২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৪ আশ্বিন ১৪৩১, ২৫ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

সবই হারালেন ২ ভাই

অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার ও মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ - ছবি : সংগৃহীত

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল- বিএনপির একনিষ্ঠ লোক ছিলেন দুই ভাই। দলের জন্য খেটেছেন জেল। হয়েছেন জুলুম-নির্যাতন, মামলা-হামলার শিকার। বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নারায়ণঞ্জ জেলা পর্যায়ের শীর্ষ পদে ছিলেন। এমনকি একজন বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা পদেও দায়িত্ব পালন করেন। সময়ের পরিক্রমায় সবই হারালেন দু’ভাই। এখন আর দলের পদ-পদবি নেই, এমনকি সর্বশেষ নারায়ণগঞ্জ সিটির কাউন্সিলর পদও হারালেন একজন। তারা হলেন অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার ও তার ছোট ভাই মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ।

বিএনপি চেয়ারপারসনের সাবেক উপদেষ্টা তৈমূর আলম খন্দকার ২০২২ সালে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে বহিষ্কার হন। সে বছর ১৯ জানুয়ারি তাকে বহিষ্কার করা হয়। পরে আর বিএনপিতে জায়গা পাননি তিনি। সর্বশেষ ৭ জানুয়ারি জাতীয় নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের পৃষ্টপোষকতায় ‘তৃণমূল বিএনপি’ নামে গঠিত দলের মহাসচিব হন তৈমূর।

নতুন দল নিয়ে শেখ হাসিনার অধীনে ৭ জানুয়ারির দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থেকে অংশ নেন তৈমূর আলম খন্দকার। ওই নির্বাচনে ভরাডুবি হয় তার। মাত্র ৩ হাজার ১৯০ ভোট পান তিনি। এতে তার জামানতই বাজেয়াপ্ত হয়। যদিও নির্বাচনের শুরু থেকে নিজেকে শক্ত প্রার্থী হিসেবে দাবি করে আসছিলেন বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত এ নেতা।

এদিকে, শুরু থেকেই বড়ভাই তৈমূরের নতুন দলের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিরোধিতা করে আসছেন তার ছোটভাই মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ। বিএনপির জন্য খোরশেদের অবদান অনেক। দলের জন্য মামলা খেয়েছে প্রায় এক শ’। একাধিকবার জেল খেটেছেন। হামলা ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।

খোরশেদের এখন কোনো দলীয় পদ নেই বিএনপিতে। তিনি এর আগে যুবদলের সভাপতি ছিলেন। সর্বশেষ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন। হাসিনার সরকারের আমলে বিগত ২০২২ সালের নাসিক নির্বাচনের অংশ নিয়ে নারায়ণগঞ্জ ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে বিপুল ভোটে কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। নারায়ণগঞ্জের মানুষ খোরশেদের সামাজিক কর্মকাণ্ডের অবদান সম্পর্কে জানে। বিশেষ করে করোনার সময়ে লাশ দাফন এবং করোনা আক্রান্তদের সেবা দিয়ে তিনি দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশের মাটিতেও পরিচিত পেয়েছেন।

এদিকে, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলরদের (সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলরসহ) স্ব স্ব পদ থেকে অপসারণ করা হয়েছে। একই সাথে দেশের অন্যসব সিটি করপোরেশনগুলোর কাউন্সিলরদেরও অপসারণ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার স্থানীয় সরকার বিভাগের এক প্রজ্ঞাপনে এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছে। প্রজ্ঞাপনে স্বাক্ষর করেছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোহাম্মদ শামছুল ইসলাম।

এ প্রজ্ঞাপনের ফলে নারায়ণগঞ্জ সিটি করারেশনের কাউন্সিলর পদ থেকে অপসারিত হন মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ।

দলীয় ও কাউন্সিলর পদ হারানো নিয়ে মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ শুক্রবার রাতে নয়া দিগন্তকে বলেন, সবই আল্লাহর ইচ্ছা। পদ না থাকলেও দলের জন্য কাজ করব। কাউন্সিলর পদে না থাকলেও মানুষ আগের মতোই আমার কাছ থেকে সেবা পাবে। আমার সেবা অব্যাহত থাকবে, ইনশাআল্লাহ। হয়তো সরকারি সেবা আমার কার্যালয় থেকে হবে না, তবে কাগজপত্র ছাড়া বাকি সামাজিক সেবা অব্যাহত থাকবে। দয়া করে আপনাদের পাশে রাখবেন। আমাদের মনে রাখতে হবে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সর্বোত্তম পরিকল্পনাকারী।

তৈমূর আলম খন্দকারের কর্মকাণ্ডে বিব্রত কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, তৈমূর ভাইয়ের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড এটা একান্তই তার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। তার রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের সাথে আমরা একমত নই। দলের স্বার্থে দলকে প্রাধান্য দিয়েই আমাদের অবস্থান অটল।


আরো সংবাদ



premium cement