বাংলাদেশে বেশি শীত পড়ার যত রেকর্ড
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ২৪ জানুয়ারি ২০২৪, ২১:৩৫
গত কয়েকদিন ধরেই দেশের বেশ কয়েকটি জেলায় তীব্র শৈত্যপ্রবাহ চলছে। ঘন কুয়াশার কারণের অনেক এলাকায় সূর্যের মুখ পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে না। এর মধ্যেই বইছে হিমশীতল বাতাস। এতে সারাদেশেই জনজীবন বেশ বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
কিন্তু এই পরিস্থিতি আর কত দিন চলবে? এবছর শীতই-বা থাকবে কত দিন? এমন সব প্রশ্নই এখন ঘুরছে শীতে কাবু সাধারণ মানুষের মুখে মুখে।
আবহাওয়া অধিদফতর বলছে, এ দফায় সারাদেশে যে শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়েছে, সেটি আরো অন্তত দু’দিন স্থায়ী হতে পারে।
এই সময়ের মধ্যে ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের কোথাও কোথাও হালকা বা গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিও হতে পারে।
জানুয়ারির শেষ থেকে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহের মধ্যে সারাদেশে আরো একটি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে বলেও পূর্বাভাস দিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা।
এছাড়া গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার শীত একটু বেশি সময় স্থায়ী হতে পারে বলেও জানিয়েছেন তারা। এবছর জানুয়ারির শুরু থেকেই সারাদেশে শীতের তীব্রতা বেশ বেড়েছে। বেশ কিছু জেলায় শৈত্যপ্রবাহও বয়ে যেতে দেখা যাচ্ছে।
এর মধ্যে বছরের প্রথম শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয় জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে, যা শুরুতে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের কয়েকটি জেলার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল।
কিন্তু তৃতীয় সপ্তাহ থেকে শৈত্যপ্রবাহ অন্যান্য জেলাতেও ছড়িয়ে পড়ে।
বুধবার পর্যন্ত সারাদেশের ২১টি জেলার ওপর দিয়ে শৈত্যপ্রবাহ বয়ে গেছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। তবে শীতের প্রকোপ সারাদেশেই টের পাওয়া যাচ্ছে।
মঙ্গলবার চলতি মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে যাওয়ায় খুলনা, ঠাকুরগাঁও, রংপুরসহ বেশ কয়েকটি জেলায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
এছাড়া হাসপাতাল গুলোতেও ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্তদের ভিড় বাড়তে দেখা যাচ্ছে।
আবহাওয়ার পূর্বাভাস
বুধবার থেকে সারাদেশেই তাপমাত্রা আগের কয়েক দিনের তুলনায় কিছুটা বেড়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতর।
এর ফলে শীতের প্রকোপ কিছুটা কমে আসতে পারে বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে।
তবে আগামী তিন দিন দেশের বেশিরভাগ অঞ্চলে আগের মতোই ঘন কুয়াশা দেখা যাবে।
এক্ষেত্রে মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা থাকতে পারে। কোথাও কোথাও দুপুর পর্যন্ত কুয়াশার দাপট দেখা যেতে পারে।
এ কারণে সারাদেশেই বিমান চলাচল, অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন এবং সড়ক যোগাযোগে বেশ বিঘ্ন ঘটতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর।
আগামী ৭২ ঘণ্টায় ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের কয়েক জায়গায় হালকা বা গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে।
পাশাপাশি রাজশাহী, রংপুর, ময়সনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও আকাশ আংশিক মেঘলা থাকতে পারে। এছাড়া রাতের তাপমাত্রা কিছুটা বাড়তে পারে বলে জানানো হয়েছে।
বুধবার ভোর ৬টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে তেঁতুলিয়ায় আট দশমিক চার দ
ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময়ে ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১২ দশমিক চার ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল কক্সবাজারের টেকনাফে ২৭ দশমিক পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
মৌসুমের শীতলতম দিন
২৩ জানুয়ারি অর্থাৎ গত মঙ্গলবার চুয়াডাঙ্গায় মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এদিন সেখানে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ছয় দশমিক ছয় ডিগ্রি সেলসিয়াস। এখন পর্যন্ত এটিই চলতি মৌসুমের শীতলতম দিন।
এদিন ঢাকাতেও বছরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। মঙ্গলবার ঢাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে এটিই সাম্প্রতিককালে ঢাকার রেকর্ড সর্বনিম্ন তাপমাত্রা নয়।
আবহাওয়া অধিদফতরের হিসাবে দেখা যাচ্ছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে ঢাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ২০১৩ সালে।
ওই বছর শীতে রাজধানীর তাপমাত্রা নেমে এসেছিল সাত দশমিক দুই ডিগ্রি সেলসিয়াসে।
এরপর দ্বিতীয় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ২০১৮ সালের ৮ জানুয়ারি। তখন তাপমাত্রা নেমেছিল নয় দশমিক পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।
আর ২০২৩ সালের শীতে ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ১১ দশমিক পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
চার বিভাগে শৈত্যপ্রবাহ
বর্তমানে ঢাকা, খুলনা, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের প্রায় সবগুলো জেলাতে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ চলছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর।
এছাড়া বরিশাল, ভোলা, মৌলভীবাজার এবং কুমিল্লা জেলার ওপর দিয়েও মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে দেখা যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন তারা।
এর আগে, গত সপ্তাহে সারাদেশের প্রায় এক তৃতীয়াংশ জেলায় মৃদু থেকে মাঝারি আকারের শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়।
বুধবার কয়েক জায়গায় তাপমাত্রা বাড়লেও মৃদু শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত আছে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়া অধিদফতরের আবহাওয়াবিদ খন্দকার হাফিজুর রহমান।
এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে শৈত্যপ্রবাহ চলছে কিশোরগঞ্জ, টাঙ্গাইল ও মাদারীপুরে।
এছাড়া খুলনা বিভাগে যশোর, কুষ্টিয়া ও চুয়াডাঙ্গা এবং রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের প্রায় সবগুলো জেলার ওপর দিয়ে শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে।
এসব জেলার অনেক জায়গায় দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে যাওয়ার পরেও সূর্যের কিরণ দেখা যাচ্ছে না।
খন্দকার হাফিজুর রহমান বলেন, ‘আরো অন্তত দু’দিন এই অবস্থা চলবে। তবে তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পাওয়ায় শীত কিছুটা কম অনুভূত হবে।’
মঙ্গলবারও সারাদেশে তাপমাত্রা কম থাকলেও বুধবার থেকে সেটি এক থেকে তিন ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বেড়েছে বলেও জানান তিনি।
আরো একটি শৈত্যপ্রবাহ
এদিকে একটি শৈত্যপ্রবাহ শেষ হতে না হতেই আরো একটি শৈত্যপ্রবাহের আভাস দিচ্ছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতর।
চলতি মাসের শেষে বা আগামী মাসের শুরুর দিকে শৈত্যপ্রবাহটি আসতে পারে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদ খন্দকার হাফিজুর রহমান।
তিনি বলেন, ‘জানুয়ারির শেষ বা ফেব্রুয়ারির শুরুতে এটি বয়ে যেতে পারে। এটি এখনকার মতোই মৃদু থেকে মাঝারি আকারের হতে পারে।’
তাপমাত্রা আট থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে সেটিকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়।
এছাড়া ছয় থেকে আট ডিগ্রি সেলসিয়াসে নামলে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ এবং চার থেকে ছয় ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে সেটিকে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়।
আর তাপমাত্রা চার ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে গেলে হয় অতি তীব্র শৈত্যপ্রবাহ।
এবছর এখন পর্যন্ত কেবল চুয়াডাঙ্গা জেলায় তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে দেখা গেছে। তবে শীতের তীব্রতা সারাদেশেই অনুভূত হয়েছে।
আরেক আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক, ‘এবার কুয়াশা তৈরির প্রবণতা একটু বেশি দেখা যাচ্ছে।’
তিনি আরো বলেন, স্বাভাবিক সময়ে সূর্যের কিরণকাল আট থেকে ১২ ঘণ্টা হলেও এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে তিন থেকে চার ঘণ্টায়।
এতে ভূপৃষ্ঠ উত্তপ্ত হতে না পারায় দিনের ও রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য অনেকটাই কমে গেছে। ফলে শীতও বেশি অনুভূত হচ্ছে।
পুরো জানুয়ারি মাস জুড়েই শীতের এমন অনুভূতি থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন তিনি।
তবে শীত অনুভূত হতে পারে ফেব্রুয়ারির শেষ পর্যন্ত।
আবহাওয়াবিদ খন্দকার হাফিজুর রহমান বলেন, ‘পরের শৈত্যপ্রবাহটি শেষ হলে ফেব্রুয়ারিতে তাপমাত্রা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকবে। তখন শীতও কম অনুভূত হবে।’
অতীতের যত রেকর্ড
আবহাওয়া অধিদফতরের হিসাব বলছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি শীত পড়েছে ২০১৮ সালে।
ওই বছরের ৮ জানুয়ারি পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় তাপমাত্রা নেমেছিল দুই দশমিক ছয় ডিগ্রি সেলসিয়াসে, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বনিম্ন তাপমাত্রার রেকর্ড।
একই দিনে, সৈয়দপুরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় দুই দশমিক নয় ডিগ্রি। এছাড়া নীলফামারীর ডিমলায় তিন ডিগ্রি, কুড়িগ্রামের রাজারহাটে তিন দশমিক এক ডিগ্রি এবং দিনাজপুরে তিন দশমিক দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়।
এছাড়া ওই দিন রংপুর বিভাগের আট জেলার সবকটিতেই সর্বনিম্ন তাপমাত্রা পাঁচ ডিগ্রির কম ছিল বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর।
ওই বছর দফায় দফায় তীব্র শৈত্যপ্রবাহও বয়ে যেতে দেখা গিয়েছিল।
এছাড়া ২০১৩ সালে ১০ জানুয়ারি সৈয়দপুরে তিন ডিগ্রি, ২০০৩ সালের ৯ জানুয়ারি রাজশাহীতে তিন দশমিক চার ডিগ্রি এবং ১৯৯৬ সালে দিনাজপুরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা তিন দশমিক আট ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয় বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর।
এর বাইরে, ২০১৯ সালে তেঁতুলিয়ায় চার দশমিক নয় ডিগ্রি, ২০১১ সালের ১২ জানুয়ারি যশোরে চার দশমিক পাঁচ ডিগ্রি এবং ২০১৭ সালে কুড়িগ্রামে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়।
সূত্র : বিবিসি
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা