আর্শীবাদের আলোয় ভরা বিপিএলের ৬ষ্ঠ আসর
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১২:০১, আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৩:৪৯
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপএিল) ৬ষ্ঠ আসরের পর্দা নামলো শুক্রবার রাতে। আগের আসরগুলো শুরু থেকে জমজমাট থাকলেও এবারের আসর জমেছে অনেকটা পড়ে। লিগ-পর্বের শেষের দিকে এসে ক্রিকেটপ্রেমীদের মনোযোগ কেড়ে নিয়েছে বিপিএল। তবে অন্যান্যবারের চেয়ে এবারের আসরটি দেশী ক্রিকেটারদের জন্য অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কারণ সামনেই বিশ্বকাপ। বিপিএলে ভালো পারফরমেন্স মানেই জাতীয় দলে প্রবেশ।
আগামী ৩০ মে থেকে ইংল্যান্ড ও ওয়েলসে যৌথভাবে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বিশ্বকাপের ১২তম আসর। আর সব দেশই চায় বিশ্বকাপটা নিজেদের ঘরে তুলে নিতে। সেদিক থেকে এগিয়ে ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা ও পাকিস্তানের মতো দলগুলো। তবে বিশ্বকাপে এবার বাজিমত করার মতো একটি দল হলো বাংলাদেশ। আর গত আসরগুলোর চেয়ে এবার যে টাইগাররা অনেক বেশি শক্তিশালী ভূমিকা রাখবে তা অনুমেয়।
এশিয়ার বাইরের পিচের অর্থ খুঁজতে গেলেই দাঁড়ায় পেসার ও বাউন্সার উইকেট। সেদিক থেকে অনেক পিছিয়ে ছিল বাংলাদেশ। তবে বিপিএল ষষ্ঠ আসর সেই ক্রান্তি দূর করে প্রত্যয় দেখালো সামনে আসার। পেস বোলার নিয়ে যে চিন্তায় ছিল বোর্ড, হয়তো তা ঘুচবে এবার। পুরাতন আর নতুনদের নিয়ে গড়া যায় এ রসায়ন।
জাতীয় দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা বল হাতে যৌথভাবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২২ ইউকেট নিয়ে স্বপ্নের মতো একটি বিপিএল আসর কাটালেন এবার। দীর্ঘদিন জাতীয় দলের বাহিরে থাকা স্পিডস্টার তাসকিন আহমেদ ফিরেছেন চেনাফর্মে। লাইন-লেন্থ ঠিকভাবে ধরে রাখতে পারলে তিনি হতে পারবেন বিশ্বকাপের এবারের আসরে বাংলাদেশের অন্যতম সফল বোলার।
আরেক গতি দানব রুবেল হোসেন নিজের ফর্মকে তুঙ্গে করে নিয়েছেন বিপিএলের এবারের আসর থেকে। তিনিও যৌথভাবে তাসকিন-মাশরফিদের সমান উইকেট পেয়েছেন। কার্টারমাস্টার মোস্তাফিজের নিজ দলের ফর্ম খারাপ গেলেও তিনি ছিলেন চেনাফর্মে। দেশের ভবিষ্যত কাণ্ডারি এবং বিশ্বকাপে তার কার্টার হতে পারে মহাভয়ঙ্কর। এদের নিয়ে হয়তো ভাবনায় ছিলেন কোচ আর নির্বাচক কমিটি। তাদের যথাসময়ে পেয়েছেন ছন্দে। এছাড়া বাড়তি পাওনা হলো এবাদত হোসেন, আবু জায়েদ, কামরুল ইসলাম রাব্বি ও কাজী অনিকদের।
এবার আসা যাক ব্যাটিংয়ে। তামিম ইকবাল, যিনি সবসময় বাংলাদেশকে পথ দেখান। এবার বিপিএল আসরে একটা অপূর্ণতা ছিল দেশীয় ক্রিকেটারদের সেঞ্চুরি না পাওয়া। সেই অপূর্ণতা ঘুচেছে ফাইনালে ৬১ বলে ১৪১ রানের বিধ্বংসী ইনিংসের মাধ্যমে। এবং ৪৬৭ রান নিয়ে তিনি গড়েছেন আসরের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানাদাতার রেকর্ড। বিশ্বকাপে তার ব্যাট এভাবে চললে হয়তো বিপক্ষ দলের বোলারদের উপর ভয়নাক আতঙ্ক ছড়াতে পারে।
