১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

রেমাল কখন আঘাত হানবে জানালো অফিস

রেমাল কখন আঘাত হানবে জানালো অফিস - সংগৃহীত

বাংলাদেশের আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড় রেমাল রোববার সন্ধ্যার পর থেকে মধ্যরাত নাগাদ সময়ের মধ্যে বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রম করতে পারে। সে কারণে পায়রা ও মোংলায় ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

‘ঘূর্ণিঝড়ের অগ্রভাগের প্রভাবে আজ বিকেল ৩টা থেকে চৌদ্দটি জেলায় ভারী বৃষ্টিপাতসহ দমকা থেকে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাবে। এটি যতই উপকূলের দিকে আসবে ততই দমকা হাওয়া ও বৃষ্টিপাত ক্রমান্বয়ে বেড়ে যাবে,’ ঢাকায় একটি সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদফতরের পরিচালক আজিজুর রহমান।

তিনি জানান, ঘূর্ণিঝড়টি সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাত নাগাদ সময়ে মোংলার কাছ দিয়ে পটুয়াখালীর খেপুপাড়া উপকূল অতিক্রম করতে পারে।

আবহাওয়া অফিসের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৬৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৯০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১২০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।

এছাড়া প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর বিক্ষুদ্ধ রয়েছে।

রিমাল-এর গতিবেগ সম্বন্ধে রহমান ব্রিফিংয়ে বলেছেন যে- এটি অত্যন্ত ভয়াবহ হতেও পারে।

বাংলাদেশের আবহাওয়াজনিত সতর্ক সংকেতের মাপকাঠিতে এটাই সর্বোচ্চ সংকেত।

১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত মানে হলো ঘূর্ণিঝড় উপকূল অতিক্রমকালে বন্দর ঝড়ের তীব্রতার কবলে পড়তে পারে। বন্দরের উপর দিয়ে বা পাশ দিয়েই ঝড় উপকূল অতিক্রম করবে।

এরপরে রয়েছে ১১ নম্বর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন সংকেত, যার মানে আবহাওয়ার বিপদ সংকেত প্রদানকারী কর্তৃপক্ষের সাথে সকল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে এবং স্থানীয় আবহাওয়া কর্মকর্তা পরিস্থিতি দুর্যোগপূর্ণ বলে মনে করেন।

রেমাল একটি আরবি শব্দ, যার অর্থ- বালি। এটি ওমানের দেয়া নাম।

তবে, রেমাল নামে আফগানিস্তানে একটি শহর আছে। সেই শহরের নামানুসারেই এটির নামকরণ করা হয়েছে বলে এর আগে বিবিসিকে জানিয়েছিলেন আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক।

আবহাওয়া অফিসের বলছে, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সমুদ্র খুবই উত্তাল রয়েছে। ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার এবং অদূরবর্তীদ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে তিন থেকে পাঁচ ফুটের বেশি জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।

ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা বরিশাল, চট্টগ্রামে দমকা ও ঝড়ো হাওয়াসহ ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে।

উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয় বলেছে আবহাওয়া অফিস।

বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্য পরিসংখ্যান বলছে, বাংলাদেশে আঘাত হানা সর্বশেষ সুপার সাইক্লোন ছিল ২০০৭ সালের সিডর (চোখ)। এটির গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ২২৩ কিলোমিটার। তখন ১৫-২০ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস সৃষ্টি হয়েছিল।

যেসব ধাপ পার হয়ে ঘূর্ণিঝড় হয়
ঘূর্ণিঝড় হলো সমুদ্রে সৃষ্ট বৃষ্টি, বজ্র ও প্রচণ্ড ঘূর্ণি বাতাস সংবলিত আবহাওয়ার একটি নিম্নচাপ প্রক্রিয়া।

আবহাওয়াবিদরা বলছেন, ঘূর্ণিঝড় হতে হলে প্রথমে সাগরে লঘুচাপ তৈরি হয়। প্রতি ঘণ্টায় বাতাসের গতিবেগ যখন ১৭ কিলোমিটার থাকে এবং বায়ুর চাপ কম থাকে তখন একে লঘুচাপ বলা হয়।

বাতাসে যদি ঘূর্ণন তৈরি হয়, অর্থাৎ ঘূর্ণিবায়ুর আবর্তন তৈরি হলে সেখানে বায়ুর চাপ কমে যায়। কারণ আশপাশে থেকে জলীয় বাষ্প আসে। জলীয় বাষ্প এলে বায়ুর চাপ কমে যায়।

এরপরের ধাপে রয়েছে সুস্পষ্ট লঘুচাপ।

এর আগে আবহাওয়াবিদ মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘লঘুচাপ শক্তির মাত্রা অর্জন করে ৩১ থেকে ৪০ কি.মি. প্রতি ঘণ্টায় বাতাসের বেগ থাকলে একে সুস্পষ্ট লঘুচাপ বলা হয়। অর্থাৎ লঘুচাপ আরো শক্তিমাত্রা অর্জন করে সুস্পষ্ট লঘুচাপে রূপ নেয়।’

তৃতীয় ধাপে রয়েছে সাগরে নিম্নচাপ তৈরি হওয়া।

মল্লিক বলেন, ‘সুস্পষ্ট লঘুচাপ আরো শক্তিমাত্রা অর্জন করে তৈরি হয় নিম্নচাপ। এরপর নিম্নচাপ আরো শক্তিমাত্রা অর্জন করে তৈরি হয় গভীর নিম্নচাপ’।

পরে এটা সাইক্লোন বা ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেয়। তবে এই আবহাওয়াবিদ বলছেন, ঘূর্ণিঝড়ের প্রাথমিক ধাপই হচ্ছে সাগরে নিম্নচাপ তৈরি হওয়া।
সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement