগে কিছু লোক নিয়া এই তেরপালগুলা ছিড়া ফেলছি। এরপর তো ফায়ার সার্ভিস আইছে, পানি দিসে কিন্তু সকালেও কিছু দোকানে আগুন জ্বলসে। এখানের একটা মাঝারি মরিচের দোকানেও ২০-২১ লাখ টাকার মাল আছিল। আর বড়বড় দোকানে তো কয় এক কোটি টাকার মাল আছিলো সব পুরছে।’

উল্লেখ্য, রোববার রাত সাড়ে ১১টায় কালির বাজার মসলা পট্টির একটি প্লাস্টিকের দোকান থেকে আগুনের সূত্রপাত ঘটে। মুহূর্তের মধ্যে আগুন ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে ছাই হয়ে যায় ৪০টি দোকান। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের পাঁচটি ইউনিট ঘটনাস্থলে এসে দেড় ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় ফায়ার সার্ভিসের একজন কর্মী আহত হয়।


আরো সংবাদ



premium cement