১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১, ১৫ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`
গাজীপুর পৌর ভূমি অফিসে জালিয়াত চক্রের কাণ্ড

রেকর্ডে জমি ১৮০ শতাংশ খারিজ হয়েছে ৩০০ শতাংশ!

-

গাজীপুর মহানগরীর দাক্ষিণখান মৌজায় আরএস ১৫৬ নম্বর খতিয়ানের ৩৬১ নম্বর দাগে রেকর্ড অনুযায়ী জমি আছে ১৮০ শতাংশ। সংশ্লিষ্ট ভূমি অফিসের একশ্রেণীর দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা জালিয়াত চক্রের সাথে যোগসাজশ করে উল্লিখিত দাগ থেকে পৃথক ৮টি জোতে খারিজ দিয়েছেন ২০০ সাড়ে ৯৯ শতাংশ। দাগটির মোট জমি থেকে অতিরিক্ত খারিজ দেয়া হয়েছে এক একর সাড়ে ১৯ শতাংশ। আলোচিত ৮টি জোতই এখনো বহাল আছে।
গাজীপুর পৌর ভূমি অফিস সূত্র জানায়, বিগত ২০০৫ সালের ১৬ অক্টোবর আলোচিত ৩৬১ নম্বর আরএস দাগ থেকে সৃষ্ট ৫ম জোতে (নং-১২২৪) সাড়ে ১৬ শতাংশ জমি খারিজ হওয়ার পর ওই দাগে রেকর্ডীয় মালিকদের জমি বিক্রি বা হস্তান্তরের বাকি ছিল মাত্র সাড়ে ২১ শতাংশ। কিন্তু ২০০৬ সালের ২৫ মার্চ অনুমোদন দেয়া ওই দাগের ষষ্ঠ জোতে (নং-১৩১০) খারিজ দেয়া হয়েছে ২৪ শতাংশ জমি। এখানে মোট ব্যালেন্স অতিক্রম করে অতিরিক্ত আড়াই শতাংশ জমি খারিজ দেয়া হয়েছে। ওই দাগে আর জমি অবশিষ্ট না থাকা সত্ত্বেও পরবর্তীতে আরো দু’টি জোত খুলা হয়। তার মধ্যে ৭ম জোতে (নং-১৩১৬) ৩৩ শতাংশ এবং সর্বশেষ ২০২২ সালের ২৮ এপ্রিল অনুমোদন দেয়া ৮ম জোতে (নং-৪৯০২) খারিজ দেয়া হয়েছে ৮৪ শতাংশ জমি।
অস্তিত্বহীনভাবে সর্বশেষ জোতটি (নং-৪৯০২) খোলার পেছনে জিএমপির সদ্য বিদায়ী পুলিশ কমিশনার মাহবুব আলম জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ইতঃপূর্বে তিনি বিতর্কিত ওই খারিজমূলে থানা পুলিশ দিয়ে জমি জবরদখলও করেছেন। জালিয়াত ও জবরদখল কাজে বেনজীর নামে পুলিশের এক সোর্সকে ব্যবহার করতেন। ওই সোর্সের নামে বায়না দেখিয়ে জমিতে দখল প্রমাণের জন্য বৈধ মালিকের বাউন্ডারি ভেঙে সেখানে জোরপূর্বক সাইনবোর্ড ও ছাপড়া ঘরও উঠিয়েছেন। এর আগে জমির মালিককে একাধিক মিথ্যা মামলায় জেলে ঢুকিয়ে দখল নির্বিঘœ করেছেন। এ ব্যাপারে বিদায়ী পুলিশ কমিশনার মাহবুব আলম এবং সদর থানার সাবেক ওসি জিয়াউল ইসলাম ও রাফিউল করীমের বিরুদ্ধে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কাছে অভিযোগও করেছেন ভুক্তভোগী জমির মালিকরা।

ভুক্তভোগী মনিরউজ্জামান মনির বলেন, আমি দীর্ঘ দিন ধরে লন্ডনে থাকি। সে দেশে অবস্থানকালেই জমিটি দখলের জন্য আমাকেসহ আমার স্বজনদের বিরুদ্ধে জিএমপি সদর থানায় দু’টি মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে। আমার বড় ভাই কলেজ শিক্ষককে মিথ্যা চাঁদাবাজির মামলায় জেলে রেখে পুলিশ প্রহরায় আমাদের বাউন্ডারি ভেঙে দেয়া হয়েছে। অথচ ক্রয়সূত্রে দীর্ঘ প্রায় ৩০ বছর ধরে আমরা শান্তিপূর্ণভাবে ওই জমি ভোগদখল করছি। ডাবল রেললাইন নির্মাণের কাজে নিয়োজিত বিদেশী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে জমির একটি অংশ ভাড়াও দিয়েছি। সাবেক পুলিশ কমিশনার মাহবুব আলম ওই ঠিকাদারি অফিসে থানার ওসিকে পাঠিয়ে আমাদেরকে ভাড়া দিতেও নিষেধ করেছেন। এমনকি পুলিশ কমিশনার আমাদেরকে তার অফিসে ডেকে নিয়ে জমিটি ছেড়ে দিতে একাধিকবার হুমকি দিয়েছেন। সম্প্রতি গাজীপুর থেকে বদলি হয়ে যাওয়ার পরও তিনি পুলিশের সোর্স বেনজীরকে দিয়ে আমাদের পাশের ৩৬০ নম্বর দাগের জমিও দখলের চেষ্টা চালাচ্ছেন। এই দাগের বৈধ জোত বাতিলের জন্য মালিকানাবিহীন ব্যক্তিকে দিয়ে উপজেলা ভূমি অফিসে মিস কেসও দিয়ে গেছেন বিদায়ী পুলিশ কমিশনার। তার অনুগত সহকারী কমিশনার (ভূমি) রোকসানা খাইরুন নেছাও জালিয়াত চক্রের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।
এ দিকে এ ব্যাপারে গাজীপুর পৌর ভূমি অফিসের ভূমি সহকারী কর্মকর্তা জসিম উদ্দিন পালোয়ান বলেন, ভুল্লখিত জোতগুলো আমার সময়ে খোলা হয়নি। পূর্ববর্তীরা কিভাবে এগুলো খুলেছেন তারাই ভালো বলতে পারবেন।
আর সহকারী কমিশনার (ভূমি) রোকসানা খাইরুন নেছার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।

 

 


আরো সংবাদ



premium cement