নেতানিয়াহুর বিদায় : ইসরাইলের নতুন প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন গান্টজ
- মুহাম্মদ খায়রুল বাশার
- ১৯ মার্চ ২০২০, ০০:০০
অবশেষে মনে হয় ইসরাইলে দীর্ঘ দিনের রাজনৈতিক সঙ্কটের অবসান ঘটতে যাচ্ছে। দেশটিতে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর প্রধান রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী বেনি গান্টজকে একটি নতুন কোয়ালিশন সরকার গঠন করার সুযোগ দেয়া হয়েছে। অনুষ্ঠিত সর্বশেষ সাধারণ নির্বাচনে নেতানিয়াহুর লিকুদ পার্ট গান্টজের ব্লু অ্যান্ড হোয়াইটের চেয়েও বেশি আসনে জয়লাভ করেছে। কিন্তু গান্টজকে আইনপ্রণেতাদের একটি অংশ সমর্থন দেয়ার কারণে ইসরাইলে গান্টজই নতুন প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন বলে জল্পনা-কল্পনা ছড়িয়ে পড়েছে। ইসরাইলের সাবেক এই সামরিক প্রধান যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কয়েক দিনের মধ্যে ‘একটি জাতীয় সরকার গঠন করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন।’
ইসরাইল করোনাভাইরাস থেকে বাঁচতে যখন আপ্রাণ প্রয়াস চালাচ্ছে তখনই এই ঘোষণা এলো। ইসরাইল ২৫০ জনের ভাইরাস সংক্রমিত হওয়ার খবর পাওয়ার পর দেশটি যেন স্তব্ধ হয়ে গেছে। ৫০ হাজারেরও বেশি মানুষকে আইসোলেশনে নেয়া হয়েছে; স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। দেশটিতে ১০ জনের বেশি মানুষের সমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর দুর্নীতির বিচারও পিছিয়ে দেয়া হয়েছে। ফিলিস্তিনিদের মধ্যেও কোভিড-১৯ এর ৩৯ জনের সংক্রমণ চিহ্নিত করা হয়েছে। অধিকৃত পশ্চিম তীরে এই ভাইরাস দ্বারা ফিলিস্তিনিরা আক্রান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে।
গত এক বছরেরও কম সময়ের মধ্যে ইসরাইলে ২ মার্চের নির্বাচন ছিল তৃতীয় নির্বাচন। গত দুই দফা নির্বাচনের মাধ্যমে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা সরকার গঠনের মতো সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভে ব্যর্থ হওয়ায় ২ মার্চ তৃতীয়বারের মতো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এবারের নির্বাচনে লিকুদ পার্ট ৩৬টি আসনে জয়লাভ করে এবং ডানপন্থী ও ধর্মীয় দলগুলো জয় পায় অপর ২২টি আসনে। কিন্তু ১২০ সদস্যের নেসেটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের জন্য নেতানিয়াহুর প্রয়োজন ছিল আরো তিনটি আসন।
এ দিকে, নির্বাচনে ব্লু অ্যান্ড হোয়াইট ৩৩টি আসন পেয়েছে। ইসরাইলের আরব সংখ্যালঘুদের প্রতিনিধিত্বকারী জয়েন্ট লিস্ট ১৫টি আসন পেয়ে তৃতীয় স্থানে আছে। মধ্য বাম লেবার পেয়েছে সাতটি আসন এবং জাতীয়তাবাদী ইসরাইলি বেইতেনু পার্টি পেয়েছে সাতটি আসন।
