২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১, ১৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

টঙ্গীতে বকেয়া বেতনের জন্য শ্রমিকদের মহাসড়ক অবরোধ

টঙ্গীতে বকেয়া বেতনের জন্য শ্রমিকদের মহাসড়ক অবরোধ - ছবি : নয়া দিগন্ত

দুই মাসের বকেয়া বেতনের দাবিতে দুই বার মহাসড়ক অবরোধ করল টঙ্গী পশ্চিম থানার খাঁ পাড়া রোডের সিজন ড্রেসেস লিমিটেড কারখানার শ্রমিকেরা।

সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) সকাল পৌনে ১০টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত টানা প্রায় পৌনে ৮ ঘণ্টা ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কে এ অবরোধ করা হয়। এর আগে মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) প্রায় ৪ ঘণ্টা মহাসড়কের একইস্থানে অবরোধ করেছে একই কারখানার শ্রমিকরা।

অবরোধ করে রাখায় তীব্র তাবদাহে চরম ভোগান্তির শিকার হন হাজার হাজার মানুষ। এ অবরোধে আটকা পড়ে যাত্রীরা পরিবহন থেকে নেমে বহু কষ্টে রোদে হেঁটে গন্তব্যে রওনা হন।

সোমবার টানা প্রায় পৌনে ৮ ঘণ্টা অবরোধ চলাকালে মহাসড়কের উভয়মুখী যাত্রীরা চরম দুর্ভোগের শিকার হন। এ সময় উভয় পাশে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। অবরোধ এড়িয়ে নগরীর শাখা রোডগুলো দিয়ে বাইপাস করার কারণে মহাসড়কের আশপাশের প্রায় সব শাখা রোডে ট্রাফিক জ্যাম ছড়িয়ে পড়ে। এতে আবাসিক এলাকার লোকজনকেও ভোগান্তিতে পড়তে হয়। অবশেষে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে সেনা, পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট একযোগে লাঠিচার্জ ও ধাওয়া দিলে শ্রমিকরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়।
অবরোধে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী, পরিবহনযাত্রী ও পথচারীরাও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে সহায়তার জন্য এগিয়ে গিয়ে শ্রমিকদের ধাওয়া দেয়।

স্থানীয় আউচপাড়ার বাসিন্দা মুল্লুক হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘দুই মাসের বকেয়া বেতনের জন্য একটি জাতীয় সড়ক বন্ধ করে হাজার হাজার মানুষকে দুর্ভোগে ফেলতে হবে কেন? মহাসড়কে যারা চলাচল করেন তারা কি শ্রমিকদের বকেয়া বেতন শোধ করবেন? হাজার-বারো শ’ শ্রমিকের দুই মাসের বকেয়া বেতনের জন্য হাজার হাজার মানুষকে জিম্মি করে কোটি কোটি টাকার কর্মঘণ্টা নষ্ট করা হয়েছে এই ক্ষতিপূরণ কে দিবে? শ্রমিকরা রাস্তায় না এসে কারখানা ঘেরাও দিয়ে তাদের কর্মকর্তাদের জিম্মি করে বকেয়া বেতন আদায় করুক। আমাদের চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে কেন? এটা এক ধরণের দস্যুতা।’

তিনি বলেন, নব্বইয়ের দশকে আমরা শ্রমিক আন্দোলন দেখেছি। রাষ্ট্রায়ত্ব মিলগুলোতে টানা ছয় মাস বেতন বকেয়া পড়লেও শ্রমিকদের কখনোই এমন ধ্বংসাত্বক ও আগ্রাসী ছিল না।

এদিকে আন্দোলনরত শ্রমিকরা জানান, এর আগেও আন্দোলন করে তারা গত জুন মাসের বকেয়া বেতন আদায় করেছেন। গত জুলাই ও আগস্ট মাসের বকেয়া বেতন এবং ওভার টাইমের টাকার জন্য গত ১৭ সেপ্টেম্বর তারা মহাসড়ক অবরোধ করেন। তখন প্রশাসনের মধ্যস্থতায় ওই দিনই জুলাই মাসের অর্ধেক বেতন পরিশোধ করা হয়। ওই দিন কারখানা কর্তৃপক্ষ প্রশাসনের মধ্যস্থতায় কথা দিয়েছিলেন রোববার (২২ সেপ্টেম্বর) অবশিষ্ট বকেয়া পাওনা পরিশোধ করা হবে। কিন্তু কারখানা কর্তৃপক্ষ কথা দিয়ে কথা রাখেননি। রোববারও বাকি বকেয়া বেতনের টাকা পরিশোধ করা হয়নি।

এখন শ্রমিকদের দাবি দুই মাস ১৫ দিনের বকেয়া বেতন, ওভার টাইমের (অতিরিক্ত শ্রমের) মজুরি, তিন বছরের ছুটির টাকা ও প্রতি মাসের ৭ তারিখের মধ্যে বেতন পরিশোধ ইত্যাদি।

গাজীপুর শিল্প পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার (টঙ্গী জোন) মোশারফ হোসেন বলেন, কারখানার মালিক সময়মতো বেতন পরিশোধ না করায় গত কয়েক দিন ধরে কারখানাটিতে শ্রমিক আন্দোলন চলছে। সকাল থেকেই ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে তারা বিক্ষোভ করেন। এ কারণে যান চলাচল বন্ধ হয়ে মানুষ ব্যাপক ভোগান্তির শিকার হয়। শ্রমিকদেরকে বহু বুঝিয়েও সড়ক থেকে সরানো যায়নি। অবশেষে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে লাঠিচার্জ করে তাদের সড়ক থেকে সরিয়ে দিলে যান চলাচল শুরু হয়।

তিনি আরো বলেন, শিল্প পুলিশ ও সেনাবাহিনীর পৃথক দুটি দল শ্রমিকদের দাবি নিয়ে কারখানা কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। আশা করছি খুব দ্রুতই সমস্যার সমাধান হবে।


আরো সংবাদ



premium cement