২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

দুলং মানুষ

-

জাতির নাম দুলং; অপর নাম দ্রুং। এরা একটি ক্ষুদ্র জাতি। দুলংরা সাহসী, পরিশ্রমী, সঙ্ঘবদ্ধ ও উদ্যমী। বিশ্বাসযোগ্যতা ও নৈতিকতায় এদের সুনাম আছে।
দুলংদের বসবাস চীনের উত্তর-পশ্চিম য়ুনান প্রদেশের গংশান দুলং এবং নু স্বশাসিত জেলার দুলং নদী উপত্যকায়। গংশান জেলার উত্তরে নুজিয়াং নদীর ধারেও কিছু দুলং বাস করে।
গত শতকের (২০ শতক) মাঝামাঝি পর্যন্ত দুলং সমাজে একটি অদ্ভুত প্রথা প্রচলিত ছিল। নারীদের মুখম-লে উল্কি আঁকা বাধ্যতামূলক ছিল। কোনো বালিকার বয়স ১২-১৩ হলেই তার মুখে জোর করে উল্কি এঁকে দেয়া হতো। ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত এ প্রথা প্রচলিত ছিল।
দুলং জনসংখ্যা প্রায় ৭ হাজার । এদের ভাষার নামও দুলং। এটি চীনা তিব্বতি ভাষা পরিবারের তিব্বতি-মিয়ানি ভাষাগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত। দুলং ভাষার কোনো লিখিত রূপ নেই। কিছু দুলং চীনা ভাষায় লেখাপড়া করে।
দুলংরা দিনে দু’বার আহার করে। শস্য, তরমুজ ও বিট এদের প্রধান খাদ্য। শিম, মটরশুঁটি, আলু ইত্যাদি দুলংদের সাধারণ সবজি। বাঁশমূল, বাঁশের পাতা ও মাশরুমও এদের সবজির তালিকায় রয়েছে।
দুলং সমাজে শীতকাল শিকারের ভরা মৌসুম। এ সময় বন্য ষাঁড়ের গোশত এদের প্রধান খাদ্য। এরা নদীর মাছও ধরে।
দুলংরা সর্বপ্রাণবাদী। এরা বিশ্বাস করে সব বস্তুতেই প্রাণ আছে। আজকাল কিছু দুলং খ্রিষ্ট ধর্ম গ্রহণ করেছে।
দুলংরা মৃতদেহ কবর দেয়। কিন্তু কঠিন রোগে কারো মৃত্যু হলে শব দাহ করা হয় কিংবা নদীতে ফেলে দেয়া হয়।
দুলংরা বাড়ি তৈরি করে পাহাড়ের ঢালে এবং নদী বরাবর। উত্তরাঞ্চলের দুলংরা কাঠের বাড়ি তৈরি করে এবং দক্ষিণাঞ্চলের দুলংরা বানায় বাঁশের বাড়ি। এদের বাড়ি প্রায়ই দোতলা হয়। একটি মইয়ের সাহায্যে এরা উপরতলায় ওঠানামা করে। বাড়ির উপরতলায় মানুষের বসবাস আর নিচতলায় রাখা হয় গবাদিপশু। কখনো বা নিচতলা ব্যবহার করা হয় ভাঁড়ার ঘর হিসেবে। এক পরিবারের সবাই একটি বড় বাড়িতে বাস করে। বাড়িতে একটি অগ্নিকু- রাখা হয়। প্রত্যেক অগ্নিকুণ্ড বাড়ির একটি ছোট পরিবারের প্রতীক। কেউ বিয়ে করলে তার জন্য একটি নতুন অগ্নিকুণ্ড স্থাপন করা হয়। অর্থাৎ পরিবারের ভেতর একটি ছোট পরিবার তৈরি হলো।
এ জাতি একটি নববর্ষ উৎসব পালন করে চান্দ্রবৎসরের ১১ বা ১২তম মাসে। এর নাম কাকুইয়া উৎসব।


আরো সংবাদ



premium cement