২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

মুরাদনগরে গোমতীর নদীর পানি কমার সাথে সাথে তীব্র হচ্ছে ভাঙ্গন

- ছবি : নয়া দিগন্ত

ভারতের উজান থেকে আসা গোমতীর পানি কমার সাথে সাথে নদীর তীরবর্তী কুমিল্লা জেলা মুরাদনগর উপজেলা সদরের চৌধুরীকান্দি ও দিলালপুর এলাকায় তীব্র আকারে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে কমপক্ষে ২০টি পরিবারের বসতভিটা নদীতে বিলীন হওয়া খবর পাওয়া গেছে। ভাঙ্গনের ঝুঁকিতে আছে অর্ধশতাধিক পরিবারসহ গোমতী নদীর বেড়িবাঁধ।

স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, এখনই ভাঙ্গন ঠেকাতে না পারলে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে কয়েকটি গ্রামসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা।

সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলা সদরের চৌধুরীকান্দি ও দিলাপুর এলাকায় নদীর তীরবর্তী ঘরবাড়ি ভেঙে নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এতে ভিটাবাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে আনোয়ার হোসেন, রিপন মিয়া, শহিদ মিয়া, রাজু মিয়া, সাজু মিয়া, আনিছ মিয়া, শরিফ মিয়া, শাহিনুর বেগম, সকিনা বেগম, হাছান মিয়া, নুরুল ইসলাম, নয়ন মিয়া, হক মিয়াসহ কমপক্ষে ২০টি পরিবার।

এছাড়াও নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে কবরস্থান, বৈদ্যুতিক খুঁটি, হাঁস-মুরগির খামার ও মাছের পুকুরসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। বর্তমানে নদীর তীরবর্তী আরো বেশ কয়েকটি পরিবার নদী ভাঙ্গনের আতঙ্কে খোলা আকাশের নিচে রাত জেগে পাহারা দিচ্ছে। অনেকেই বসতভিটা থেকে থাকার একমাত্র আশ্রয়স্থলটুকু ভেঙ্গে নিয়ে গেছে অন্যত্র। সর্বক্ষণ ভাঙ্গন আতঙ্কে, অনিদ্রা, অনাহারে প্রহর গুনছেন সহায়সম্বলহীন এই মানুষগুলো।

আনোয়ার হোসেন বলেন, গত ১০ বছরে আমাদের বসত-বাড়িসহ আশপাশের প্রায় দেড় শতাধিক বাড়িঘর গোমতী নদীর ভাঙ্গনের ফলে বিলীন হয়েছে। বাপ-দাদার ভিটেমাটির কোনো চিহ্নই এখন নেই। বর্তমানে যেখানে আছি সেটিও বিলীন হওয়ার পথে। পরিবার পরিজন নিয়ে খুব আতঙ্কে রয়েছি। সব সরকারের আমলেই আমরা এ বিষয়টি জানিয়েছি। জনপ্রতিনিধিরা এসে দেখে নদী ভাঙ্গন রোধের আশ্বাসও দিয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি।

চার ছেলের চার ঘরসহ নিজের ঘর হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যাওয়া সিএনজিচালক রিপন মিয়া কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, `আমার সব শেষ হইয়া গেছে। আমি বাচ্চা-কাচ্চা নিয়া এখন কই থাকমু। আমার থাকনের কোনো জায়গা নাই। সরকার যদি আমাগোরে থাকনের ব্যবস্থা করে না দেয় তাহলে মরন ছাড়া উপায় নাই।

মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো: সিফাত উদ্দিন বলেন, ইতোমধ্যে নদীর পাড়ের অধিক ঝুঁকিপূর্ণ জায়গাগুলো চিহ্নিত করে কুমিল্লা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তাদের কাছে একটি তালিকা পাঠানো হয়েছে। তাদের সহযোগিতা পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে নদী ভাঙ্গন রোধ করা সম্ভব হবে।

কুমিল্লা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী খান মোহাম্মদ ওয়ালিউজ্জামান বলেন, `গোমতীর পানি কমার সাথে সাথে যে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে ইতোমধ্যেই আমরা সেগুলোর একটা তালিকা করে তা উপরমহলে পাঠিয়েছি। নদী ভাঙ্গন রোদে আমাদের কোনো নিজস্ব বাজেট নেই, তাই আমরা নিজে থেকে কিছু করতে পারছি না।‘


আরো সংবাদ



premium cement