ভারত-পাকিস্তান টি-২০ বিশ্বকাপের শেষ চারে পৌঁছাবে : সৌরভ গাঙ্গুলি
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ০১ জুন ২০২৪, ১০:২৭
আর মাত্র এক দিন। শনিবার (১ জুন) থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কেই শুরু হবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। মোট ২০ দল খেলবে এবার। ২১ মে রাহুল দ্রাবিড়ের সাথে নিউইয়র্কের বিমানে উঠেছেন রোহিত শর্মারা। ভারতের প্রথম ম্যাচ ৫ জুন, নিউইয়র্কে আয়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে। যদিও সব নজর এখন থেকেই টেনে নিয়েছে ৯ জুনের ম্যাচ। যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে মুখোমুখি হবে ক্রিকেট দুনিয়ার দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী, ভারত ও পাকিস্তান।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপকে সামনে রেখে ভারতের জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক ও ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ডের সাবেক প্রেসিডেন্ট সৌরভ গাঙ্গুলির সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ভয়েস অফ আমেরিকার শুভ্র মুখোপাধ্যায়।
সৌরভ গাঙ্গুলি কি যাচ্ছেন ধারাভাষ্য দিতে?
সাবেক ভারত অধিনায়ক জানান, খেলা দেখতে অবশ্যই যেতে চান। তিনি বলেন, ‘এখনই কিছু পরিকল্পনা করিনি। ধারাভাষ্য করব কিনা বলতে পারছি না। প্রস্তাব এলে ভেবে দেখব, সেটা বলতে পারি। তবে খেলা দেখতে তো যেতে চাই।’
কারা যেতে পারে তাহলে শেষ চারে?
ইতোমধ্যেই বিশ্বকাপ নিয়ে উত্তেজনার পারদ চড়তে শুরু করেছে। যাতে আরো তেল-ঘি ঢেলেছে এবারের ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল)। অস্ট্রেলিয়ার ট্র্যাভিস হেড, ওয়েস্ট ইন্ডিজের নিকোলাস পূরণ, দক্ষিণ আফ্রিকার হাইনরিখ ক্লাসেন, আইডেন মার্করাম, ইংল্যান্ডের জনি বেয়ারস্টো, জস বাটলার, ফিল সল্টরা সমর্থকদের প্রত্যাশাকে বুর্জ খলিফায় উঠিয়ে দিয়েছেন।
সৌরভ কিন্তু এবারের আইপিএলে ধুন্ধুমার ব্যাট করা ইংরেজদের চাইতে এগিয়ে রাখছেন নিউজিল্যান্ডকে। পাশাপাশি, পাকিস্তানকেও বাদ রাখছেন না। তবে ভারত যে শেষ চারে যাবেই, সে নিয়ে নিশ্চিত ভারতের সাবেক এই অধিনায়ক।
তিনি বলেন, ‘আমার মতে, ভারতীয় দল টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে যাবেই। তারপরেই আসল পরীক্ষা। আমার বিচারে, শেষ চারের দল অস্ট্রেলিয়া, ভারত, নিউজিল্যান্ড ও পাকিস্তান।’
এবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আয়োজক যৌথভাবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও যুক্তরাষ্ট্র। বহুদিন পর বড়মাপের টুর্নামেন্ট ফিরতে চলেছে ক্রিকেট রূপকথার দেশে। সময়টা বেশ কয়েক দিন ধরেই খারাপ যাচ্ছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের। এককালের বুক কাঁপানো ম্যালকম মার্শাল, অ্যান্ডি রবার্টস, জোয়েল গার্নার, মাইকেল হোল্ডিং, ক্লাইভ লয়েড, ভিভ রিচার্ডসদের দল ইতিহাসে প্রথমবার গত বিশ্বকাপে যোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি।
আর অন্য স্বাগতিক যুক্তরাষ্ট্র ক্রিকেট খেলাটা মূলধারায় সেভাবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেনি। বেসবল-বাস্কেটবলের দাপটে ফুটবলেরই (সকারেরই) যেখানে কাহিল দশা, ক্রিকেট তো সেখানে পাত্তাই পায় না। কয়েকজন মার্কিন ক্রিকেটের নাম জানেন জিজ্ঞেস করলে এদিক-ওদিক তাকাতে হবে। তবে ছবিটা ইদানিং পাল্টাচ্ছে। দেশটিতে ক্রিকেট জনপ্রিয় করার জন্য আইসিসি চেষ্টায় ত্রুটি রাখছে না। অবসরপ্রাপ্ত তারকাদের নিয়ে ‘লেজেন্ডস ক্রিকেট লিগ’ খেলিয়েছে। যেখানে খেলে এসেছেন সৌরভ।
যুক্তরাষ্ট্র মানেই স্পিনারদের স্বর্গরাজ্য, তেমন মনে করার দিন আর নেই বলে মনে করেন সৌরভ। লেজেন্ডস লিগ খেলার অভিজ্ঞতা থেকে বলেন, ‘ওই সময় উইকেট ছিল ব্যাটসম্যান সহায়ক। তবে এবার তো শুনছি ওরা অন্য শহর থেকে পিচ এনে মাঠ তৈরি করেছে।’
বস্তুত, ফ্লোরিডার লডারহিল বাদ দিলে যুক্তরাষ্ট্রের বাকি সব মাঠই বিশ্বকাপের আগে তড়িঘড়ি তৈরি হচ্ছে।
কিন্তু পরিস্থিতি অনেকটাই আলাদা ক্যারিবিয়ান সাগরের বিভিন্ন দ্বীপে। সেখানে স্পিন ও পেসের ভালো ব্যালেন্স থাকে। বিশেষ করে ত্রিনিদাদ ও গায়নার পিচে টার্ন ভালোই। পাশাপাশি ওয়েস্ট ইন্ডিজের ধ্রুপদী ফাস্ট বোলারদের বধ্যভূমি বলে পরিচিত বার্বেডোজ, অ্যান্টিগুয়া, সেন্ট লুসিয়ার কথাও ভাবতে হবে।
সৌরভ মনে করেন, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজেই বেশি ম্যাচ খেলবে ভারত। ওই দেশের পিচ হবে স্পিনিং। তাই চার স্পিনার নিয়ে যাওয়া ভালো বিষয়। আমি মনে করি, সাত ব্যাটসম্যান, তার মধ্যে একজন বোলিং অলরাউন্ডার থাকতে হবে দলে। আর বিশেষজ্ঞ চার বোলার নিয়ে মাঠে নামা উচিত। দু’জন স্পিনার ও দু’জন পেসার থাকা দরকার দলে।’
কেমন হওয়া উচিত ভারতের লাইনআপ?
এই চার স্পিনারের চক্করে এবারের ভারতীয় দল নিয়ে নির্বাচনের আগে থেকে বিস্তর জলঘোলা চলছে। মোটামুটি কয়েকজনের নাম চূড়ান্ত ছিল। ওই তালিকায় ছিলেন বিরাট কোহলি থেকে রোহিত শর্মা, যশপ্রীত বুমরাহ, কুলদীপ যাদব, ঋষভ পন্থরা। কিন্তু বাকি জায়গাগুলো নিয়েই আমদাবাদের আইটিসি নর্মদায় কার্যত আলোচনার তুফান চলেছে নির্বাচকদের মধ্যে। শেষ অবধি ওপেনে রোহিতের সাথে কি যশস্বী জয়সওয়াল থাকবেন নাকি শুভমন গিলকে খেলানো হবে? তিনে তো বিরাট ছাড়বেন না। চারে সূর্যকুমার মুম্বাইয়ের হয়ে সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন। ওদিকে হার্দিক ব্যাটিংয়ের সাথে মিডিয়াম ফাস্ট বোলিংটাও ভালো করেন। স্পিনে আবার ওই দিক দিয়ে রবীন্দ্র জাদেজা রয়েছেন। তাহলে কি সঞ্জু স্যামসন বাদ পড়বেন? শেষ অবধি সঞ্জুকে নিয়েছেন অজিত আগরকর।
কিন্তু সৌরভ বলেন, বিরাটের উচিত রোহিতের সাথে ওপেন করা। এমনিতেই আরসিবির হয়ে বিরাট ওপেন করে কমলা টুপি আদায় করে নিয়েছেন।
সৌরভ বলেন, ‘আমি বারবারই বলব, রোহিতের সাথে কোহলিই ওপেন করুক। বিপক্ষ দল যদি দেখে, দুই হেভিওয়েট তারকা ওপেনে নামছে, একটু সমীহ তো করবেই। কোহলি কিন্তু দারুণ ফর্মে আছে। দুই সিনিয়রকে নিয়েই আমি আশাবাদী। ওরা কথা বলে ঠিক করুক, কে ধরে খেলবে, কে মারবে! ম্যাচ বুঝে সেই মতো এগোতে হবে।’
পাশাপাশি ঋষভ পন্থকে নিয়ে কার্যত উচ্ছ্বসিত সৌরভ। দিল্লিতে তার অধীনেই ঋষভ দুর্ঘটনা থেকে চোট সারিয়ে ‘কামব্যাক’ করেছেন।
সৌরভ বলেন, ‘আমি শুরু থেকেই বলে এসেছি, ঋষভ দারুণ প্রতিভাবান ক্রিকেটার। এমন খেলোয়াড় খুবই বিরল। এক হচ্ছে ওর ক্রিকেটীয় প্রতিভা, আর দুই হলো ঋষভের জেদ। দুই মিশ্রণে ওর মতো লড়াকু তারকা হয় না। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও নিজেকে মেলে ধরবে। এত বড় চোট পাওয়ার পরেও দ্রুত মাঠে ফিরে প্রমাণ করেছে, ওর পক্ষে সবই সম্ভব।’
কেন বারবার ব্যর্থ হচ্ছে ভারত?
২০১৩ সালে শেষ আইসিসি ট্রফি জিতেছে ভারত। তারপর ১১ বছর কেটেছে। ভারতের ট্রফি-খরা এখনো কাটেনি। কেন বার বার ব্যর্থ হচ্ছে ভারত? সাবেক অধিনায়ক মনে করিয়ে দিলেন, গত বিশ্বকাপে কিন্তু ফাইনালের আগে একটাও ম্যাচ হারেনি ভারত।
সৌরভ বলেন, ‘এটা সত্যি কথাই যে আইসিসি ট্রফিতে অনেক দিন ধরে চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি ভারতীয় দল। তবে আমি এটাও বলব, গত ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলেছে একটা ম্যাচ না হেরে। এছাড়াও আরো সাফল্য পেয়েছে। আমি ইতিবাচক মানসিকতা রাখতে চাই। হতাশ হলে চলবে না। ব্যর্থতার একটা কারণ, সবাই অহেতুক চ্যাম্পিয়ন হওয়া নিয়ে ভাবছে। এতে সবার ওপর চাপ পড়ে যাচ্ছে। এসব চাপ থেকে দূরে সরে স্বাভাবিক ছন্দে খেলতে হবে। নিজেদের খেলাটা খেলতে পারলে এবার তো ভালো কিছু করা অবশ্যই সম্ভব।’
রিঙ্কু সিংহের বিশ্বকাপ দলে জায়গা না পাওয়া প্রসঙ্গে
আইপিএলে সৌরভ দিল্লি ক্যাপিটালসের ডিরেক্টর অফ ক্রিকেট হিসেবে কাজ করেন। কিন্তু সাবেক কেকেআর অধিনায়ককে পেয়ে রিঙ্কু সিংহের কথা একবার জিজ্ঞেস না করলে হয়? এবারে তো রিঙ্কুর রিজার্ভে থাকা নিয়ে রীতিমত শোরগোল পড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। কী বলবেন আপনি? সৌরভ কিন্তু রিঙ্কুর বাদ পড়া নিয়ে অবাক হননি।
সাফ বলেন, ‘আমি জানতাম, চার স্পিনার নিয়ে গেলে ওকে বাদ পড়তে হবেই। হার্দিককে এখনো দলে দরকার। বড় মঞ্চের খেলোয়াড়। শিবম দুবেও আমার দারুণ পছন্দের।’
কিন্তু তাই বলে হতাশ হলে চলবে না। সৌরভ বলেন, ‘দল থেকে বাদ নিয়ে আপসেট হওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। রিঙ্কুর কাছে আবারো বড় মঞ্চের জন্য সুযোগ আসবে, সেই সুযোগকে কাজে লাগাতে হবে। দল থেকে বাদ পড়ে বিচলিত হওয়ার প্রয়োজন নেই, কারো কাছে যেতেও হবে না, বলতেও হবে না কিছু। রিঙ্কুকে একটাই কথা বলব, এখনই যেন ধৈর্য্য না হারায়। আরো বহু পথ যেতে হবে।’
আইপিএলের ধকল কি নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে?
তবে সৌরভের আশঙ্কা, আইপিএলের ধকল। ২৬ মে আইপিএলের ফাইনাল। মাত্র ছয় দিনের মধ্যে শুরু হচ্ছে বিশ্বকাপ। মাঝে লম্বা বিমান জার্নি আছে। পর্যাপ্ত বিশ্রাম না নিয়ে এমন বড় টুর্নামেন্টে যাওয়াটা কি ঝুঁকির নয়? এমনিতেই বিভিন্ন দেশ থেকে তাদের খেলোয়াড়দের আইপিএলের আগেই ফিরিয়ে নিয়ে আসার তোড়জোড় চলছে। দেশে ফিরেছেন মুস্তাফিজুর রহমান, ইংল্যান্ডও বিশ্বকাপের আগে পাকিস্তানের সাথে সিরিজ খেলবে বলে ফিল সল্ট, জনি বেয়ারস্টো, জস বাটলার, স্যাম কারানদের উড়িয়ে নিয়ে যাবে জানিয়েছে।
সৌরভ যেমন বলেন, ‘আইপিএলের ধকল দলের ক্রিকেটাররা কেমন নিতে পারছে, সেটা কিন্তু বিশ্বমঞ্চে পার্থক্য গড়ে দেবে।’
সূত্র : ভয়েস অব আমেরিকা
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা