২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১, ১৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

গাজীপুরে বিভিন্ন দাবিতে শ্রমিক বিক্ষোভ ও কর্মবিরতি

মহাসড়ক অবরোধ ও ভাঙচুর
গাজীপুরে বিভিন্ন দাবিতে শ্রমিক বিক্ষোভ ও কর্মবিরতি - ছবি : নয়া দিগন্ত

গাজীপুরে বেতন ও হাজিরা বোনাস বৃদ্ধি, মোবাইল নিয়ে কারখানায় প্রবেশসহ বিভিন্ন দাবিতে কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ করেছে পোশাক কারখানাসহ কয়েকটি কারখানার শ্রমিকরা।

রোববার (২২ সেপ্টেম্বর) বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বাঘের বাজার ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের মৌচাক এলাকায় অবরোধ ও গাড়ি ভাঙচুর করে। পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

পুলিশ, শ্রমিক ও স্থানীয় সূত্রে জানাগেছে, গাজীপুরের সদর উপজেলার বাঘের বাজার এলাকার পলমল গ্রুপের মন্ডল ইন্টিমিটস লিমিটেড কারখানার শ্রমিকরা গত কয়েকদিন ধরে হাজিরা বোনাস বাড়িয়ে নূন্যতম এক হাজার টাকা ও রাত্রিকালীন ভাতা ১০০ টাকা বৃদ্ধি, মোবাইল নিয়ে কারখানায় প্রবেশের অনুমতি, অর্ধ বেলা ছুটি অথবা দুইঘণ্টা গেইট পাশ নিলে হাজিরা বোনাস কেটে না নেয়া এবং অসুস্থ হলে কারখানার মেডিক্যাল সেন্টারে বিশ্রামে না রেখে ছুটি দেয়াসহ বিভিন্ন দাবি জানিয়ে আসছিল কর্তৃপক্ষের কাছে।
রোববার সকালে শ্রমিকরা কারখানায় এসে কাজে যোগ না দিয়ে ওই দাবিতে কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ শুরু করে। একপর্যায়ে তারা সকাল সাড়ে ৮টার দিকে কারখানার পার্শ্ববর্তী ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ওপর অবস্থান নিয়ে অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকে। এতে ওই মহাসড়কের উভয়দিকে যানবাহন আটকে পড়ে প্রায় আট-নয় কিলোমিটার দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। প্রচণ্ড গরমের মাঝে অসহনীয় ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রী ও সাধারণ মানুষসহ পরিবহন শ্রমিকরা।

খবর পেয়ে শিল্প পুলিশ, জয়দেবপুর থানা পুলিশ এবং সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে যান। তারা শ্রমিকদের বুঝিয়ে প্রায় ৪ ঘণ্টা পর সড়ক থেকে সরিয়ে দিতে সক্ষম হন। শ্রমিকরা মহাসড়ক থেকে সরে গেলে সড়কের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।

গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র গাজীপুর জেলা শাখার সভাপতি জিয়াউল কবীর খোকন বলেন, কারখানায় প্রবেশে যেসব শ্রমিকের কোনো লেট নেই এবং নিয়মিত কাজ করে, তাদেরকে প্রতিমাসে ৭৫০ টাকা অতিরিক্ত হাজিরা বোনাস দিচ্ছে বিভিন্ন পোশাক কারখানা। আমি মনে করি এটা শ্রমিকদের অধিকার এবং যৌক্তিক দাবি।

গাজীপুর শিল্প পুলিশের পরিদর্শক (বাঘের বাজার জোন) সুমন মিয়া জানান, সকাল সাড়ে ৮টা থেকে শ্রমিকেরা নয় দফা দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ শুরু করে। পরে কারখানা কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে একটি বাদে (মোবাইল নিয়ে কারখানায় প্রবেশের অনুমতি প্রদান) অন্য আটটি দাবি মেনে নেয়ার আশ্বাস দিয়ে মহাসড়কের ওপর থেকে শ্রমিকদের সরিয়ে দিলে প্রায় ৪ ঘণ্টা পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।