সর্বশেষ খবরে জানা গেছে, ইসরাইলি প্রেসিডেন্ট রুবেন রিভলিন মধ্যপন্থী দল ব্লু অ্যান্ড হোয়াইট পার্টির নেতা বেনি গান্টজকে সরকার গঠনের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। পার্লামেন্টের সংখ্যাগরিষ্ঠ এমপির সমর্থনের ভিত্তিতে ব্লু অ্যান্ড হোয়াইট পার্টির নেতাকেই সরকার গঠনের জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে। সপ্তাহান্তে প্রেসিডেন্ট সব দলের কাছে একটি কোয়ালিশন সরকার গঠনের পরামর্শ চেয়েছিলেন। এ দিকে, করোনার কারণে নেতানিয়াহু নিজে একটি ‘জরুরি জাতীয় সরকার’এর নেতৃত্বে থাকার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তিনি ছয় মাসের জন্য এই সরকার গঠনের প্রস্তাব দিয়েছিলেন।
কিন্তু প্রেসিডেন্ট রিভলিন আনুষ্ঠানিকভাবে ব্লু অ্যান্ড হোয়াইট পার্টির নেতা গান্টজকে সরকার গঠনের ম্যান্ডেট দিয়েছেন। প্রেসিডেন্ট গান্টজ এবং নির্বাচিত সবার প্রতি একটি সরকার গঠনের কাজ এগিয়ে নেয়ার আহ্বান জানান। তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ‘এই সঙ্কটের সময় চতুর্থবারের মতো নির্বাচনের আয়োজন করা সম্ভব হবে না। গান্টজ একটি কোয়ালিশন সরকার গঠনের জন্য ২৮ দিন সময় পাবেন। এরপর তাকে প্রয়োজনে আরো ১৪ দিন সময় দেয়া হতে পারে। সরকার গঠনের ম্যান্ডেট পাওয়ার পর মি. গান্টজ বলেন, আমি সব দলের ভোটার এবং ইসরাইলের সব নাগরিকের জন্য কাজ করব। আমি করোনাভাইরাস থেকে মানুষকে মুক্ত করার জন্য এবং ঘৃণা, হিংসা-বিদ্বেষ ও বিভাজনের ভাইরাস থেকে মানুষকে মুক্তি দেয়ার জন্য কাজ করব। তিনি বলেন, এগুলো স্বাভাবিক দিন নয়। নেতৃবৃন্দকে অবশ্যই তাদের ব্যক্তিগত বিবেচনার ঊর্ধ্বে ওঠে কাজ করতে হবে। তিনি নেতানিয়াহুর প্রতি একটি ঐক্য ও সমঝোতায় সম্মত হওয়ার আহ্বান জানান। কিন্তু তিনি বিচার এড়িয়ে যাওয়ার জন্য বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর প্রচেষ্টার সমালোচনা করেন। ঘুষ, দুর্নীতি, প্রতারণা ও বিশ্বাস ভঙ্গের দায়ে বিচারের সম্মুখীন হওয়া নেতানিয়াহুর বিচার গত মঙ্গলবারই শুরু হওয়ার কথা ছিল। করোনার কারণে এই বিচার প্রক্রিয়াও পিছিয়ে দেয়া হয়েছে। কোভিড-১৯ এর কারণে বিচারের শুনানি ২৪ মে পর্যন্ত পিছিয়ে দেয়া হয়েছে। নেতানিয়াহু ধনাঢ্য ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে উপঢৌকন গ্রহণ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তিনি এসব অর্থ ইতিবাচক প্রেস কভারেজের জন্য ব্যবহার করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। অবশ্য নেতানিয়াহু এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে এসব অভিযোগ আনা হয়েছে।
জেরুসালেমে বিবিসির টম বেটম্যান বলেছেন, বেনি গান্টজের প্রতি সমর্থন দেয়াটা নেতানিয়াহুকে চপেটাঘাতের শামিল। কিন্তু গান্টজ প্রধানমন্ত্রী হলেও ইসরাইলের রাজনীতিতে যে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে তা সহজে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে বলে মনে হয় না। বেশির ভাগ এমপি গান্টজের প্রতি এগিয়ে যাওয়ার জন্য সবুজ সঙ্কেত দিয়েছেন। তারা চান গান্টজের নেতৃত্বে একত্রে একটি নতুন কোয়ালিশন সরকার গঠিত হোক। তারা নেতানিয়াহুকে আর প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চান না।হ