৩০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৫ পৌষ ১৪৩১, ২৭ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিলম্বিত ফল

-

আফগানিস্তানে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ঘিরে দেখা দিয়েছিল প্রবল জটিলতা। নির্বাচনের প্রায় পাঁচ মাস পর গত ১৮ ফেব্রুয়ারি আশরাফ গনিকে বিজয়ী ঘোষণা করেছে দেশটির নির্বাচন কমিশন। আগামী পাঁচ বছরের জন্য প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করবেন তিনি। নির্বাচনে তিনি পেয়েছেন ৫০ দশমিক ৬৪ শতাংশ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আফগানিস্তানের নির্বাহী প্রধান আবদুল্লাহ আবদুল্লাহ পেয়েছেন ৩৯ দশমিক ৫২ শতাংশ ভোট। আবদুুল্লাহ আবদুুল্লাহ নির্বাচনের প্রাথমিক ফলাফল প্রকাশের পরই তা প্রত্যাখ্যান করে কারচুপির অভিযোগ তদন্ত করে দেখার জন্য নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন।
গত সেপ্টেম্বর মাসের শেষ দিকে অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অপর দুই প্রার্থী গুলবদ্দিন হেকমতিয়ার ও রহমতুল্লাহ নাবিল যথাক্রমে চার ও দুই শতাংশ ভোট পেয়েছেন।
মার্কিন-তালেবান শান্তি আলোচনার জন্য ক্ষেত্র প্রস্তুত করতেই পাঁচ মাস ধরে ঝুলে থাকা নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করা হয় বলে মনে করা হচ্ছে। ফলাফল ঘোষণার চার দিনের মাথায় যুক্তরাষ্ট্রের সাথে তালেবানের সমঝোতার খবর আসে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও নিজেই জানান এ খবর। এর এক দিন আগে তালেবানের সেকেন্ড ইন কমান্ড এ রকমই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন।
তালেবান আগেই ঘোষণা দিয়েছিল এ নির্বাচন হতে দেয়া হবে না। ভোটারদের ভোট দেয়ায় বিরত থাকার আহ্বান জানিয়ে তারা বলেছিল, নির্বাচন হলে ভোটকেন্দ্রে এবং নিরাপত্তাবাহিনীর ওপর হামলা চালানো হবে। উত্তরের রাজ্য পারওয়ানে আশরাফ গানি নির্বাচনী সভায় আত্মঘাতী হামলাও করেছিল তালেবান। ২৬ জন নিহত হয়েছিল সে হামলায়। এরপর আরো হামলা হয়েছে রাজধানী কাবুলে। সেখানে মারা গিয়েছিল ২২ জন। সেপ্টেম্বরে একদিনে হামলা হয়েছিল ৬৮ স্থানে। এতে মারা গিয়েছিল অন্তত ১৫ জন।
কিন্তু আফগানিস্তানে তালেবান হামলার চেয়ে বেশি আলোচিত বিষয় নির্বাচনী কারচুপি ও জালিয়াতি। ভোটগ্রহণ খুব সুশৃঙ্খল ছিল না। বহু আফগানের অভিযোগ, ভোটার তালিকা পূর্ণাঙ্গ ছিল না। বায়োমেট্রিক ব্যবস্থা ঠিকমতো কাজ করেনি। নির্বাচনকর্মীদের অসহযোগিতার অভিযোগও করেছেন অনেকে। অনেক ভোটারের মন্তব্য, নির্বাচনী প্রক্রিয়া এত বিশৃঙ্খল ও ত্রুটিপূর্ণ যে তাদের সমর্থিত প্রার্থী জিতলেও তারা বিশ্বাস করবেন না যে নির্বাচন নিরপেক্ষ হয়েছে। অভিযোগ কমিশনের প্রতিনিধি রুহুল্লাহ নওরোজ বলেছিলেন, এ সমস্যা পুরো দেশের। অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন পেতে আফগানদের আরো অপেক্ষা করতে হবে।
সরকারের ভোটগ্রহণের চেষ্টার মধ্যেও বিতর্ক ছিল। সাবেক প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই বলেছিলেন, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে এ ভোট পুরো দেশকে আরো বিশৃঙ্খলার দিকে ঠেলে দিতে পারে। নির্বাচনের মধ্য দিয়ে তারা দেখাতে চায়, আফগানিস্তানের মানুষ দেখাতে চায়, গণতন্ত্রের প্রতি সরকার কতটা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
আফগানিস্তানের নির্বাচন বরাবরই জালিয়াতির অভিযোগে মøান। ২০১৪ সালের নির্বাচনের সময়ও ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছিল। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে, যুক্তরাষ্ট্রকে নাক গলাতে হয়েছিল। তাদের মধ্যস্থতায় আশরাফ গনি ও আবদুল্লাহ একটি ঐক্যের সরকার গঠনে রাজি হন।
আফগানিস্তানে একসময় হতাহতের ঘটনা সংবাদের শিরোনামে উঠে এলেও এখন সেগুলো খুব স্বাভাবিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। দৃশ্যত এই যুদ্ধের কোনো শেষ নেই। কেননা, এটি ক্রমাগত রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে পরিণত হয়েছে। ২০০১ সালে মার্কিন নেতৃত্বাধীন অভিযান শুরুর আগ পর্যন্ত আফগানিস্তান কখনোই এতটা অনিরাপদ ছিল না। যেমনটা এখন হয়েছে। ১৯ বছর আগে তালেবান শাসনের অবসানের আগ পর্যন্ত আফগানিস্তানের বেশির ভাগ স্থান তাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল।
দেশটিতে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের চেয়েও এ মুহূর্তে জরুরি হলো সশস্ত্রতা কমানো, বেসামরিক প্রশাসন প্রতিষ্ঠা এবং প্রায় পুরোপুরি বিধ্বস্ত রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো গড়া। বর্তমান আফগান সরকারের একাংশ তালেবান প্রতিনিধিদের অন্তর্ভুক্ত করে এখনি একটা অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকার গড়তে ইচ্ছুক। তবে তালেবান বর্তমান সরকারের সাথে একসাথে কাজ করতে রাজি হবে বলে মনে হয় না। অন্য কোনো রাজনৈতিক শক্তির সাথে যৌথভাবে কাজের অভ্যাস নেই তাদের। তারা বরং সুষ্ঠু একটা নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি তুলতে পারে। যেখানে রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশের মধ্য দিয়ে তারা অংশ নেবে। তবে এসবই অনুমান। তালেবানরা কিভাবে আফগানিস্তানের ভবিষ্যতে যুক্ত হবে, তা পুরোপুরি অনিশ্চিত এখনো। খুব শিগগির সেই অনিশ্চয়তা কাটার কোনো সম্ভাবনা নেই বলেই মনে হচ্ছে। হ

 


আরো সংবাদ



premium cement