এদিকে গাজীপুর শিল্প পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার মোশাররফ হোসেন জানান, রোববার সকাল ৮টা থেকে গাজীপুর মহানগরীর খাইলকুর এলাকার এম এম ফ্যাশন অ্যান্ড কম্পোজিট লিমিটিডের তিন শতাধিক শ্রমিক কারখানায় এসে কাজে যোগ দেয়। আধা ঘণ্টা পর থেকে তারা আগস্ট মাসের বকেয়া বেতন পরিশোধের দাবিতে উৎপাদন কাজ বন্ধ করে কারখানার অভ্যন্তরে কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ পালন করে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মালিক পক্ষের সাথে শ্রমিকদের আলোচনার উদ্যোগ নিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়।

অপরদিকে একইদিন কালিয়াকৈরে বেতন ভাতা বৃদ্ধিসহ ১২ দফা দাবিতে কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ করে কোকোলা ফুড প্রোডাক্টস লিমিটেড কারখানার শ্রমিকেরা। এ সময় তারা কালিয়াকৈরের মৌচাক তেলিরচালা এলাকায় ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক প্রায় পৌণে এক ঘণ্টা অবরোধ করে ও গাড়ি ভাঙচুর করে। এ সময় প্রায় পৌণে এক ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ থাকায় ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে যাত্রী, চালক ও পথচারীদের।

পুলিশ, শ্রমিক ও স্থানীয়রা জানায় কোকোলা ফুড প্রোডাক্টস লিমিটেড কারখানায় প্রায় আট হাজার শ্রমিক কাজ করে। সারা দেশের সকল শিল্পকারখানার শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধি করা হলেও ওই কারখানার শ্রমিকদের এখনো বেতন বৃদ্ধি করা হয়নি। বেতন বৃদ্ধির বিষয়ে কারখানার কর্তৃপক্ষদের সাথে একাধিকবার শ্রমিকদের বৈঠক হলেও কারখানা কর্তৃপক্ষ ওই বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এর পরিপ্রেক্ষিতে রোববার সকালে শ্রমিকরা কাজে যোগ না দিয়ে কারখানার প্রধান ফটকের সামনে বিক্ষোভ শুরু করে। একপর্যায়ে তারা ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করে কয়েকটি যানবাহন ভাঙচুর করে। এ সময় মহাসড়কে প্রায় পৌণে এক ঘণ্টা যানচলাচল বন্ধ থাকে।

এ ব্যাপারে গাজীপুর-১ শিল্প পুলিশর ওসি (কালিয়াকৈর) নিতাই চন্দ্র জানান, খবর পেয়ে শিল্প পুলিশ, থানা পুলিশ ও সেনা সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌছে শ্রমিকদের বুঝিয়ে মহাসড়ক থেকে সরিয়ে নিলে যানচলাচল স্বাভাবিক হয়।

শ্রমিকদের ১২ দফা দাবিগুলো হলো সরাকারি গ্রেড অনুযায়ী সর্বনিম্ন বেতন ১২ হাজার ৫০০ টাকা করতে হবে, হাজিরা বোনাস ৮০০ টাকা করতে হবে, বাৎসরিক এবং সরকারি ছুটি প্রদান করতে হবে, জমাকৃত অর্জিত ছুটির টাকা বছরের প্রথম মাসে পরিশোধ করতে হবে, যথা সময়ে বাৎসরিক এনক্রিমেন্ট দিতে হবে, নারী শ্রমিকদের মাতৃত্বকালীন ছুটি বেতনসহ দিতে হবে, কাজ করা অবস্থায় কোনো শ্রমিক অসুস্থ বা কোনো ধরনের দুর্ঘটনার শিকার হলে সুস্থ হওয়া পর্যন্ত চিকিৎসার খরচ বহন করতে হবে, চাকরির বয়স ছয় মাস হলে ঈদ বোনাস দিতে হবে, কোনো কারণে চাকরিচ্যুতি এবং বহিষ্কার করা হলে তিন মাসের বেতন দিতে হবে, প্রতি ফ্লোরে একজন করে শ্রমিক নেতা দিতে হবে, রাট ৮টার পর কাজ করালে টিফিন বিল দিতে হবে, অন্দোলনরত শ্রমিকদের মামলা, হামলা হয়রানি বা চাকরিচ্যুতি করা যাবে না এবং কারখানার আয়োজনে প্রতি বছর পিকনিকের ব্যবস্থা করতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement