২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

সেন্ট পিটাসবার্গ মসজিদ

-

জানো, রাশিয়ার বিখ্যাত শহর সেন্ট পিটার্সবার্গ। এ শহরে রয়েছে প্রাচ্যরীতির শৈল্পিক কারুকাজে নির্মিত একটি মসজিদ, যার নাম সেন্ট পিটাসবার্গ মসজিদ। এক সময় এটি ছিল ইউরোপের সবচেয়ে বড় মসজিদ। রাশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর সেন্ট পিটার্সবার্গের (লেনিনগ্রাদ) এই মসজিদ-দালান দৃষ্টিনন্দন। নগরকেন্দ্রের বিখ্যাত পিটার ও পল দুর্গের বিপরীতে এর অবস্থান। স্থপতি নিকোলাই ভাসিলিয়েভ এই মসজিদ-দালান নির্মাণে সমরখন্দে স্থাপিত তৈমুর লঙের সমাধিসৌধ গুর-ই-আমিরের নির্মাণশৈলী অনুসরণ করেন।
মসজিদের মিনারের উচ্চতা ৪৮ মিটার, মূল গম্বুজ-বুরুজের উচ্চতা ৩৯ মিটার। মসজিদের দৈর্ঘ্য ৪৫ মিটার এবং প্রস্থ ৩২ মিটার। প্রায় ৫ হাজার মুসল্লি একসাথে এখানে নামাজ আদায় করতে পারেন। প্রথম তলায় পুরুষ এবং দ্বিতীয় তলায় নারী মুসল্লিরা ইবাদত করতে পারেন।
মসজিদের সম্মুখভাগে সবুজাভ-নীল রঙের পাথর ব্যবহার করা হয়েছে। এখানে খচিত আছে পবিত্র আল কুরআনের বাণী। মসজিদের দেয়াল তৈরি করা হয়েছিল গ্র্যানিট শিলা ব্যবহার করে। গম্বুজ ও মিনার আকাশ-হালকা নীলের মোজাইক সিরামিকে ঢাকা। মধ্য এশিয়ার দক্ষ কারিগররা মসজিদ নির্মাণকাজে অংশ নিয়েছিলেন।
১৯ শতকে তুরস্ক ও ইরানের অনেক এলাকা দখল করে নেয় রাশিয়া। রুশ সাম্রাজ্যে (রাশিয়া) মুসলমানের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। অনেক মুসলমান রুশ সাম্রাজ্যের তৎকালীন রাজধানী সেন্ট পিটার্সবার্গে বসবাস করতে থাকেন। তাদের ইবাদতের জন্য ওরেনবার্গ শহরের মুফতি সেলিম গিরেই তেভকেলেভ মন্ত্রী কাউন্ট টলস্টয়ের সাথে মসজিদের প্রয়োজনীয়তার ব্যাপারে ১৮৮২ সালে একটি চুক্তি করেন। মন্ত্রী ১০ বছরের মধ্যে একটি মসজিদ নির্মাণের জন্য ৭ লাখ ৫০ হাজার রুবল সংগ্রহের জন্য ১৯০৬ সালে একটি বিশেষ কমিটি গঠন করেন আহুন আতাউল্লা বায়াজিটভকে প্রধান করে। ১৯০৭ সালের ৩ জুলাই মসজিদের জন্য জায়গা কেনার অনুমোদন দেন জার (সম্রাট) দ্বিতীয় নিকোলাস। রুশ সম্রাটের অধীন সেই সময়ের বুখারার আমির (শাসক) আবদুল আহাদ খান এই মসজিদ নির্মাণের জন্য সবচেয়ে বেশি অর্থ প্রদান করেন। ১৯১০ সালে আমিরের শাসনের ২৫তম বার্ষিকী উপলক্ষে মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হয়। এ সময় সেন্ট পিটার্সবার্গে ৮ হাজার মুসলমানের বসবাস ছিল। মসজিদটি উদ্বোধন করা হয় ১৯১৩ সালে। তবে নির্মাণকাজ শেষ হয় ১৯২১ সালে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে ১৯৪০ সালে এ মসজিদ পণ্যসামগ্রীর গুদামে পরিণত করে সোভিয়েত সরকার। ১৯৫৬ সালে ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট সুকর্ণ সোভিয়েত ইউনিয়ন সফর করেন। এসময় তিনি মসজিদটি খুলে দেয়ার অনুরোধ করেন। তার সফরের দশ দিন পর সোভিয়েত সরকার এটি সেখানকার মুসলমান সম্প্রদায়ের কাছে ফিরিয়ে দেয়। ১৯৮০ সালে মসজিদ ভবন বিশেষভাবে সংস্কার করা হয়।


আরো সংবাদ



premium cement

সকল