পুতুলনাচের কথা
- মৃত্যুঞ্জয় রায়
- ১৫ অক্টোবর ২০২২, ০০:০০
পুতুলনাচের কথা বলছি। এটি এ দেশের এক প্রাচীন লোকঐতিহ্য; এক ধরনের লোকনাট্য। ইংরেজিতে যাকে পাপেট শো বলা হয় আমরা তাকে বলি পুতুলনাচ। বাংলাদেশের পুতুলনাচ গ্রন্থের লেখক শিহাব শাহরিয়ার তার বইয়ে লিখেছেন, ‘পুতুলনাচ বলতে, যখন কোনো ছোট মঞ্চে দর্শক-শ্রোতার উপস্থিতিতে একজন বা একাধিক লোক নেপথ্যে বা অদৃশ্যমান থেকে মানুষ বা প্রাণীর ক্ষুদ্র প্রতিকৃতিকে পরিচালিত করে, তাদের পক্ষে কথোপকথন করে অভিনয়ের মাধ্যমে সবার মন কাড়ে, সেটিকে বোঝায়।’ পুতুলনাচ এ দেশের মানুষের সুপ্রাচীনকাল থেকে আনন্দ দিয়ে আসছে। যে যুগে বিনোদনের মাধ্যম ছিল অপ্রতুল, সে যুগে পুতুলনাচ আর পটগানই ছিল বাংলার সাধারণ মানুষের আনন্দের খোরাক। সাধারণত গ্রামের মেলাগুলোতে পুতুলনাচ পরিবেশন করা হতো।
পুতুলনাচের পুতুলগুলো সাধারণত চার ধরনের হয়- তারের পুতুল, লাঠিপুতুল, বেণীপুতুল ও ছায়াপুতুল। তারের পুতুল তার বা সুতার সাহায্যে এবং লাঠিপুতুল লাঠির সাহায্যে নাচানো হয়। যখন একাধিক পুতুল হাত ধরাধরি করে নাচে তখন তাদের বলা হয় বেণীপুতুল। এসব পুতুল তৈরি করা হয় শোলা বা হালকা কাঠ দিয়ে। ছায়াপুতুল আলো ও ছায়ার কারসাজিতে একটা পর্দার ওপর ছায়া ফেলে পুতুলকল্প তৈরি করা হয়। প্রাচীনকাল থেকে যারা পুতুলনাচ দেখিয়ে আসছেন, তারা হিন্দু সম্প্রদায়ভুক্ত এক বিশেষ স্তরের লোক। প্রাচীনকালে পুতুলনাচের কাহিনীগুলো হিন্দু পৌরাণিক কাহিনীনির্ভর হওয়ায় স্বভাবতই মুসলমান সম্প্রদায়ের সেখানে সম্পৃক্ততা লক্ষ করা যায় না। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর তাদের অনেকেই ভারতে চলে যান। ফলে এ শিল্পটি তখন থেকে মুসলমান সম্প্রদায়ের হাতেও বিকশিত হতে শুরু করে এবং পুতুলনাচের কাহিনীও বদলাতে শুরু করে। বেহুলা-লখিন্দরের কাহিনী বদলে বেদে-বেদেনির কাহিনীতে পরিণত হয়। বিশ শতকের শেষ দিকে পুতুলনাচ আধুনিক শিল্পের মর্যাদা পায় এবং টেলিভিশনের এক জনপ্রিয় অনুষ্ঠানে পরিণত হয়। শিল্পী মুস্তফা মনোয়ার সেই আধুনিক ধারার অন্যতম পথিকৃৎ।
বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়িয়া, বরিশাল, ফরিদপুর, খুলনা, কুষ্টিয়া, যশোর ও রংপুরে পুতুলনাচের বেশ কয়েকটি দল আছে। তবে ব্রাহ্মণবাড়িয়াকেই লেখক শিহাব শাহরিয়ার পুতুলনাচের প্রাণকেন্দ্র বলে দাবি করেছেন। বাংলাদেশ ছাড়াও মিসর, চীন, কোরিয়া, ফিলিপাইন, মিয়ানমার, ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও শ্রীলঙ্কায় পুতুলনাচ আছে। তবে আমাদের দেশের সেই আদি ঐতিহ্যবাহী পুতুলনাচ এখন বিলুপ্তির পথে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা