২১ নভেম্বর ২০২৪, ৬ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ১৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

চিঁড়া কী

চিঁড়া কী -

বলছি, চিঁড়ার কথা। এটি বাঙালির এক সুপ্রাচীন ঐতিহ্যিক খাবার। হঠাৎ কোনো অতিথি বাড়িতে এলে তাকে আপ্যায়িত করা হতো চিঁড়া দিয়ে। সাথে খই-মুড়ি- গুড়। অভিজাত শ্রেণী এর সাথে দিতেন দই আর কলা। এমনকি কখনো কখনো এর সাথে পরিবেশন করা হতো যবের ছাতু বা খইয়ের ছাতু। বাগেরহাট, পিরোজপুর, বরিশালে কোনো বাড়িতে অতিথি গেলে এখনো নারকেল, খেজুর গুড় ও চিঁড়া দিয়ে আপ্যায়ন করার প্রথা রয়ে গেছে। কোনো কোনো এলাকায় সকালের নাশতায় প্রচলন ছিল ঘোল-চিঁড়া খাওয়ার। এখনো সেসব এলাকার ময়রা বা মিষ্টান্নের দোকানে সকালে ‘ঘোল-চিঁড়া’ বিক্রি করা হয়।
প্রাচীনকালে চিঁড়ার ধান ভিজিয়ে সেদ্ধ করে ঢেঁকিতে কুটে চ্যাপ্টা করা হতো। এখন চিঁড়ার কল আসায় এবং গ্রাম থেকে ঢেঁকি প্রায় উঠে যাওয়ায় অল্প সময়ে অধিক চিঁড়া বানানো সহজ হয়ে গেছে। কলে বানানো চিঁড়া হয় পাতলা, খুব কম সময়ের মধ্যেই পানিতে ভিজে নরম হয়ে যায়। অন্যদিকে ঢেঁকিতে ভানা চিঁড়ার ওপর লাল কুড়ার আবরণ থাকে, চিঁড়াও হয় পুরু। এজন্য পানিতে ভিজে নরম হতে একটু সময় বেশি লাগে। তবে স্বাদে ভালো ঢেঁকিতে কোটা চিঁড়া।
দেশের নানা জায়গায় রয়েছে বেশ কিছু বিখ্যাত ও ঐতিহ্যবাহী চিঁড়া। যেমন কাটারিভোগ চালের দেশ দিনাজপুরে পাওয়া যায় ‘কাটারি চিঁড়া’, খুলনা ও তার দক্ষিণ অঞ্চলে গেলে পাওয়া যায় ‘ভাইটাল চিঁড়া’, গাজীপুর এলাকা বিশেষ করে শ্রীপুর ও কালিয়াকৈরে পাওয়া যায় ‘বিন্নি ধানের চিঁড়া’ ইত্যাদি। বলা বাহুল্য, এসবই শালি অর্থাৎ আমন ধানের চিঁড়া। ‘কাটারিভোগ চিঁড়া’য় কাটারিভোগ চালের সুগন্ধ যেমন আছে তেমনি তা সরু ও ছোট, ধবধবে সাদা। কিন্তু ভাইটাল চালের চিঁড়া চওড়া, মোটা ও লালচে রঙের। তবে ও চিঁড়াতেও একটা সুগন্ধ আছে। বর্তমানে আধুনিক জাতের বিভিন্ন ধান থেকে চিঁড়া তৈরি করায় চিঁড়ার সেই ঐতিহ্যবাহী সুগন্ধ লোপ পেয়েছে। এমনকি ঢেঁকিছাঁটা চিঁড়ার যে স্বাদ ছিল, কলছাঁটা চিঁড়ায় তা নেই। একসময় এ উপমহাদেশে বিন্নি ধানের খই আর চিঁড়ার খুব সুনাম ছিল। বিভিন্ন লোকছড়াগুলো সে সাক্ষ্যই দেয়। যেমন-
আমার বাড়ি যাইও বন্ধু/
বসতে দিমু পিঁড়া/
বিন্নি ধানের খই দিমু/শালি ধানের চিঁড়া।
কিন্তু কালের আবর্তনে সে বিন্নি ধানই দেশ থেকে বিলুপ্ত হওয়ার পথে। তাই বিন্নি বা শালি ধানের চিঁড়া আসবে কোথা থেকে? গাজীপুরের কালিয়াকৈরে ‘ধনী রানীর চিঁড়া’ নামে যে বিখ্যাত চিঁড়ার নাম শোনা যায়, সেটি ছিল খুব চিকন ও পাতলা। ধারণা করা হয় সেটা তৈরি করা হতো বিন্নি ধান থেকে। উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে ধনী রানী নামে একজন মহিলা এই চিঁড়া তৈরি করেন। ইসলামি বিশ্বকোষেও এ চিঁড়ার উল্লেখ আছে। সেখানে ধনী রানীর চিঁড়াকে প্রসিদ্ধ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কথিত আছে, ১৮৮৬ সালে ইংল্যান্ডের রানীর জন্মদিনে ভারতবর্ষ থেকে অন্যান্য উপহার সামগ্রীর সাথে ধনী রানীর চিঁড়াকেও পাঠানো হয়েছিল। এখনো গাজীপুরের কালিয়াকৈরে এ চিঁড়া পাওয়া যায়।


আরো সংবাদ



premium cement