০৪ অক্টোবর ২০২৪, ১৯ আশ্বিন ১৪৩১,
`

আইপিএল কিনতে মরিয়া সৌদি আরব! রাজি নয় ভারত!

আইপিএল কিনতে মরিয়া সৌদি আরব! রাজি নয় ভারত! - ছবি : সংগৃহীত

ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের রোজগারের একটা বড় অংশ আসে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ তথা আইপিএল থেকে। সেই টাকা কাজে লাগানো হয় ঘরোয়া ক্রিকেটে। ভারতের ক্রিকেটের পরিকাঠামো উন্নতির নেপথ্যে রয়েছে এই অর্থ। তাই ভারতের ‘ক্রোড়পতি লিগ’ আইপিএল এখন শুধুমাত্র বিনোদন নয়, দেশের ক্রিকেট চালানোর একটা মাধ্যমও বটে। সেই আইপিএলের দিকে নজর দিয়েছে সৌদি আরব। প্রতিযোগিতার মালিকানা কিনতে চায় তারা। কিন্তু আইপিএলে নিজেদের একচেটিয়া দখল ছাড়তে নারাজ ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড। এই কারণে গত সপ্তাহে বোর্ডের বৈঠকে একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন জয় শাহেরা।

বোর্ড ‘সোসাইটি’

রোববার বেঙ্গালুরুতে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের বার্ষিক সাধারণ সভা ছিল। সেখানেই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, বোর্ড ‘সোসাইটি’ হিসেবেই নথিভুক্ত থাকবে। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড কোনো সরকারি সংস্থা নয়। এটি একটি স্বশাসিত সংস্থা। বোর্ডের নিজস্ব সংবিধান রয়েছে। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের মালিকানা নির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তি বা সংস্থার হাতে নেই। সেটি চালানোর জন্য একটি সংগঠন (সোসাইটি) রয়েছে। অর্থাৎ বোর্ড ‘সোসাইটি’। বোর্ড যাতে ‘সোসাইটি’-ই থাকে, সে ব্যাপারে একমত হয়েছেন বোর্ডের কর্তারা। এক বোর্ড কর্তার বক্তব্য, "বোর্ডের সদস্যেরা একমত হয়েছেন যে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডকে ‘সোসাইটি’ হিসেবেই ধরা হবে। সদস্যেরা আরো একটি বিষয়ে একমত হয়েছেন যে আইপিএলসহ বোর্ডের কোনো প্রতিযোগিতাই বেসরকারি সংস্থার হাতে দেয়া হবে না।"


আগ্রহী সৌদি আরব

গত বছর থেকেই সৌদি আরব আইপিএলে আগ্রহ দেখাচ্ছে। প্রতি বছর আইপিএলের বাজার দর বাড়ছে। স্পনসরদের সংখ্যা বাড়ায় সম্প্রচার স্বত্ব ও অন্যান্য স্বত্ব থেকে আয় বেড়েছে বোর্ডের। সেই কারণেই বাজার দর বেড়েছে। এখন এই প্রতিযোগিতার বাজার দর ৮৪,০০০ কোটি ভারতীয় টাকা (ভারতীয় রুপি)। বেড়েছে আইপিএলের ব্র্যান্ড ভ্যালুও। ২০২২ সালে আইপিএলে ব্র্যান্ড ভ্যালু ছিল ১৫০৯০ কোটি টাকা। ২০২৩ সালে তা বেড়ে হয়েছে ২৬৮২৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ, এক বছরে অনেকটাই বেড়েছে প্রতিযোগিতার ব্র্যান্ড ভ্যালু। ২০২৪ সালেও তা বেড়েছে। চলতি বছরই আইপিএলের বড় নিলাম। তার আগে আইপিএলের ব্র্যান্ড ভ্যালু ২৮৫০৩ কোটি টাকা।

আইপিএলে খেলা দলগুলোরও ব্র্যান্ড ভ্যালু বেড়েছে। এই তালিকায় এক নম্বরে চেন্নাই সুপার কিংস। মহেন্দ্র সিংহ ধোনিদের দলের ব্র্যান্ড ভ্যালু ১৯৩৭ কোটি টাকা। দু’নম্বরে থাকা বিরাট কোহলিদের রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর ব্র্যান্ড ভ্যালু ১৯০৩ কোটি টাকা। তিন নম্বরে রয়েছে কলকাতা নাইট রাইডার্স। গত বারের চ্যাম্পিয়নদের ব্র্যান্ড ভ্যালু ১৮১১ কোটি টাকা। চার নম্বরে থাকা রোহিত শর্মাদের মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের ব্র্যান্ড ভ্যালু ১৭১০ কোটি টাকা। আইপিএলের বাকি দলগুলিও খুব পিছিয়ে নেই। পাঁচ থেকে ১০ নম্বর পর্যন্ত দলগুলির ব্র্যান্ড ভ্যালু যথাক্রমে, রাজস্থান রয়্যালস (১১১৫ কোটি টাকা), সানরাইজার্স হায়দরাবাদ (১১০৬ কোটি টাকা), দিল্লি ক্যাপিটালস (১০৯৮ কোটি টাকা), গুজরাত টাইটান্স (১০৪০ কোটি টাকা), পঞ্জাব কিংস (৮৪৭ কোটি টাকা) ও লখনউ সুপার জায়ান্টস (৭৬৩ কোটি টাকা)। এই বৃদ্ধি বিদেশী সংস্থাদের আকৃষ্ট করছে। তারা আরো বেশি করে আইপিএলে বিনিয়োগ করতে ছুটছে।

