১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১, ১৫ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

অন্ধ কল্যাণ সমিতির ভবন নির্মাণের নামে ১০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ

-


বাংলাদেশ জাতীয় অন্ধ কল্যাণ সমিতির (বিএনএসবি) ভবন নির্মাণের নামে প্রায় ১০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সমিতির নানা অনিয়ম, দুর্নীতির বিষয়ে সমাজসেবা অধিদফতরের গঠিত তদন্ত কমিটির অনুসন্ধানে ধরা পড়েছে এই জালিয়াতি।
সমিতির অনিয়ম নিয়ে তদন্ত চালিয়ে গত ফেব্রুয়ারি মাসে সংশ্লিষ্ট পরিচালকের কাছে একটি প্রতিবেদন দাখিল করেন সমাজসেবা অফিসার সাব্বির হোসেন। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, অনুমোদনহীন কমিটির মাধ্যমে যুগ যুগ পরিচালিত হচ্ছে সংস্থাটির কার্যক্রম, যা প্রচলিত আইন ও বিধিবহির্ভূত। নিবন্ধন কর্তৃপক্ষও সংস্থাটিকে পরিবীক্ষণ ও মনিটরিংয়ের আওতায় আনেনি। বিএনএসবি পরিচালনা পরিষদে সুশাসনের অভাব আছে। তাই সংস্থাটিকে আইনের আওতায় আনা প্রয়োজন। কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনতে অবিলম্বে সংস্থাটিতে একজন প্রশাসক নিয়োগ অথবা অনধিক পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট তত্ত্বাবধায়ক বডি নিয়োগ দেয়া যেতে পারে বলেও প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হয়। কিন্তু ছয় মাসের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও কোনো সুপারিশ বাস্তবায়ন হয়নি।

এ বিষয় জানতে চাইলে সমাজসেবা অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. আবু সালেহ্ মোস্তফা কামাল বলেন, জাতীয় অন্ধ কল্যাণ সমিতি নিয়ে একটি তদন্ত হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সেখানে প্রশাসক নিয়োগের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ১৯৭৩ সাল থেকে এখন পর্যন্ত নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অনুমোদিত কোনো নির্বাহী কমিটি নেই সংস্থাটির। তদন্তের অংশ হিসেবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এ সংক্রান্ত তালিকা চান কার্যনির্বাহী কমিটির কাছে। এ সংক্রান্ত তালিকা সরবরাহ করতে ১০ দিন সময় চায় কার্যনির্বাহী পরিষদ। ওই সময় পেরিয়ে গেলেও অনুমোদিত কোনো কমিটির তালিকা দেখাতে পারেননি সংস্থার বর্তমান কর্ণধাররা।
এ বিষয়ে নিবন্ধনকারী কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করা হলে জানা যায়, সেখানে সংরক্ষিত সংস্থার নথিতে এ ধরনের কোনো ডকুমেন্ট নেই। একই অবস্থা গঠনতন্ত্রের ক্ষেত্রেও। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত সংস্থাটির কোনো অনুমোদিত গঠনতন্ত্র পাওয়া যায়নি।
বিএনএসবির আজীবন সদস্য আইউব আলী হাওলাদার জানান, সংস্থার নামে ১৯৯৮ সালে সরকার এক একর জমি বরাদ্দ করেছিল। বরাদ্দপত্র অনুযায়ী অন্ধদের জন্য প্রকল্প গ্রহণ করে ওই জমিতে বাস্তবায়নের কথা। কিন্তু তা না করে বিলাসবহুল বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ করে সেখান থেকে প্রায় ১০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। এ সংক্রান্ত এক তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, সংস্থাটির তৃতীয় তলাবিশিষ্ট একটি চক্ষু হাসপাতাল, ২০টি দোকান এবং ৯ তলা ও ১২ তলাবিশিষ্ট দু’টি বাণিজ্যিক ভবন রয়েছে।

বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে ডেভেলপার কোম্পানির সাথে যে চুক্তি করা হয়, সেখানে অস্বচ্ছতা রয়েছে। তাছাড়া যে কমিটির সাথে বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণে ডেভেলপার কোম্পানির সাথে চুক্তি হয়, সেই কমিটি সমাজসেবা অধিদফতর বা নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অনুমোদিত না। তাই এ সংক্রান্ত গৃহীত সিদ্ধান্তটি আইনগতভাবে অবৈধ। এ ছাড়া সংস্থাটির নামে একটি হাসপাতাল ছিল। এর নাম বিএনএসবি চক্ষু হাসপাতাল। কিন্তু ক্ষমতার অপব্যবহার করে হাসপাতালটি করা হয় ব্যক্তির নামে।
এ বিষয়ে সমাজসেবা অফিসার সাব্বির হোসেন বলেন, ব্যক্তির নামে সংস্থার সম্পত্তির নামকরণের আইনগত কোনো সুযোগ নেই। এছাড়া এ সংক্রান্ত সিদ্ধান্তটি ছিল অবৈধ। অযোগ্য কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগের বিষয়ে তার বক্তব্য-কোনো সংস্থার আয়-ব্যয়ের নিজস্ব নিয়মকানুন আছে। কিন্তু বিএনএসবির গঠনতন্ত্র এবং অনুমোদিত কমিটি না থাকায় বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ।

 


আরো সংবাদ



premium cement