‘কাবুলিওয়ালা’ পরিচয় ছাপিয়ে আফগানরা যেভাবে ক্রিকেটবিশ্বে সেরাদের তালিকায়
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ২৫ জুন ২০২৪, ২০:৪২
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দেয়া ‘কাবুলিওয়ালা’ পরিচয় ছাপিয়ে গেছে আফগানিস্তান। আফগান ক্রিকেটে কাবুলিওয়ালার দিন শেষ। রশিদ খানরা ধাপে ধাপে উঠে আসছে সেরাদের তালিকায়।
ওয়ানডে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ওঠার দৌড় থেকে অল্পের জন্য ছিটকে গিয়েছিল আফগানিস্তান। কিন্তু সেবার ইংল্যান্ড ও পাকিস্তানকে হারিয়ে রশিদ খানেরা বুঝিয়ে দিয়েছিলেন তাদের আর হালকাভাবে নেয়া যাবে না। এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে দেয় আফগানিস্তান। তারপর সুপার এইটে অস্ট্রেলিয়া ও বাংলাদেশকে হারিয়ে যোগ্য দল হিসেবেই সেমিফাইনালে জায়গা করে নিয়েছেন রশিদরা।
সেমিফাইনালে উঠে আফগান অধিনায়ক রশিদ খান ধন্যবাদ দিয়েছেন ব্রায়ান লারাকে। রশিদ বলেন, ‘আমরা সেমিফাইনালে উঠতে পারি, এটা একমাত্র বলেছিলেন লারা। আমরা সেকথা সত্যি প্রমাণ করলাম। এখানে এসে একটা পার্টিতে দেখা হয়েছিল তার সাথে। বলেছিলাম, তার কথা ভুল হতে দেব না।’
নবীন উল হকের বলে বাংলাদেশের মোস্তাফিজুর রহমান আউট হতেই আনন্দে আত্মহারা হয়ে যান আফগান ক্রিকেটারেরা। কেউ কেউ কেঁদে ফেলেন। প্রথমবার বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ওঠার জন্য রশিদেরা কতটা মরিয়া ছিলেন তা বোঝা যাচ্ছিল ওই উদযাপন থেকেই।
ম্যাচ শেষে রশিদ বলেন, ‘আমাদের স্বপ্ন ছিল বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ওঠা। আমরা যেভাবে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে শুরু করেছিলাম, তাতেই আত্মবিশ্বাস পেয়ে গিয়েছিলাম। এটা অবিশ্বাস্য।’
রশিদদের জয়ে আফগানিস্তানের রাস্তায় নেমে আসেন সমর্থকেরা। উল্লাসে মেতে ওঠেন তারা। মাঠ থেকে হোটেলে ফেরার সময় উৎসবে মেতে ওঠেন ক্রিকেটারেরাও। সেই ভিডিও পোস্ট করেন মুহাম্মদ নবি। আফগান ক্রিকেটারদের বাসের মধ্যেই নাচতে দেখা যায়। আফগান দলের বোলিং পরামর্শদাতা ডোয়েন ব্র্যাভোর গান, ‘চ্যাম্পিয়ন’ গাইতে শোনা যায় গুলবদিনদের।
বাংলাদেশের বিরুদ্ধে রশিদেরা খুব বেশি রান করতে পারেননি। কিন্তু আফগানিস্তানের বোলিং এতটাই শক্তিশালী যে ১১৫ রানও অনেক কঠিন লক্ষ্য মনে হচ্ছিল বাংলাদেশের জন্য।
রশিদ বলেন, ‘এই পিচে ১৩০-১৩৫ রান হলে ভালো হতো। আমরা ১৫ রান কম করেছি। জানতাম বাংলাদেশ শুরু থেকেই দ্রুত রান করার চেষ্টা করবে। সেটার সুযোগ নিতে চেয়েছিলাম আমরা। নিজেদের পরিকল্পনা অনুযায়ী খেলেছি শুধু। তাতেই সাফল্য পেয়েছি। আমরা চেয়েছিলাম দেশের মানুষকে আনন্দ দিতে। আমাদের সকলের এটাই স্বপ্ন ছিল। সকলে খুব ভালো খেলেছে।’
অস্ট্রেলিয়াকে সুপার এইটে হারিয়ে দেয়ার পর আফগানিস্তানের আত্মবিশ্বাস অনেকটাই বৃদ্ধি পায়। সেমিফাইনালে ওঠার পর রশিদ বলেন, ‘আমরা খুব সহজভাবে সেমিফাইনালটা খেলতে চাই। প্রতিটা মুহূর্ত উপভোগ করতে চাই। সেমিফাইনালে আমরা কোনো চাপ নিয়ে খেলব না।’
রশিদ বাংলাদেশের বিরুদ্ধে জেতার জন্য কতটা মরিয়া ছিলেন, তা বোঝা যায় একটি ঘটনায়। আফগানিস্তানের ইনিংসের শেষ ওভার চলছে তখন। রশিদের সাথে ব্যাট করছিলেন করিম জানাত। রশিদ তৃতীয় বলে ২ রান নিতে চেয়েছিলেন। ব্যাট করতে চাইছিলেন তিনি নিজে। কিন্তু করিম এক রানের বেশি নেননি। রশিদ ক্রিজের মাঝখানে পৌঁছে গেলেও করিম আসেননি। রাগে তার দিকে ব্যাট ছুড়ে দিয়ে নন-স্ট্রাইকারের দিকে ফিরে যান রশিদ। পরে ব্যাট নিতে এসেও রাগ প্রকাশ করেন। রশিদ জানতেন তিনি ব্যাট করলে বড় শট খেলার চেষ্টা করবেন। সেই কারণেই স্ট্রাইক নিতে চেয়েছিলেন রশিদ। পরের বলেই এক রান নেন করিম। শেষ বলে ছক্কা মেরে দলকে ১১৫ রানে পৌঁছে দেন রশিদ।
পনেরো বছর আগেও আফগানিস্তানের ক্রিকেট নিয়ে কোনো আগ্রহ ছিল না। মুহাম্মদ নবি সেই সময় থেকে খেলছেন। যোগ্যতা অর্জন পর্বে খেলতে হতো তাদের। সেখান থেকে ২০২৪ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে আফগানিস্তান। তরুণ নুরদের সাথে আনন্দে ভাসছেন ৩৯ বছরের নবিও। ১৫ বছর আগে নবিরা সেমিফাইনালে ওঠার কথা বললে হয়তো নিজেদের দেশেই হাসির পাত্র হতেন। আর সেই স্বপ্ন এখন সত্যি করছেন নুর, গুলবদিন নাইবেরা।
সেমিফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে খেলতে হবে আফগানিস্তানকে। নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও বাংলাদেশের মতো টেস্ট খেলুড়ে দেশকে হারানোর পর দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারানোর স্বপ্ন দেখতেই পারেন রশিদরা। আর ‘চোকার্স’ বলে পরিচিত প্রোটিয়ারা সেমিফাইনালে হেরে গেলে আফগানিস্তান পৌঁছে যেতে পারে ফাইনালেও। তখন আফগান ক্রিকেটের ইতিহাসটাই হয়তো বদলে যাবে।
উল্লেখ্য, ‘কাবুলিওয়ালা’ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত একটি ছোটগল্প। এটি ১৮৯২ সালে প্রকাশিত হয়। গল্পে আফগানিস্তান থেকে আসা এক ফল বিক্রেতার চরিত্র রয়েছে। সেখানেই আফগানদের ‘কাবুলিওয়ালা’ হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে।
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা