২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

বন্ধু তামিমের বিশ্বাস রাখলেন সাকিব, ভাঙলেন সমর্থকদের অভিমান

বন্ধু তামিমের বিশ্বাস রাখলেন সাকিব, ভাঙলেন সমর্থকদের অভিমান - ছবি : সংগৃহীত

২০১৭ সালে মিরপুরে অস্ট্রেলিয়া বধের দিনে ম্যাচসেরা সাকিব আল হাসানের দুর্দান্ত নৈপুণ্যে মুগ্ধ হয়ে বন্ধু তামিম ইকবাল একটু সাহস করেই বলেছিলেন, ‘সাকিব যেদিন চায়, সেদিন সে অদম্য। সে যদি নিয়মিত এমন চায়, তাহলে এমন সব পারফর্ম করতে পারবে, যা বিশ্বে কেউ দেখেনি।’

এমন মন্তব্য শুনে হয়তো অনেকেই বলতে পারেন অতিরিক্ত কিংবা অতিরঞ্জিত। ফলে এর জবাবটাও সেদিন দিয়ে রেখে ছিলেন তামিম। বলেছিলেন 'জানি, অনেক বড় কথা বলছি। কিন্তু আমি সত্যিই বিশ্বাস করি, সে মন থেকে চাইলে নিজেকে ও সাথে বাংলাদেশকেও আরো উপরে নিয়ে যেতে পারে। তার মতো আমি আর কাউকে দেখিনি।'

বিষয়টা নিয়ে সাকিবের কাছেও জানতে চাওয়া হয়েছিল, জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল- বন্ধু তামিম যে বললো, আপনি চাইলেই আরো অনেক কিছু করতে পারেন। তবে, করেন না কেন? সাকিব সেবার স্বভাবসিদ্ধ মুচকি হাসি হেসে উত্তর দিয়েছিলেন, বলেন, ‘প্রতিদিন কি অমন খেলা যায় নাকি? ভেতর থেকে কি প্রতিদিন আসে!’

সাকিব থেকে আজকের সাকিব, পেরিয়ে গেছে অর্ধ যুগ অর্থাৎ ছয়টা বছর। বদলে গেছে কত কিছু, হারিয়ে গেছে কত প্রিয়জন। তবে সেই সাকিব! তিনি এখনো আছেন, আগের মতোই আছেন। যদিও সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে নিজেকে বদলে নিয়েছেন, বদলাইনি তার অবস্থান। এখনো যেদিন মনেপ্রাণে চান, সেদিন কী করতে পারেন, সেই উদাহরণ দিতে গেলে গতকাল ইংল্যান্ডের বিপক্ষের ম্যাচটাই আসবে সবার আগে।

বলতে পারেন সাকিব তো নিয়মিত ভালো খেলেন, এই আর তেমন কি? হ্যাঁ সাকিব বরাবরই ভালো খেলেন, তবে মাঝে মাঝে ছাড়িয়ে যান নিজেকেও। তবে নিজের জন্য তো কখনোই নয়, দলের জন্যও কখনো কখনো নয়। কখনো সাকিব খেলেন দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য। যেমনটা গতকাল খেললেন, গতকাল খেলেছেন অভিমানী দর্শকদের মাঠে ফেরাতে।

কেননা গতকাল দিনটা অন্য সব দিনের মতো ছিল না, ছিল না অন্য কোনো ‘সোমবারের’ মতোন। যেই বাঙালীরা ক্রিকেটে খায়, ক্রিকেটে ঘুমায়, ক্রিকেটেই করে জীবন পার; তারাই কিনা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল সাকিব-তামিমদের থেকে! অবাক হলেও সত্য, গতকাল এমনটাই ঘটেছে। ঘটেছে চট্টগ্রামে।

ঘটনার সূত্রপাত সপ্তাহখানেক আগে। সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলতে নামে বাংলাদেশ, যেই ম্যাচে কোনোরকমে ২০০ পার করে টাইগাররা। দ্বিতীয় ম্যাচে গত শুক্রবারে ২০০ রানও স্পর্শ করতে পারেনি বাংলাদেশ। সেই ম্যাচটাও হেরে যায় টাইগাররা, এক ম্যাচ হাতে রেখে হেরে যায় সিরিজও। হারের থেকে বড় চিন্তার কারণ হারের ধরন, যেন অনেকটাই অসহায় আত্মসমর্পণ। দলের এমন বেহাল দশায় নাখোশ দর্শকরা; বড্ড অভিমানী হয়ে উঠেন তারা। সাকিব-তামিমদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন তারা।

তবে দর্শকরাই যে বাংলাদেশ ক্রিকেটের শক্তি, তা সাকিবেরও জানা। বরাবরই তো তিনি বলে থাকেন, দর্শকরাই তাকে অনুপ্রেরণা যোগান। সুতরাং তাদের অভিমান ভেঙে তাদের ফের মাঠমুখী করার দায়িত্বটা তারই। হতাশ সমর্থকদের মাঝে প্রাণসঞ্চার করতে, তাদের উজ্জীবিত করতে, তাদের অভিমান ভাঙতে একটা জয়ের বিকল্প ছিল না। তবে প্রতিপক্ষ দল যখন বিশ্বসেরা, তাদের থামাতে তাই জ্বলে উঠতে হতো বিশ্বসেরাকেই, সাকিব আল হাসানকেই।


আরো সংবাদ



premium cement