১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২ আশ্বিন ১৪৩১, ১৩ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

কেরানীগঞ্জে ময়লা সিন্ডিকেটে কোটি টাকার বাণিজ্য আওয়ামী লীগ নেতাদের

-


ঢাকার কেরানীগঞ্জে ময়লা সিন্ডিকেটের বাণিজ্যের নেপথ্যে রয়েছেন আওয়ামী লীগের এক ডজন নেতা। প্রতি মাসে কোটি টাকার বাণিজ্য হাতিয়ে নিচ্ছে তারা। সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান শাহিন আহমেদসহ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের কিছু নেতা এই ময়লা বাণিজ্যের নিয়ন্ত্রণকর্তা। কেরানীগঞ্জ উপজেলার শুভাঢ্যা, আগানগর, জিনজিরা ও কালিন্দী ইউনিয়নের ২৫টি ওয়ার্ডের প্রায় ৬০ হাজার পরিবার প্রতি মাসে ন্যূনতম ১০০ টাকা এবং সর্বোচ্চ ২৫০ টাকা করে ময়লার বিল দিয়ে আসছেন। এতে প্রতি মাসে ময়লা সিন্ডিকেটের সন্ত্রাসীরা এক কোটি টাকা থেকে এক কোটি ১০ লাখ টাকা ময়লার বিল আদায় করে। বাসা বাড়ি থেকে ময়লা সংগ্রহের পর সংগৃহীত ময়লা ঢাকা সিটি করপোরেশনের নির্দিষ্ট ডাম্পিংয়ে না দিয়ে ঐতিহ্যবাহী বুড়িগঙ্গার সংযোগ খাল শুভাঢ্যা খালে ফেলছে। যার কারণে ইতোমধ্যে শুভাঢ্যা খালের ৯ কিলোমিটার এলাকা ময়লায় ভরাট হয়ে গেছে।
অনুসন্ধানে জানা যায় ২০১২ সালে আওয়ামী লীগের সাবেক প্রতিমন্ত্রী নজরুল হামিদ দিপু কেরানীগঞ্জের উপজেলা প্রশাসনের অর্থায়নে বাসাবাড়ি থেকে ময়লা সংগ্রহ করে ঢাকা সিটি করপোরেশনের ডাম্পিংয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য ময়লার গাড়ি তৈরি করে দেন। তখন প্রতি বাসা থেকে ৬০ টাকা করে ময়লার বিল আদায় করার প্রথা চালু করেন তিনি। পরে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান শাহিন আহমেদ ২০১৭ সালে ময়লার বিল ৬০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১০০ টাকা করেন এবং এখান থেকে মাসিক একটা চাঁদা উপজেলা চেয়ারম্যানকে দেয়া হতো। ২০২২ সালে ১০০ টাকার ময়লার বিল দেড় শ’ টাকা করেন উপজেলা চেয়ারম্যান এবং বহুতল ভবন থেকে আদায় করা হয় ২৫০ টাকা, যা বর্তমানে প্রায় ৬০ হাজার পরিবার থেকে এক কোটি থেকে এক কোটি ১০ লাখ টাকা প্রতি মাসে আদায় করে ময়লা সিন্ডিকেট।

শুভাঢ্যা ইউনিয়ন পরিষদ সূত্রে জানা যায় শুভাঢ্যা ইউনিয়নে ৯টি ওয়ার্ডে প্রায় ৮০ হাজার পরিবারের বসবাস। এই ইউনিয়নে জনসংখ্যা প্রায় ১২ লাখ। তাদের মধ্যে এক লাখ ৫০ হাজার ভোটার রয়েছেন। ওই ইউনিয়নের ১, ২, ৩, ৫, ও ৭নং ওয়ার্ডের ময়লা সংগ্রহ ও মাসিক ময়লার বিল আদায়ের দায়িত্বে রয়েছে বইচা দুলাল। সুবিধাবাদী এই বইচা দুলাল যখন যে সরকার ক্ষমতায় আসে সেই সরকারের লোক নামে পরিচিত। গত ১২ বছরে তিনি ময়লার টাকা দিয়ে শুভাঢ্যা পূর্বপাড়া দোতলা বাড়ি নির্মাণ, একাধিক প্লট, জমি, ফ্ল্যাট ও কয়েক কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। এলাকার মানুষদের তিনি মানুষ মনে করেন না। কোনো বাসাবাড়ি থেকে ময়লার বিল দিতে দেরি হলে সন্ত্রাসীবাহিনী পাঠিয়ে ওই বাসার মানুষদের নাজেহাল করে। এ ছাড়া রয়েছে তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, মাদক বিক্রি ও ছিনতাইকারীদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ের অভিযোগ।

শুভাড্ডা ইউনিয়নের বাসিন্দা নাজিম উদ্দিন জানান, তাকে প্রতি মাসে বাসার ময়লা নেয়ার জন্য ২৫০ টাকা করে দিতে হচ্ছে। বাসার ময়লা তার লোকজন বাসা থেকে নেয়ার পর দূরে কোতাও না ফেলে শুভাঢ্যা খালে নিয়ে ফালাচ্ছে। এতে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে শুভাঢ্যা খাল। এক সময় কেরানীগঞ্জে সুপেয় পানির অন্যতম উৎস ছিল শুভাঢ্যা খাল। এতে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করংেতন অনেকে পরিবার। খালে চলাচল করত যাত্রীবাহী, মালবাহী বড় বড় নৌযান। এখন চলাচল তো দূরের কথা খালের পাশ দিয়ে হাঁটাও দায়। ১১ কিলোমিটার খালের প্রায় অর্ধেক পরিণত হয়েছে ময়লার ভাগাড়ে।
এলাকাবাসী জানান বইচা দুলালের সাথে আওয়ামী লীগের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদের সাথে সখ্য রয়েছে। ময়লা বিলের একটি অংশ তিনি শাহীন চেয়ারম্যানকে পাঠিয়ে দিতেন। শুভাঢ্যা ইউনিয়নের পাঁচটি ওয়ার্ডের প্রায় ৩০ হাজার পরিবার থেকে ময়লার বিল আদায় হয় ৪৫ লাখ টাকা। উপজেলার কালিন্দী ইউনিয়নের ১নং ২নং ৩নং ৪নং ও ৫নং ওয়ার্ডের ময়লা বিল আদায় করেন জোবায়ের নুর ইসলাম, বিপুল মৃধাসহ একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ। ওই ইউনিয়নে প্রায় ২০ হাজার পরিবারের কাছ থেকে ময়লার বিল প্রতি মাসে আদায় করা হয় ৪ থেকে সাড়ে ৪ লাখ টাকা। জিনজিরা ইউনিয়নের শুধুমাত্র মডেল টাউন থেকে ময়লার বিল আদায় হয় ৭ লাখ টাকা। মডেল টাউন ছাড়াও ওই ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ডের প্রায় ২৫ হাজার পরিবার থেকে ময়লার বিল বাবদ আদায় করা হয় সাড়ে ৪ লাখ থেকে ৫ লাখ টাকা। জিনজিরা ইউনিয়নের ময়লা সিন্ডিকেটের নেপথ্যে রয়েছে ঢাকা জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সংগঠনিক সম্পাদক ও আগানগর ৭নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য রাসেল মেম্বার।

আগানগর ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের সভাপতি রফিক মেম্বার, ৭নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য রাসেল ৪নং ওয়ার্ডের মেম্বার আওয়ামী লীগ নেতার নেতৃত্বে আগানগর ইউনিয়নের ৯ ওয়ার্ডের ময়লার বিল আদায় করা হয় উক্ত ইউনিয়নের প্রায় ২৫ হাজার পরিবারের কাছ থেকে সাড়ে ৪ লাখ থেকে ৫ লাখ টাকা ময়লার বিল আদায় হয়। নেতৃত্বে রয়েছে কেরানীগঞ্জ স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক রমজান মেন্বর।
গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর উপজেলার শুভাঢ্যা, আগানগর, জিনজিরা ও কালিন্দী ইউনিয়নের কয়েকটি ওয়ার্ডের ময়লা সিন্ডিকেট বিএনপি নামধারীরা দখলে নিলেও এখনো অধিপত্য রয়েছে আওয়ামী লীগের সিন্ডিকেটের হাতে। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার রীনাত ফৌজিয়া জানান আমি নতুন জয়েন করেছি ময়লা সিন্ডিকেট সম্পর্কে আমার জানা নেই। যদি অনিয়ম হয়ে থাকে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement
আড়াইহাজারে ২১ রাউণ্ড রিভলভারের গুলি উদ্ধার আমাদের কথা শুনলে শেখ হাসিনাকে পালিয়ে যেতে হতো না : হাবিব উন নবী খান কুলিয়ারচরে ‘জশনে জুলুস’ মিছিলকে কেন্দ্র করে নিহতের ঘটনায় মামলা, গ্রেফতার ৯ সাম্প্রতিক বন্যায় ১৪ হাজার ২৬৯ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি : উপদেষ্টা আমাদের আন্দোলন এখনো শেষ হয়নি : যুবদল সভাপতি সুনামগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফোরকান, সম্পাদক কাইয়ুম এনআইডি কার্যক্রম অন্য কোথাও গেলে ভোটার তালিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে : ইসি সচিব ছাত্র আন্দোলনে ছররা গুলি, ৫ শতাধিক মানুষের অন্ধত্ব বরণ আবারো ক্ষমতায় ফেরার কৌশল আঁটছে শ্রীলঙ্কায় বিতাড়িত রাজনৈতিক পরিবারটি আজুখাইয়া সীমান্তে ট্রলি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একজন নিহত মুরাদনগরে গোমতীর নদীর পানি কমার সাথে সাথে তীব্র হচ্ছে ভাঙ্গন

সকল