০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

টেকনাফের নোয়াখালী পাহাড় মানবপাচারের আস্তানা

- ছবি : সংগৃহীত

টেকনাফের নোয়াখালী পাড়ার পাহাড় এলাকায় আস্তানা গড়ে তুলেছে মানবপাচারকারীরা। বঙ্গোপসাগরের ছেড়া দ্বীপের কাছে ডুবে যাওয়া ট্রলার থেকে উদ্ধার হওয়া রোহিঙ্গারা জানিয়েছেন পাচারের আগে তাদের সাত দিন সেখানে রাখা হয়েছিল।

উদ্ধার হওয়া তিনজনের সাথে কথা হয়েছে। উদ্ধার করে তাদের প্রথমে সেন্টমার্টিন দ্বীপে রাখা হয়। তারা জানিয়েছেন তাদের সবাইকে মালয়েশিয়া পাঠানোর কথা বলে কক্সবাজারের বিভিন্ন ক্যাম্প থেকে ওই পাহাড়ে এনে জড়ো করা হয় কয়েকদিন ধরে। মঙ্গলবার সকালে টেকনাফের নোয়াখালি ঘাট থেকে তাদের ছোট ছোট নৌকায় করে গভীর সমুদ্রে আরেকটি বড় ট্রলারে তোলা হয়। শাহপরী দ্বীপ ও ছেড়া দ্বীপের দক্ষিণে পাথরের সাথে ধাক্কা লেগে ওই ট্রলার ডুবে যায়। তবে অভিযোগ আছে পাচারকারীরা ইচ্ছে করে ট্রলারটি পাথরের সাথে ধাক্কা লাগিয়ে ডুবিয়ে দেয়।

টেকনাফ কোস্টগার্ড স্টেশন কমান্ডার লে. কমান্ডার সোহেল রানা জানান,‘আমাদের প্রাথমিক হিসেবে ১৩৮ জন ছিল ওই বোটে। তাদের মধ্যে তিনটি শিশু ও ১২ জন নারীর লাশ এবং ৭২ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। বাকিরা নিখোঁজ। নিখোঁজদের মধ্যে সাত আট জন পলাতক আছে। তারা দালাল চক্রের সদস্য। তারা আগেই বোট থেকে লাফ দিয়ে পড়ে।’

উদ্ধার হওয়ার রোহিঙ্গাদের একজন দিল বাহার থাকতেন উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্পে। দুই ছেলে ও দুই মেয়েকে নিয়ে দিল বাহার ট্রলারে উঠেছিলেন সকাল সাতটার দিকে। তাদের প্রত্যেকের জন্য দালালের সঙ্গে ৪০ হাজার টাকা দেওয়ার চুক্তি হয়। দিল বাহার তিন হাজার করে টাকা দিয়েছিলেন। বাকি টাকা মালয়েশিয়া পৌছার পর শোধ করার কথা ছিলো। ট্রলার ডুবে যাওয়ার পর দিল বাহার তার এক মেয়েকে নিয়ে বেঁচে ফিরলেও তিন ছেলে মেয়ে নিখোঁজ রয়েছে।

দিলবাহার বলেন, ‘ছয়দিন আগে আমাদের ক্যাম্প থেকে এনে পাহাড়ে রাখা হয়। আরো অনেককে পাহাড়ে আনা হয়। আমার স্বামী আগেই মালয়েশিয়া গেছেন। এবার আমি আমার দুই ছেলে ও দুই মেয়েকে নিয়ে রওয়ানা হয়েছিলাম।’

১৪ বছর বয়সের রাজিমা আক্তারও মালয়েশিয়া যেতে চেয়েছিল। সে জানায়, ‘টেকনাফের বিভিন্ন এলাকা থেকে দালালেরা আমাদের সাতজনকে বিভিন্ন এলাকা থেকে তুলে পাঁচ দিন আগে পাহাড়ে নিয়ে যায়। আরো যারা ছিলেন তাদের কাউকে আগে আনা হয়। কাউকে আমাদের পরে আনা হয়। পাহাড়ে আমরা ১২০ জন নারী ও পুরুষ এবং ১৮ জন শিশু ছিলাম।’

সে জানায়,‘২০-৩০ জন করে প্রথমে ছোট নৌকায় তোলা হয়। এরপর সবাইকে একটি বড় বোটে তোলা হয়। বড় বোটটি পাথরের সাথে ধাক্কা খেয়ে ফেটে যায়। পানি উঠে ডুবে যায়। আমি সেখানে আরেকটি নৌকা পেয়ে সেটা ধরে ধরে তীরে আসি।’

আবুল কালাম থাকেন টেকনাফ এলাকার একটি ক্যাম্পে থাকেন। তিনি জানান,‘সাইফুল নামে এক দালালকে ৪০ হাজার টাকা দিয়েছিলাম মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য। আমরা পরিচিত সাতজন একসঙ্গে ছিলাম। আমাদের বড় তিন তলা জাহাজে করে নেয়ার কথা ছিল। রওয়ানা দেয়ার কয়েকদিন আগে আমাদের ক্যাম্প থেকে পাহাড়ে নিয়ে রাখা হয়। ইচ্ছে করে ট্রলারটি পাথরের সঙ্গে থাক্কা লাগিয়ে ডুবিয়ে দেয়া হয়।’

সেন্টমার্টিন কোস্টগার্ড স্টেশন কমান্ডার নাঈমুল হক জানান,‘পাচারকারীরা এর আগেও ওই পাহাড়ে বিভিন্ন ক্যাম্প থেকে রোহঙ্গাদের এনে পরে পাচার করেছে বলে আমাদের কাছে তথ্য আছে। আর আরো অনেককে পাহাড়ে রাখা হয়েছে পাচারের জন্য। ওই পাহাড়ে তাদের রাখার জন্য ছোট ছোট আধাপাকা ঘর আছে।’

টেকনাফ কোস্টগার্ড স্টেশন কমান্ডার সোহেল রানা জানান,‘সরকারের বিভিন্ন সংস্থাকে ওই পাহাড়ের কথা জানিয়েছি। যতদূর খবর পেয়েছি পাচারকারীর ট্রলার ডুবির খবর পেয়ে পালিয়েছে। আর পাচারের উদ্দেশ্যে আরো যাদের জড়ো করা হয়েছিল তাদের দ্রুত যার যার ক্যাম্পে পঠিয়ে দিয়েছে।’

তিনি জানান,‘ওই পাহাড়টি টেকনাফের নোয়াখালী পাড়ার কাছে। নোয়াখালী পাহাড় নামে পরিচিত।

এদিকে উদ্ধার করা লাশগুলো ময়না তদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। আর যাদের উদ্ধার করা হয়েছে তাদেরও সেন্টমার্টিন থেকে টেকনাফ থানায় আনা হচ্ছে। ডয়চে ভেলে।


আরো সংবাদ



premium cement