গত বছর নভেম্বর মাসে ব্লুমবার্গ একটি রিপোর্টে দাবি করেছিল, ২০২৫ সালে আইপিএলের বাজার দর বেড়ে হবে ২,৫২,০০০ কোটি টাকা। তার আগেই সৌদি আরবের সরকার এই প্রতিযোগিতায় টাকা ঢালতে চাইছে। গত বছর তারা ৪২,০০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে চেয়েছিল। তার বদলে প্রতিযোগিতার মালিকানার একটি অংশ নিজেদের হাতে রাখতে চেয়েছিল তারা। গত বছরই ভারতীয় বোর্ডের সাথে প্রাথমিক কথা বলেছিল সৌদি সরকার। তাদের প্রস্তাব ছিল, বিনিয়োগের পাশাপাশি এই প্রতিযোগিতাকে বিশ্বজুড়ে আরো ছড়িয়ে দেয়ার কাজও করবে তারা। কিন্তু ওই সময়ই নিজেদের মত পরিষ্কার করে দিয়েছিল রজার বিন্নী, জয় শাহদের নেতৃত্বাধীন বোর্ড। তার পরেও চেষ্টা চালাচ্ছে সৌদি। তারা যাতে কোনোভাবে ‘ক্রোড়পতি লিগে’ না ঢুকতে পারে সেই ব্যবস্থা করেছে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড।

এখন বিশ্বের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় বেসরকারি সংস্থার মালিকানা শুরু হয়েছে। সোমবারই ইংল্যান্ডের কাউন্টি ক্লাব হ্যাম্পশায়ারের ১০০ শতাংশ মালিকানা কিনে নিয়েছে বহুজাতিক সংস্থা জিএমআর গ্রুপ। ভারতীয় বোর্ড কর্তাদের একাংশের মতে, একবার বিদেশী বা বেসরকারি (বোর্ড ছাড়া অন্য সংস্থা) সংস্থার হাতে মালিকানা গেলে নানা রকম সমস্যা হতে পারে। সেই সংস্থা নিজের সুবিধা মতো নানা সিদ্ধান্ত নিতে চাপ বাড়াতে পারে। তাতে সমস্যায় পড়তে পারে বোর্ড। প্রতি বছর আইপিএলের হাত ধরে অনেক অনামী খেলোয়াড় উঠে আসেন। তাদের কেরিয়ার তৈরি হয়। তাতে সমস্যা হতে পারে। সর্বোপরি ভারতীয় ক্রিকেটের ক্ষতি হতে পারে। সেটাই চাইছে না বোর্ড। আইপিএলের মালিকানা পুরোটাই নিজেদের হাতে রাখতে চাইছে তারা।

বোর্ডের বার্ষিক সাধারণ সভায় থাকা এক কর্তা বলেন, 'যখনই বৈঠকে এই বিষয় নিয়ে আলোচনা হয় তখন সকলে একবাক্যে স্বীকার করে নেন, বোর্ডের দীর্ঘকালীন স্বার্থে এমন একটা সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত যাতে কোনোভাবেই আইপিএলের মালিকানা কোনো বেসরকারি সংস্থার হাতে না যায়।' আইনজীবী অরুণাভ ঘোষ ‘সোসাইটি’ হওয়ার সুবিধা ব্যাখ্যা করে আনন্দবাজার অনলাইনকে বললেন, 'নিজেরা সোসাইটির মধ্যে কী আইন করেছে সেটার উপর সবটা নির্ভর করছে। সোসাইটি যারা করেছে তাদের মধ্যে আইনটা আবদ্ধ থাকবে। তার বাইরে যাবে না। সোসাইটির লোকেরা রাজি হলে তবেই বাইরের কেউ ঢুকতে পারবে। না হলে হবে না।'

আইপিএলে বেসরকারি মালিকানার দরজা খোলা রেখেছে বোর্ড। তবে সেটা শুধুমাত্র দল কেনার ক্ষেত্রে। চেন্নাই, মুম্বই, কলকাতা, বেঙ্গালুরুসহ ১০টি দলেরই মালিকানা কোনো না কোনো সংস্থার হাতে। তারা কিভাবে প্রচার করবে, কিভাবে দল সাজাবে, কিভাবে স্পনসর নিয়ে আসবে সেই বিষয়ে নাক গলায় না বোর্ড। ঠিক তেমনই প্রতিযোগিতার সূচি, নিয়ম, নিলাম থেকে আয়োজন, পুরোটাই বোর্ডের হাতে থাকে। এই বিষয়ে বোর্ডের সাথে দলের মালিকদের বোঝাপড়া স্পষ্ট। কিন্তু বিদেশী কোনো সংস্থা এতে ঢুকে পড়লে সমস্যা হবে। বোর্ডের সেই কর্তা আরো বলেন, 'বাইরের কোনো সংস্থা আইপিএলে এলে বোর্ডের টাকা যে বাড়বে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু তাতে বোর্ডের কর্তৃত্ব চলে যাবে। বোর্ড সেটা চায় না। আগামী দিনেও যাতে কোনো সমস্যা না হয় তার জন্য আইন নিয়ে আসার কথা ভাবা হচ্ছে।'

বিশ্বে ক্রীড়াক্ষেত্রে ধীরে ধীরে নিজেদের প্রভাব বিস্তার করছে সৌদি আরব। ফুটবল, গল্‌ফ, বক্সিংয়ের মতো খেলায় তারা বিনিয়োগ করছে। ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো, নেইমার, করিম বেঞ্জেমার মতো তারকারা সৌদি প্রো লিগে খেলছেন। ২০৩৪ সালের ফুটবল বিশ্বকাপ আয়োজন করার দায়িত্ব পেয়েছে তারা। কিন্তু ক্রিকেটে এখন পর্যন্ত তাদের বিস্তার খুব বেশি হয়নি। একমাত্র সে দেশের সংস্থা ‘আরামকো’ বিশ্ব ক্রিকেটের নিয়ামক সংস্থা আইসিসির প্রতিযোগিতায় স্পনসর। ২০২৩ সালে আইপিএলের স্পনসরও হয়েছিল তারা। সঙ্গে ছিল সৌদির পর্যটন মন্ত্রণালয়। কিন্তু ২০২৪ সালে আর চুক্তি বৃদ্ধি করেনি তারা।

এই পরিস্থিতিতে কোনো সংস্থা নয়, বোর্ড একটি সংগঠন বা সোসাইটি হিসাবেই থাকতে চাইছে। ভবিষ্যতে যাতে আয়কর বা অন্য কোনো সমস্যা না হয় সেই বিষয়েও ভেবেছেন ভারতের কর্তারা। সেই কারণে আইন নিয়ে আসার ভাবনা চলছে। ১৯৭৫ সালের ‘তামিলনাড়ু সোসাইটিজ রেজিস্ট্রেশন আইন’-এর আওতায় রয়েছে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড। তারা কোনোভাবেই এই মালিকানায় বেসরকারি কোনো সংস্থাকে ঢুকতে দিতে চাইছে না। আইপিএলসহ ভারতের সব ধরনের ক্রিকেটের উপর থেকে দখল ছাড়তে নারাজ ভারতীয় বোর্ড।
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা

 


আরো সংবাদ



premium cement
ওয়াশিংটন-নিউইয়র্ক সফরে যাচ্ছেন পররাষ্ট্র সচিব যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী কমালা হ্যারিসকে নিয়ে ভারতে গর্ব থাকলেও উত্তেজনা নেই মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশী শ্রমবাজার যেভাবে চালু হয় টাঙ্গাইলে গভীর রাতে সড়কে ঝরলো ৪ প্রাণ কঙ্গোতে নৌ-দুর্ঘটনায় ৮৭ জনের মৃত্যু ন্যাটোর নতুন প্রধান ইউক্রেনের জন্য জোটের সমর্থনের প্রতিশ্রুতি দিলেন লেবাননের রাজধানীতে ইসরাইলের ব্যাপক বিমান হামলা, সীমান্তে লড়াই অব্যাহত আইপিএল কিনতে মরিয়া সৌদি আরব! রাজি নয় ভারত! ১৭ সৈন্য নিহত, অবিশ্বাস্য কঠিন পরিস্থিতিতে ইসরাইলি বাহিনী স্বাধীন ইচ্ছা বলে কিছুই নেই! মস্তিষ্কের অজানা দিকের খোঁজ বিজ্ঞানীদের বাংলাকে ধ্রুপদী ভাষার স্বীকৃতি ভারত সরকার

সকল