২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

পায়েস বৃত্তান্ত

-

পায়েস বাংলাদেশে বেশ জনপ্রিয় । কিছু লেখকের লেখায় এর বর্ণনা পাওয়া যায়। পয়লা বৈশাখের দিনে পায়েসের স্মৃতিচারণ নিয়ে লেখিকা নীলিমা ইব্রাহিমের একটা লেখায় চমৎকার এক বর্ণনা রয়েছে- ‘আজও চোখের সামনে ভাসে মা বিরাট পিতলের কড়াই করে আধমণ দুধ জ্বাল দিচ্ছেন, পায়েস হবে। গরমে ফর্সা মায়ের গাল লাল হয়ে উঠছে। কপালে চূর্ণ কুন্তলের সঙ্গে সিঁদুরের টিপ গলে একাকার হয়ে গেছে। ঠাকুমা মাঝে মাঝে নাড়তে সাহায্য করছে। পায়েস হলে কয়েক ডজন বাটিতে তা ঢালা হলো। চাকর ভাস্কর ও বাসন মাজার ঝি কালী হাতপাখা দিয়ে বাতাস করে পায়েস ঠাণ্ডা করছে। বলা বাহুল্য, তখন আমাদের ইলেকট্রিসিটি ছিল না। ততক্ষণে ঠাকুমার ঘরে সবাই মাটিতে বাবু হয়ে বসেছি।’ পায়েস রান্না ও পরিবেশনের এমন বর্ণনা খুব কমই আছে। কিন্তু যাকে নিয়ে এত চমৎকার বর্ণনা, সে বস্তুটা আসলে কী?
ধান-চালের দেশ বাংলাদেশে ভাত, পোলাও, বিরিয়ানির মতো পায়েসও একটি ঐতিহ্যবাহী খাবার। বাঙালি পরিবারমাত্রই পায়েসের স্বাদ পেয়েছে। দুধ জ্বাল দিয়ে তার ভেতর সরু ও সুগন্ধি চাল এবং চিনি বা গুড় দিয়ে পায়েস রাঁধা হয়। দুধের পরিমাণ যত বেশি হয় পায়েসের স্বাদ তত ভালো হয়। বাঙালির বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ও অতিথি আপ্যায়নে পায়েস পরিবেশনের ঐতিহ্য সুপ্রাচীন। বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের শিশুদের মুখে ভাত বা অন্নপ্রাশনে পায়েস একটি অপরিহার্য উপাদান। এ ছাড়া সাধভক্ষণ, কনেকে ক্ষীর খাওয়ানো, বিয়ে ইত্যাদি অনুষ্ঠানেও পায়েসের ব্যবহার রয়েছে। অঞ্চলভেদে পায়েসকে ‘ক্ষীর’ ও ‘মিষ্টান্ন’ বলে। গুড় দিয়ে রাঁধা পায়েসকে বলে গুড়ের পায়েস। এ দেশে এমন এক কাল ছিল, যে কালে যেকোনো অনুষ্ঠানে অন্নভোজনের পর মিষ্টান্ন হিসেবে পায়েস পরিবেশন ছিল অন্যতম এক সামাজিক রীতি। এখন সে জায়গা দখল করেছে কোল্ড ড্রিংকস, আইসক্রিম, ফালুদা, কাস্টার্ড ইত্যাদি। তাই ভয় হয়, বাঙালির চিরায়ত ঐতিহ্যের পায়েস উঠে যাবে না তো? প্রশ্নের জবাব দেবে ভবিষ্যত। ছবি : সংগ্রহ

 


আরো সংবাদ



premium cement