১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৩ আশ্বিন ১৪৩১, ১৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`
১ মাসে পর্যটক বেড়েছে ২০ শতাংশ

ভীতি কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াল পর্যটন খাত

-


সব ভীতি কাটিয়ে অনেকটা ঘুরে দাড়াল পর্যটন খাত। হাসিনা সরকারের পতনের পর গত এক মাসে পর্যটক বেড়েছে প্রায় ২০ শতাংশ। সে সাথে আয়ও বাড়তে শুরু করেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাজনৈতিক অস্থিরতা, আর্থিক সঙ্কট, ভিসা জটিলাতায় বিদেশী পর্যটকদের অনাগ্রহ, অবেধ পথে বিদেশী কোম্পানির মাধ্যমে বেহাত টাকা বিদেশে নিয়ে যাওয়া, কর্মহীনতা সৃষ্টির শঙ্কা ও জিডিপিতে পিছিয়ে পড়ার কারণে এতদিন এ খাত অনেকটা আইসিইউতে ছিল। কিন্তু রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা পরিবর্তনের পর থেকেই সবার মধ্যে আশা সঞ্চার হয়েছে। ফলে গত এক মাসে যে হারে পর্যটক বেড়েছে তাতে ভালোভাবে ঘুরে দাঁড়াতে খুব বেশি সময় লাগবে না।

টুরিজম বোর্ডের একজন কর্মকর্তার ভাষ্য, নানান অনিশ্চয়তায় এতদিন অন্ধকারে আটকা পড়েছিল এর উন্নয়ন। পদে পদে অব্যবস্থাপনা ও সমন্বয়হীনতা, অধিকাংশ পর্যটন স্পটে নিরাপত্তার ঘাটতি, যোগাযোগ ব্যবস্থার দুর্বলতা, মূল্যস্ফীতির চাপ, গরম আবহাওয়া, উড়োজাহাজের চড়া ভাড়া এসব নিয়ে পর্যটকদের মধ্যে আতঙ্ক ছিল। ফলে ভরা মৌসুমেও দেশের পর্যটন এলাকায় অধিকাংশ হোটেল, রিসোর্ট ফাঁকা থাকত। মানুষের মধ্যে নিজের দেশে কম খরছে ঘুরতে যাওয়ার চেয়ে বিদেশে যাওয়ার আগ্রহ ছিল বেশি। ফলে দিন দিন পর্যটক কমার সাথে আয় কমছে। কিন্তু বর্তমান সময়ে সংশ্লিষ্টরা এর সমাধানে উদ্যোগ নিয়েছেন। এর সমাপ্ত হলে পর্যটকরা নতুন এক বাংলাদেশ দেখবে।
অন্যদিকে ট্যুরিজম অপারেটদের সংগঠন ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (টোয়াব)-এর সাবেক একজন নেতা জানান, বিগত সময়ে এবং বর্তমানে হোটেল মোটেল কিংবা ভ্রমণ টিকিট বুকিংয়েও অসচ্ছতায় বিদেশী বিভিন্ন বুকিং সাইটের মাধ্যমেই দেশের কোটি কোটি টাকা অবৈধ পথে বিদেশে যাচ্ছে। ফলে জিডিপিতে অন্যান্য দেশের চেয়েও দেশ অনেক পিছিয়েছে। কিন্তু এখন ব্যবসায়ীরা এসবের সমাধানে আশাবাদী হওয়াতে নতুন করে সবাই আবার ব্যবসায় সম্পৃক্ত হচ্ছেন।

তাদের ভাষ্য, প্রায় একযুগ আগেও এ খাত রমরমা ছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর রাজনৈতিক নানান সঙ্কটে অর্থনীতিতে কিছুটা অস্থিরতা তৈরি হয়। এরপর ১৯ সালে করোনা মহামারীতে সঙ্কটে পড়ে পুরো বিশ্ব। যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয় বাংলাদেশ। টানা তিন বছর চলা মহামারীতে ক্ষতিগ্রস্ত পর্যটন খাত একেবারে খাদের কিনারে গিয়ে আটকা পড়ে। এরপর করোনা মহামারী আতঙ্ক কাটিয়ে তা ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলে রাজনৈতিক অস্থিরতায় আবার সঙ্কটে পড়ে। এভাবে একের পর এক হোঁচট খেতে খেতে অনিশ্চয়তায় পড়ে সমৃদ্ধ এ খাত। এর মধ্যে চলতি বছর ছাত্র আন্দোলনে স্বৈরাচার হাসিনার পতনের পর দেশে নতুন সরকার আসে। এরপর থেকেই মানুষের মধ্যে থাকা অনিশ্চয়তা কাটতে থাকে। যার বড় ইতিবাচক প্রভাব পড়ে পর্যটন খাতে।

এ বিষয়ে সংগঠনের (টোয়াব) সচিব নিজাম উদ্দিন গতকাল নয়া দিগন্তকে বলেন, বিগত সময়ে নানান অস্থিরতায় মানুষের মধ্যে অতঙ্ক ছিল। নতুন সরকার আসার পর মানুষের মধ্যে সে আতঙ্ক কেটেছে। ফলে গত এক মাসে প্রায় ২০ শতাংশ অভ্যন্তরীণ পর্যটক বেড়েছে। তবে বিদেশী পর্যটক না এলে কাক্সিক্ষত লক্ষ পূরণ হবে না জানিয়ে তিনি বলেন, যেহেতু বাংলাদেশ এখনো অনেক দেশের লাল তালিকায় রয়েছে তাই পর্যটক আসছেন না। তাছাড়া ভিসা জটিলতায়ও পর্যটক প্রতিকূলতায় রয়েছেন। সব মিলিয়ে বিদেশেী পর্যটকদের জন্য আমরা এখানো অনেক পিছিয়ে। তার সমাধানে এখন কাজ করতে হবে। তাই তারা এর উন্নয়নে ক্যাম্পিংসহ কিছু কার্যক্রম হাতে নিয়েছেন। এসবের সমাধান হলে পুরোপুরি তারা ঘুরে দাঁড়াবেন বলে প্রত্যাশা করছেন।

ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আবু তাহির মোহাম্মদ জাবের জানান, ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশে ৫৫ লাখ ট্যুরিস্ট আনার লক্ষ্যমাত্র নিয়ে তারা এখন কাজ করছেন। বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন ও ট্যুরিজম বোর্ডের অধীনে এর কার্যক্রম চলমান রয়েছে। বিদেশী পর্যটক বাড়লেও আশানুরোপ না মন্তব্য করে তিনি বলেন, এখন পর্যটনকে অগ্রাধিকারের জায়গায় নিতে হবে। স্পটে যাওয়ার জন্য রাস্তা, যানবাহন, বিশ্রাম, বিনোদন, টয়লেট, খাবারের মান ও মূল্য, থাকার জায়গা এসব উন্নত করতে হবে। তাই আপাতত পাঁচটি ট্যুরিজম স্পটকে আন্তর্জাতিক মানের করতে কাজ চলছে। পর্যায়ক্রমে বাকিগুলোকেও উন্নত করা হবে।


আরো সংবাদ



premium cement