বাংলাদেশের দু:সময়ের মূর্ত প্রতিক মি. ডিপেন্ডেবলখ্যাত মুশফিকুর রহিম। জাতীয় দল কিংবা বিপিএলে ছন্দেই আছেন তিনি। প্রয়োজন শুধু এভাবে ফর্মটা ধরে রেখে মূল জায়গায় দেখানো। এবার আসরে তিনি করেছেন ৪২৬ রান। দীর্ঘদিন বিগ হিটারের অভাব ছিল দলে, এবার হয়তো সেই অভাব পূরণ হতে পারে। ঢাকা ডাইনামাইটসের রনি তালুকদার আর চিটাগাং ভাইকিংসের ইয়াসির আলী নজর কেড়েছেন নির্বাচকমণ্ডলীর। অপেক্ষা শুধু সময়ের সঠিক ব্যবহারের। নামগুলো হয়তো বিশ্বকাপের জন্য ভরসার।
অলরাউন্ডারের কথা বললে, সাকিবের নামটাই আসে প্রথম। বিপিএলের এবারের আসরে নির্বাচিত হয়েছেন ম্যান অব দ্যা সিরিজ। বল হতে ২৩ উইকেট নিয়ে দখল করেছেন শীর্ষস্থান। ব্যাট হাতেও ছিলেন দারুণ ছন্দে। মাহমুদুল্লাহ আর সাকিবের পরে বিশ্বকাপের জন্য সবচেয়ে বড় অস্ত্র হতে পারে পেসার অলরাউন্ডার সাইফউদ্দিন। বল হাতে নিয়েছেন ২১টি উইকেট। ব্যাট হাতেও দাঁড়িয়েছেন দলের প্রয়োজন মুহূর্তে। এই অলরাউন্ডারের কাছে অনেক চাওয়া থাকতে পারে বিশ্বকাপের ১২তম আসরে।
উইকেটের পিছনে নজর কেড়েছেন সবচেয়ে বেশি ডিসমিসাল করে নুরুল হাসান ও মিথুনরা।
বিপিএলের ষষ্ঠ আসরে আশার দিকই বেশি ছিল, তবে বলার মতো হতাশার দিক হলো পুরাতনদের আমরা ছন্দে পেলেও নতুনদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য তেমন পাওয়া যায়নি। তবে বিপিএলের এই আয়োজনের মূলমন্ত্র হলো নতুন ক্রিকেটার তোলা। সেটা হয়তো বেশি হয়নি, তবে যাদের ছন্দে থাকার প্রয়োজন ছিল সেটা পূর্ণই হয়েছে। বিশ্বকাপের জন্য সুন্দর একটি স্কোয়াডের প্লেয়ারদের হয়তো পেয়েছেন নির্বাচকমণ্ডলী। তাই বলা যায়, বিপিএলের ৬ষ্ঠ আসর আশির্বাদের আলোয় ভরা ছিল অনেকখানি।
একনজরে দেশীয় ক্রিটোরদের পারফরমেন্স:
ব্যাট হাতে -
তামিম ইকবাল - ৪৬৭ রান
মুশফিকুর রহিম - ৪২৬ রান
এক ইনিংসে সর্বোচ্চ রান-
তামিম ইকবাল - ১৪১ অপরাজিত
এক ইনিংসে সবচেয়ে বেশি ছক্কা -
তামিম ইকবাল - ১১টি
বোলিং পরিসংখ্যান
সর্বোচ্চ উইকেট - সাকিব আল হাসান ২৩টি
এছাড়া তাসকিন আহমেদ, রুবেল হোসেন ও মাশরাফি বিন মর্তুজা ২২টি করে এবং সাইফউদ্দিন ২২টি উইকেট নেন
ইনিংসে সেরা বোলিং -
কামরুল ইসলাম রাব্বি ৩-০-১০-৪
ইনিংসে ৪ উইকেট -
তাসকিন আহমেদ ও রুবেল হোসেন দুইবার করে
ফিল্ডিং পরিসংখ্যান-
সর্বোচ্চ ক্যাচ - আফিফ হোসেন, তামিম ইকবাল ও সাব্বির রহমান নয়টি করে
সর্বোচ্চ ডিসমিসাল - নুরুল হাসান সোহান ১৯টি (১৫ ক্যাচ ও ৪ স্টাম্পিং)
এক ইনিংসে সর্বোচ্চ ডিসমিসাল - মোহাম্মদ মিথুন, নুরুল হাসান সোহান তিনটি (দুইবার)
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা