২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

বিশ্ব ঐতিহ্য রোহটাস দুর্গ

-


দুর্গের নাম রোহটাস । এটি একটি রক্ষীসেনা দুর্গ (গ্যারিসন ফোর্ট)। দুর্গটি পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলোর একটি। ১৬ শতকের চল্লিশের দশকে ভারত সম্রাট শেরশাহ সুরী এ দুর্গ নির্মাণ করেন। রোহটাস দুর্গ এখনো বেশ ভালো অবস্থায় আছে। ১৯৯৭ সালে এটি বিশ্ব ঐতিহ্য স্থানের মর্যাদায় ভূষিত হয়।
রাওয়ালপিন্ডি থেকে ১০৯ কিলোমিটার দূরে দিনা শহরের কাছে ছোট এক পাহাড়ে রোহটাস দুর্গের অবস্থান। এখানে ছোট্ট শুষ্ক নদী কাহান বৃষ্টিনির্ভর নদী পারনাল খাসের সাথে মিলিত হয়েছে।

মুঘল সম্রাট হুমায়ুন শেরশাহের কাছে পরাজিত হয়ে পারস্যে (আজকের ইরান) আশ্রয় নেয়। সম্রাট হুমায়ুন যাতে আর ভারতে ফিরে শক্তি সঞ্চয় করতে না পারে এ উদ্দেশ্যে শেরশাহ দুর্গটি নির্মাণ করেন। অপর উদ্দেশ্য ছিল গাখার গোত্রকে দমন করা। গাখাররা ছিল মুঘলদের মিত্র এবং এরা শেরশাহ বা পাঠানদের বিরুদ্ধে মুঘলদের পক্ষে ক্ষীণ প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল।
রোহটাস দুর্গ এখনো বেশ ভালো অবস্থায় আছে। এর পরিধি প্রায় ৪ কিলোমিটার। কারো কারো মতে, এ দুর্গ ভারতীয় উপমহাদেশে পাখতুন ও হিন্দু স্থাপত্যের প্রথম সফল সংযোগ।
দুর্গটি নির্মাণে মূলত ব্যবহার করা হয়েছে পাথর; ইটও ব্যবহার করা হয়েছে।
দেয়ালঘেরা দুর্গে রয়েছে ক্রমধাপে নির্মিত তিনটি বিশাল চত্বর, যেগুলো সিঁড়ি দিয়ে সংযুক্ত। বাইরের দেয়ালের উচ্চতা স্থানভেদে ১০-১৮ মিটার এবং চওড়া সর্বোচ্চ ১৩ মিটার।

রোহটাস দুর্গে রয়েছে ১২টি গেট, ৪টি গোপন গেট, ৬৮টি বুরুজ, ১ হাজার ৯০০টি গুলিছোড়ার ছিদ্রপথ (ব্যাটলমেন্ট), ৯ হাজার ৫০০ সিঁড়ি।
রোহটাস দুর্গ পুরুষবাচক স্থাপত্যের প্রকৃষ্ট উদাহরণ। আগ্রা দুর্গের মতো এখানে কোনো প্রাসাদ নেই। মুঘল আমলে রাজা আকবরের সেনাপতি মানসিংহ এখানে একটি প্রাসাদ নির্মাণ করলেও তা দুর্গের অংশ নয়। এটি সত্যিকার অর্থেই ছিল একটি জাঁকালো সেনা শিবির। এমনকি, রাজা-বাদশারাও এখানে এসে তাঁবুতে বাস করতেন। সাধারণ কিছু দালান অবশ্য আছে। দুর্গে একটি মসজিদ আছে। এর নাম শাহি মসজিদ। এ ছাড়া আছে একটি প্রার্থনা কক্ষ। দুর্গে তিনটি বাওলি আছে। বাওলি এক ধরনের কূপ বা ইঁদারা। এগুলোতে পাথরের সিঁড়ি থাকে। একটি বাওলি বহুতলাও হতে পারে। বলদের সাহায্যে চাকা ঘুরিয়ে বাওলির প্রথম তলা থেকে দ্বিতীয় বা অন্য তলায় পানি তোলা যায়।
পাঠানদের কাছ থেকে রোহটাস দুর্গ মুঘলদের দখলে যায়। তবে সামরিক বৈশিষ্ট্যের কারণে মুঘলরা একে পছন্দ করেনি। শিখরাও এ দুর্গ ব্যবহার করেছে। তারপর এটি ইংরেজদের অধীনে আসে। পাকিস্তান হাসিলের পর দুর্গটি পাকিস্তানের অধীনে যায়।

 


আরো সংবাদ



premium cement

সকল