১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৩ আশ্বিন ১৪৩১, ১৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরে সংস্কারের নামে চলছে বদলিবাণিজ্য

সিন্ডিকেট প্রধান ডিজি # হাতিয়ে নেয়া হয়েছে ১৫ কোটি টাকা
-


সংস্কারের নামে মোটা অঙ্কের ঘুষের বিনিময়ে বদলি বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে মাদকদব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মহাপরিচালকের বিরুদ্ধে। স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার প্রশাসন থেকে একাধিক সুবিধা নেয়া ডিজি বদলি বাণিজ্যের জন্য গড়ে তুলেছেন বিরাট একটি সিন্ডিকেট। যাদের কাজ হচ্ছে বিভিন্ন পদে থাকা কর্মকর্তাদের বদলির বার্তা দিয়ে মোটা অঙ্কের ঘুষ নেয়া। ইতোমধ্যে যাদের কাছ থেকে ঘুষ নিয়েছেন তারা পছন্দমতো জায়গায় বদলির জন্য চাপ দিচ্ছেন বলেও জানা গেছে। ভুক্তভোগীরা বলছেন, সরকারি চাকরিতে বদলি একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। কিন্তু অবৈধ পন্থায় বদলি করা চরম অন্যায়।
ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করে বলেন, ছাত্র জনতার গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা পালিয়ে গেলেও তার রেখে যাওয়া অনুসারীরা রয়ে গেছে। পতিত সরকারের আস্থাভাজন আমলা হিসেবে পরিচিত মহাপরিচালক খন্দকার মুস্তাফিজুর রহমানের এলাকার বাসিন্দা প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মেহেদী হাসান মিলে গড়ে তুলেছেন এই সিন্ডিকেট। শেখ হাসিনার আস্থাভাজন হওয়ার কারণে তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ভোলা ও নোয়াখালী জেলায় ডিসি হিসেবে কর্মরত ছিলেন। জেলাপর্যায়ে বিরোধী দল এবং ভিন্নমতের জনগণের ওপর স্টিম রোলার চালানোর পুরস্কার হিসেবে শেখ হাসিনার আস্থাভাজন এই কর্মকর্তাকে ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনার হিসেবে পদায়ন করা হয়। জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনার হিসেবে কর্মকালীন সময়ে আওয়ামী লীগ সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়নে রাষ্ট্রযন্ত্রকে দলীয়করণ থেকে শুরু করে ভিন্নমতের মানুষের ওপর অত্যাচার নির্যাতন এবং মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। সরকারবিরোধী বিভিন্ন আন্দোলনে তার অধীনস্থ জুনিয়র এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট এবং পুলিশ কর্মকর্তারা বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, ছাত্রজনতার আন্দোলনকে নিষ্ঠুরতার সাথে দমন করেন। নোয়াখালী জেলার ডিসি থাকা অবস্থায় তার অত্যাচার, নির্যাতনের ভয়াবহ চিত্র ওই অঞ্চলের মানুষের হৃদয়ে দাগ কেটে রেখেছে।

অভিযোগ রয়েছে স্বৈরাচারী সরকারের এই কর্মকর্তা শেখ হাসিনার পুরস্কার হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানের পদ বাগিয়ে নেন। এরপর ক্ষমতার অপব্যবহার করে বেআইনিভাবে অত্যন্ত লোভনীয় মূল্যবান দুইটি প্লট এবং একটি ফ্ল্যাট বাগিয়ে নিয়েছেন, যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ২০ (বিশ) কোটি টাকা। সেখান থেকে নিয়োগ পান মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মহাপরিচালক হিসেবে। এইখানে আসতে শেখ হাসিনার আশীর্বাদের পাশাপাশি অঢেল টাকা ঘুষ দিতে হয়েছে তাকে।
মাদক অধিদফতরে যোগদানের পর তিনি দুর্নীতির একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। এই সিন্ডিকেটের মূল হোতা তার এলাকার লোক হিসেবে প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মেহেদি হাসান। ওই সহকারী পরিচালকের মাধ্যমে তিনি বিভিন্ন কর্মকর্তাদের থেকে নিয়মিত মাসোয়ারা আদায় করেন। স্বৈরচারী সরকারের পতনের সাথে সাথেই ভোল পালটে নিজেকে বিএনপি, জামায়াতের অনুসারী হিসেবে পরিচয় দেয়া শুরু করেছেন বলেও জনশ্রুতি রয়েছে। তিনি সহকারী পরিচালকের মাধ্যমে বিভিন্ন কর্মকর্তাদের কাছ থেকে প্রাইজ পোস্টিংয়ের কথা বলে প্রায় ১৫ কোটি টাকা কামিয়ে নিয়েছেন। যারা টাকা দিয়েছেন তারা নিজেদের পছন্দের জায়গায় পোস্টিংয়ের জন্য তাগাদা দিচ্ছেন। সুষ্ঠু নিরপেক্ষ তদন্ত করা হলে সব সত্য বেরিয়ে আসবে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের ডিজি খন্দকার মুস্তাফিজুর রহমান নয়া দিগন্তকে বলেন, তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগই মিথ্যা। দির্ঘদিন যারা ঢাকায় চাকরি করছেন নিয়ম মেনে পর্যায়ক্রমে তাদের বদলি করা হচ্ছে। এখানে ঘুষ নেয়ার কোনো ঘটনা ঘটেনি। তিনি আরো বলেন, অধিদফতরের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা দীর্ঘদিন ঢাকায় থেকে একটি সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন। ওই সিন্ডিকেট ভাঙতে বদলি কার্যক্রম চালানোর কারণে একটি গ্রুপ তার বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য দিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement