০৪ জানুয়ারি ২০২৫, ২০ পৌষ ১৪৩১, ৩ রজব ১৪৪৬
`

বাংলার পোড়ামাটির নৌকা

-

বলছি, প্রাচীন বাংলা ছিল নদীবহুল, তাই যাতায়াতের প্রধানতম বাহন ছিল নৌকা। চর্যাগীতিতেও তার প্রমাণ মেলে। বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনে বিশেষ করে মৃৎশিল্পে নৌকার ব্যবহার রয়েছে। তবে পোড়ামাটির অন্যান্য শিল্পকর্মের মতো কেন জানি না, নৌকা মৃৎশিল্পীদের ততটা আকৃষ্ট করতে পারেনি। তাই হয়তো এর বহুল ব্যবহার প্রাচীন মৃৎশিল্পে খুব একটা চোখে পড়ে না, যতটা চোখে পড়ে পুতুল, মানুষ ও প্রাণীদের। প্রায় আড়াইশ’ বছরের পুরনো দিনাজপুরে কান্তজির মন্দিরের টেরাকোটায় অবশ্য নৌকার ব্যবহার লক্ষ করা যায়। তেমনি প্রাচীন বাংলার অন্যতম প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনসমৃদ্ধ পাহাড়পুর ও শালবন বিহারের ফলকচিত্রে নৌকা ব্যবহারের পরিচয় পাওয়া যায়। গ্রামবাংলার এমন কোনো মেলা নেই যেখানে পোড়ামাটির নৌকা খেলনা হিসেবে বিক্রি করা হয় না। মেলার পোড়ামাটির খেলনাগুলোর মধ্যে নৌকা অন্যতম। ছোট ও বড় আকারের সেসব নৌকার প্রায় সবই ছইওয়ালা, মাঝিবিহীন। কোনো কোনো এলাকার পোড়ামাটির খেলনা নৌকায় চারটে চাকাও লাগানো থাকে। ছোট ছোট শিশু সেসব নৌকায় দড়ি বেঁধে টেনে নিয়ে শুকনো জমিনেই নৌকা চালিয়ে প্রচুর আনন্দ পায়।

রঙ করা সেসব নৌকার রঙের বিন্যাসে সাদা ও হলুদ রঙের ব্যবহার থাকে বেশি। এর সাথে লাল, কালো, নীল ইত্যাদি বিভিন্ন রঙ দিয়ে তাতে নকশা আঁকা হয়। রঙ করার পর সেগুলো খুব সুন্দর দেখায়। নকশা ও কারুকাজে নিখুঁত না হলেও সেসব শিল্পের মধ্যেই লুকিয়ে আছে কাঁচা মাটির সোঁদা গন্ধের মতো আমাদের লোকশিল্পের খাঁটি পরিচয়। তবে আধুনিক মৃৎশিল্পে হারানো দিনের টেরাকোটা ও নিখুঁত তথা পরিমার্জিত শিল্পরূপটি যেন ফিরে এসেছে।
প্রাচীনকালে বিভিন্ন পোড়ামাটির সামগ্রীতে যেমন রঙ দেয়া হতো না, এখনকার আধুনিক মৃৎশিল্পের শিল্পকর্মেও কোনো রঙ করা হয় না। রঙটা থাকে পোড়ামাটিরই। পোড়ামাটিরই একটা আলাদা সৌন্দর্য আছে, তাকে আবার রঙ দিয়ে ঢাকার দরকার কী? প্রাচীনকালে যেসব নৌকা ছিল সেগুলোর অনেকটাই এখন অন্তর্হিত। তাই পোড়ামাটির নৌকার মাধ্যমে এখনকার প্রজন্ম অন্তত চিনে নিতে পারছে সে সময়কার সওদাগরী বাণিজ্য তরী, বজরা ও ময়ূরপঙ্খী নাওকে। পোড়ামাটির এসব নৌকা এখন তৈরি হচ্ছে ঢাকার সাভার, রায়েরবাজার ও পটুয়াখালীর বাউফলে।


আরো সংবাদ



premium cement

সকল