১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১, ১৫ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

মিছরির শিল্পিত রূপ শিঙ্গা

মিছরির শিল্পিত রূপ শিঙ্গা -

বলছি, আমাদের দেশে বহু রকম লৌকিক খাবারের ঐতিহ্য রয়েছে। অনেকের মতে, ডালের বড়া দিয়ে মোচার ঘণ্ট না খেলে যেমন বাঙালি থাকা যায় না, তেমনি সন্দেশ-রসগোল্লা দিয়ে আপ্যায়ন ছাড়া অতিথি আপ্যায়ন হয় না। মণ্ডা-মিঠাইয়ের পাশাপাশি মিছরি-বাতাসাও আমাদের লৌকিক ঐতিহ্যের প্রতীক। মিছরি শ্রেণীর এক শিল্পিত রূপ হলো শিঙ্গা। শম্বুকাকৃতি বা কোণাকৃতির শিঙ্গাও তৈরি করা হয় মিছরির মতোই। উভয়ই তৈরি করা হয় চিনি জ্বাল দিয়ে। মিছরির গড়ন হয় ফ্ল্যাট বা পাটার মতো, কিনারা উঁচু একটা থালায় চিনি পানির সাথে জ্বাল দিয়ে ঢালা হয়। আর শিঙ্গার জন্য লাগে বিশেষ ধরনের নকশা কাটা ডাইস বা ছাঁচ। ছাঁচ কাঠ খুদে তৈরি করা হয়। ছাঁচের দু’টি মুখ পরস্পর জোড়া দিলে একটা কোণাকৃতির চোঙা তৈরি হয়, যার মাথার দিকটা ধীরে ধীরে সরু হয়ে টোপরের মতো হয়। এর ভেতরে জ্বাল দেয়া চিনির ঘন দ্রবণ ঢেলে ঘোরানো হয়। ছাঁচের গায়ে ঘন দ্রবণের প্রলেপ পড়ে। ঠাণ্ডা হওয়ার পর ছাঁচ খুলে তা বের করা হয়। ওটাই শিঙ্গা। ছাঁচে যে নকশা কাটা থাকে শিঙ্গার ওপরে সেই নকশা তৈরি হয়ে যায়। সাধারণত লতাপাতা, ফুল, শঙ্খ ইত্যাদি নকশা কাটা থাকে, থাকে আলপনাও। এটা দেখতে মাইকের চোঙের মতো। ছয় ইঞ্চি থেকে তিন ফুট পর্যন্ত নানা উচ্চতার শিঙ্গা দেখা যায়। পূজায় বড় বড় শিঙ্গার ব্যবহার ছিল একসময় আভিজাত্য প্রকাশের প্রতীক। সেসব আর এখন নেই। শিঙ্গা খাদ্যবস্তু হলেও এর ব্যবহার মূলত হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের নানা পূজা-পার্বণে। স্বাদে শিঙ্গা ও মিছরির মধ্যে কোনো প্রভেদ নেই। তবে কারুকাজের জন্য মিছরির চেয়ে শিঙ্গার দাম বেশি। নড়াইল, মাগুরা, যশোর, ফরিদপুর প্রভৃতি অঞ্চলে শিঙ্গার প্রচলন বেশি দেখা যায়।


আরো সংবাদ



premium cement