২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

শীতলপাটি

-

শীতলপাটি আমাদের দেশের একান্তই নিজস্ব ঐতিহ্য। বিদেশে শীতলপাটি তৈরি হয়, এমন কথা শোনা যায়নি।
‘আসুক, আসুক বেটির দামান কিছুর চিন্তা নাইরে/আমার দরজায় বিছায়া থুইছি কামরাঙ্গাপাটি নারে।’ কবি জসীমউদ্দীনের নকশিকাঁথার মাঠ কবিতায় উল্লেখিত কামরাঙ্গাপাটিই এ দেশের ঐতিহ্যবাহী শীতলপাটি।
প্রাচীনকালে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের কোনো ব্যবস্থা ছিল না। তাই গরমের দিনে কাঁথা বা তোষকের ওপর শোয়ার জন্য এক ধরনের পাটি ব্যবহৃত হতো। চিকন বেতিতে বোনা সে পাটিতে পিঠ এলিয়ে দিলেই শরীর-মন শীতল হয়ে যেত। এ জন্য সে পাটির নাম কালক্রমে হয়ে যায় শীতলপাটি। মুর্তা বা পাটিপাতা গাছের বেতি তুলে সে পাটি নকশা করে বোনা হয় বলে ওর আর এক নাম নকশিপাটি। এ দেশের জলাভূমি বা নিচু স্যাঁতসেঁতে জমিতে ছোট ছোট কঞ্চির মতো একধরনের গাছ জন্মে। পাতা দেখতে অনেকটা কাঁঠালপাতার মতো। এ গাছের নামই বেতিগাছ। নোয়াখালীতে বলে মেস্তাগ, কুমিল্লায় মোতাবাইক, সিলেটে মোতা বা মুর্তা, মুন্সীগঞ্জে মোত্রাবেত, ঝালকাঠিতে পাইত্তা। অন্য নাম মুর্তাবেত, মোতাবেত, পাটিবেত ইত্যাদি। জুন-জুলাইতে গাছে ফুল আসে, সেপ্টেম্বরে গাছ পাকে বা কা- শক্ত হয়। তখন কেটে পানিতে ভিজিয়ে রাখা হয়। পরে তা থেকে বেতি তোলা হয় ও সেই বেতি দিয়ে পাটি বোনা হয়। শোয়ার পাটি ছাড়াও জায়নামাজ, দেয়ালমাদুর, বসার আসন ইত্যাদিও তৈরি করা হয়। ফুল, মসজিদ, লতাপাতা, প্রাণী ও পাখিদের ছবি দিয়েও অলঙ্কৃত করা হয়। তবে মানানসই রঙে বিভিন্ন আল্পনা দিয়ে যেসব শীতলপাটি বোনা হয় সেগুলো দেখতে খুবই সুন্দর। সেগুলোকে বলে নকশিপাটি।
চিত্রানুযায়ী বিভিন্ন পাটির বিভিন্ন নামও দেয়া হয়। যেমন- খেলাঘর, আসমানতারা, জমিনতারা, তাজমহল ইত্যাদি। আছে মোটা পাটি ও চিকন পাটি। শীতলপাটি যারা বোনেন তাদের বলা হয় পাটিয়াল। সাধারণত উত্তরাধিকার সূত্রেই পাটিয়াল হয়। অধিকাংশ শীতলপাটির আকার হয়
র্র্৬ ী ৯র্ । দাম ৫০০ টাকা থেকে ৬০ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়। সিলেট, ময়মনসিংহ, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, ফেনী ও টাঙ্গাইলে বেশি শীতলপাটি বানানো হয়। ফরিদপুরে শীতলপাটিকে বলে সাতৈর পাটি।


আরো সংবাদ



premium cement