১০ অক্টোবর ২০২৪, ২৫ আশ্বিন ১৪৩১, ৬ রবিউস সানি ১৪৪৬
`

ছাত্র আন্দোলনে নিজের ভূমিকা নিয়ে দুঃখ প্রকাশ সাকিবের

সাকিব আল হাসান - ফাইল ছবি

অবশেষে মুখ খুললেন সাকিব আল হাসান। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নিয়ে জানান দিলেন নিজের অবস্থান। দেরি করে হলেও বুঝতে পেরেছেন দেশ ও জাতির চাহিদা। করেছেন দুঃখ প্রকাশ। সেই সাথে দেশের মাটিতে নিজের শেষ টেস্ট খেলতে সবার সমর্থন চাইলেন তিনি।

বুধবার এই প্রসঙ্গে নিজের ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন সাকিব আল হাসান। যেখানে নিজের সীমাবদ্ধতা ও দায়বদ্ধতা নিয়ে কথা বলেন বিশ্ব সেরা এই অলরাউন্ডার। ছাত্র আন্দোলনে নিজের নীরব ভূমিকা নিয়েও দুঃখ প্রকাশ করেন তিনি।

সাকিবের স্ট্যাটাসটি হুবুহু তুলে ধরা হলো
‘আসসালামু আলাইকুম, আমার দেশের প্রতিটি মানুষের ভালোবাসার প্রতি শ্রদ্ধা। আমার প্রতি আপনাদের দোয়া ও ভালবাসা আমাকে আজকের এই সাকিব আল হাসান হিসেবে বিশ্ব দরবারে সমাদৃত করেছে। শুরুতেই আমি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি সে সকল আত্মত্যাগকারী ছাত্রদের, যারা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শহীদ হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন। তাদের প্রতি এবং তাদের পরিবারের প্রতি আমার অন্তরের অন্তস্তল থেকে শ্রদ্ধা এবং সমবেদনা। যদিও স্বজন হারা একটি পরিবারের ত্যাগকে কোন কিছুর বিনিময়ে পূরণ করা সম্ভব না। সন্তান হারানো কিংবা ভাই হারানোর বেদনা কোন কিছুতেই পূরণযোগ্য নয়।

এই সংকটকালীন সময়টাতে আমার সরব উপস্থিতি না থাকায় আপনারা যারা ব্যথিত হয়েছেন বা কষ্ট পেয়েছেন তাদের অনুভূতির জায়গাটার প্রতি আমার শ্রদ্ধা এবং এজন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত। আপনাদের জায়গায় আমি থাকলে হয়তো এভাবে মনঃক্ষুণ্ন হতাম। আমি খুবই স্বল্প সময়ের জন্য মাগুরা-১ আসনের সংসদ সদস্য ছিলাম। আমার রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হওয়াটা ছিল মূলত আমার জন্মস্থান অর্থাৎ আমার মাগুরার মানুষের উন্নয়নের জন্য সুযোগ পাওয়া।

আপনারা জানেন যে, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নির্দিষ্ট কোন দায়িত্ব ছাড়া নিজের এলাকার উন্নয়নে সরাসরি ভূমিকা রাখাটা একটু কঠিন। আর আমার এই এলাকার উন্নয়ন করতে চাওয়া আমাকে সংসদ সদস্য হতে আগ্রহী করে। যাইহোক দিনশেষে আমার পরিচয় আমি একজন বাংলাদেশের ক্রিকেটার। আমি যখন যেখানে যে অবস্থাতেই থেকেছি অন্তর থেকে ক্রিকেটাকেই ধারণ করেছি।

এই ক্রিকেটকে ধারণ করে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের সম্মান অর্জন করার পথে এগিয়ে নিয়ে গেছেন আপনারা। আপনাদের ভালোবাসা এবং সমর্থন আমাকে আজকের সাকিব আল হাসান বানিয়েছে। আমি যখন দেশের জন্য ক্রিকেটের মাঠে ব্যাট ধরেছি তখন আমার সাথে ব্যাট ধরেছেন আপনারা সবাই। গ্যালারি থেকে আপনাদের চিৎকার, আপনাদের সমর্থন আমাকে ভালো খেলার অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে। ক্রিকেট ম্যাচের দিন চায়ের দোকানে টেলিভিশনের সামনে উপচেপড়া ভিড় আমাকে শক্তি যুগিয়েছে।

আমি জিতলে, আপনারা সবাই জিতেছেন। আমি হেরে গেলে, হেরে গেছেন আপনারা সবাই! আপনারা জানেন, খুব শীঘ্রই আমি আমার শেষ ম্যাচটি খেলতে যাচ্ছি। আমার ক্রিকেট ক্যারিয়ারের শুরু থেকে আজকের সাকিব আল হাসান হয়ে ওঠা পর্যন্ত এই পুরো জার্নিটাকে ড্রাইভ করেছেন আপনারা। এই ক্রিকেটের এই গোটা গল্পটা আপনাদের হাতেই লেখা! তাই আমার শেষ ম্যাচে, এই গল্পের শেষ অধ্যায়ে, আমি আপনাদেরকে পাশে চাই। আমি আপনাদের সবাইকে সাথে নিয়ে বিদায় নিতে চাই। বিদায়বেলায়, সেই মানুষগুলোর হাতে হাত রাখতে চাই, যাদের হাতের তালি আমার ভালো খেলতে বাধ্য করেছে। বিদায়বেলায়, সেই মানুষগুলোর চোখে চোখ রাখতে চাই, আমার ভালো খেলায় যাদের চোখ আনন্দে উচ্ছ্বসিত হয়েছে। আবার আমার খারাপ খেলায় যাদের চোখ ছলছল করেছে।

আমি আশা করি, শুধু আশা না বিশ্বাস করি, এই বিদায় বেলায় আপনারা সবাই আমার সাথে থাকবেন। সবাই সাথে থেকে সেই গল্পের ইতি টানবেন, যে গল্পের নায়ক আমি নই, আপনারা!

উল্লেখ্য, গত জুলাই-আগস্টে সংঘটিত বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে সরকার পতনের একদফা আন্দোলন; এসবে নীরব ভূমিকা পালন করেন সাকিব আল হাসান। যা নিয়ে সমর্থক মহলে বেশ ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।

সেই ক্ষোভের আরো বড় কারণ, চলতি বছরেই আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে তার সংসদ সদস্য হওয়া। যার জেরে সরকার পতনের পর ছাত্র আন্দোলন পোশাক শ্রমিক রুবেলকে হত্যার অভিযোগ এনে মামলা করা হয়।

যার কারণে তার দেশে আসা নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়। নিজের ক্যারিয়ারের শেষ টেস্ট ম্যাচটা ঘরের মাঠে খেলার ইচ্ছে প্রকাশ করলেও বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে এই মামলা। দেখা যাক সব কিছু সামলে সাকিব ফিরতে পারেন কিনা দেশে।


আরো সংবাদ



premium cement