১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৯ ভাদ্র ১৪৩১, ৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

অভিভাবকশূন্য শিক্ষা বিভাগ প্রশাসনে অস্থিরতা

-

শিক্ষা প্রশাসনে চলছে চরম অস্থিরতা। গত ৫ আগস্ট স্বৈরাচার আওয়ামী সরকারের পতনের পর থেকে শিক্ষা প্রশাসনের বিতর্কিত শীর্ষ কর্মকর্তা আত্মগোপনে চলে যাওয়ার পর অভিভাবকশূন্য হয়ে পড়ে গোটা শিক্ষা বিভাগ। মন্ত্রণালয় থেকে নীতিনির্ধারণী বিভিন্ন বিষয়ে নির্দেশনা বাস্তবায়ন করার দায়িত্ব মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর বা মাউশির। মাউশির মহাপরিচালকের নিয়োগ নিয়ে শুরু থেকেই ছিল ব্যাপক বিতর্ক ও সমালোচনা। সাবেক রাষ্ট্রপতির ভাগিনা হওয়ার সুবাধে শীর্ষ এই পদটি বাগিয়ে নেন অধ্যাপক নেহাল আহমেদ। এ দিকে গত ১৫ দিন আত্মগোপনে থেকে সম্প্রতি ডিজির পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন তিনি। ফলে এই পদে কে আসছেন তা নিয়েও চলছে নানা জল্পনাকল্পনা। ইতোমধ্যে অনেক বিতর্কিত ব্যক্তিরাও এখন রাজনৈতিক ভোল পাল্টিয়ে মাউশির ডিজির পদটি দখলে নিতে মরিয়ে হয়ে নানাভাবে দেন-দরবার ও তদবীরও শুরু করেছেন।
গত কয়েক দিনে মাউশির বিভিন্ন দফতর ও বিভাগ ঘুরে কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে শুধু ডিজি পদের জন্যই নয়, অধস্তন অনেক কর্মকর্তা তাদের নানা অভিযোগ ও বঞ্চনার দাবি নিয়ে ইদানীং বেশ সোচ্চার হয়েছেন। আওয়ামী সরকারের পতনের পর মাউশিতে মূলত কোনো কাজই হচ্ছে না। পছন্দের পদে বদলি আর তদবির নিয়েই ব্যস্ত এখন সবাই। দীর্ঘ ১৫ বছরের অধিকার বঞ্চিত কর্মকর্তারা এখন তাদের ন্যায্যঅধিকার আদায়ে শক্তভাবে কথা বলছেন। কার্যত অধিকার আদায় আর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের নানা দিক দিয়েই কর্মকর্তাদের মধ্যে আলোচনা বেশি হচ্ছে। অনেক কর্মকর্তা আবার তাদের অধিকার আদায়ে সংগঠিত হয়ে মাঠে নেমে আন্দোলন সংগ্রামের মতো কর্মসূচিও দিচ্ছেন। সবমিলিয়ে গোটা শিক্ষা প্রশাসনে এখন এক অস্থির অবস্থা বিরাজ করছে।

এ দিকে আগামী সোমবারের মধ্যে শিক্ষা ভবনসহ শিক্ষা প্রশাসনে গত ‘স্বৈরাচার সরকারের’ রেখে যাওয়া দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের বদলির আলটিমেটাম দিয়েছে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার মর্যাদা রক্ষা কমিটি। দাবি মানা না হলে শিক্ষাভবন ঘেরাওয়ের কর্মসূচি দেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন সংগঠনের নেতারা।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে শিক্ষাভবনে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার মর্যাদা রক্ষা কমিটির অবস্থান কর্মসূচি থেকে এসব দাবি জানানো হয়। অবস্থান কর্মসূচি থেকে শিক্ষাভবনে বিগত স্বৈরাচার সরকারের রেখে যাওয়া দলদাস ও দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের অপসারণ, রাষ্ট্র সংস্কার ও শিক্ষা ক্ষেত্রে বৈষম্য নিরসনের দাবি জানান তারা। এতে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি এস এম কামাল আহমেদ। আন্দোলনে অংশ নিয়ে অন্যান্যের মধ্যে আরো বক্তব্য রাখেন বিসিএস জেনারেল এডুকেশন অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সহসভাপতি সংগঠনের উপদেষ্টা প্রফেসর ড. আ জ ম রুহুল কাদীর, প্রাক্তন যুগ্ম মহাসচিব প্রফেসর আবেদ নোমানী প্রমুখ।

এস এম কামাল আহমেদ বলেন, দীর্ঘদিন ধর পদোন্নতি বঞ্চিত শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তাদের একসাথে সহকারী, সহযোগী এবং অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দেয়ার দাবি জানিয়েছি আমরা। এ জন্য আমাদের বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার মর্যাদা রক্ষা কমিটি এখন একযোগে মাঠে নেমেছি। তিনি আরো জানান, একই সাথে অন্যান্য ক্যাডারের মতো পাঁচ বছরপূর্তিতে ষষ্ঠ গ্রেড প্রদান, শিক্ষা প্রশাসনে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের দ্রুত বদলির দাবিও জানাচ্ছি আমরা। এ ছাড়া বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাদের বঞ্চনা দূর করতে অবিলম্বে পদোন্নতিযোগ্য সবাইকে সব টায়ারে (অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক ও সহকারী অধ্যাপক পদে) এক সাথে পদোন্নতি প্রদান করা এবং অন্যান্য ক্যাডারের ন্যায় পাঁচ বছরপূর্তিতে ষষ্ঠ গ্রেড দেয়ারও দাবি জানানো হয়েছে। একই সাথে অধ্যাপকদের ৫ম গ্রেড থেকে ৩য় গ্রেডে উন্নীতকরণের সুযোগ ও দাবি জানানো হয়েছে।
কামাল আহমেদ জানান, শিক্ষা ক্যাডারে বদলি-পদায়নের ক্ষেত্রে চরম বৈষম্য বিদ্যমান। নির্দিষ্ট কিছু শিক্ষক-কর্মকর্তা ঘুরে-ফিরে মাউশি, ডিআইএ, ব্যানবেইস, নায়েম, শিক্ষা বোর্ড, এনসিটিবিসহ বিভিন্ন দফতর এবং ঢাকাসহ বিভাগীয় ও জেলার প্রধান কলেজগুলোতে কর্মরত আছেন। অন্য দিকে সৎ, যোগ্য, দক্ষ, নিরীহ শিক্ষক-কর্মকর্তারা বছরে পর বছর প্রত্যন্ত অঞ্চল, হাওর-দ্বীপ, পাহাড় এবং জেলা-উপজেলার ছোট কলেজে কর্মরত আছেন। এই বৈষম্য নিরসনে অবিলম্বে সুষ্ঠু বদলি পদায়ন নীতিমালা জারি করে তা বাস্তবায়ন করার দাবি জানাই।
অন্য দিকে মাউশিতে কর্মরত জনবলসহ সেকেন্ডারি এডুকেশন সেক্টর ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রামের (সেসিপ) ১ হাজার ১৮৭টি পদ রাজস্ব খাতে স্থানান্তরের দাবিতে লাগাতার কর্মসূচি পালন করছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ইতোমধ্যে তারা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে এমপিও সার্ভার বন্ধ, শিক্ষা ভবনের মূল দুই গেটে তালা দেয়া অব্যাহত রাখাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছেন। সেসিপের কর্মকর্তারা জানান, আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষা ভবনকেন্দ্রিক এ আন্দোলন চলবে। আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে পূর্বঘোষিত কর্মসূচি সফল করতে সারা দেশ থেকে ‘চরম বৈষম্যের শিকার’ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এসেছিলেন শিক্ষা ভবনে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা শিক্ষা ভবনেই থাকবেন বলে জানিয়েছেন।

কর্মকর্তারা বলছেন, বছরের পর বছর ধরে চরম বৈষম্যের শিকার সেসিপ কর্মকর্তারা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়াধীন সেসিপ প্রোগ্রামে প্রায় ৩০ শতাংশ নারী কর্মরত। মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসগুলোতে চাকরিতে যোগদানের পর থেকে এখনো ইনক্রিমেন্টবিহীন স্কেলভিত্তিক বেতনে কর্মরত আছেন তারা। দেশে-বিদেশে প্রশিক্ষিত, ১০-২২ বছরের কাজের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন এই ১ হাজার ১৮৭ জনবলকে মানবেতর জীবনযাপন থেকে মুক্তি দিতে পদগুলো জনবলসহ রাজস্ব খাতে স্থানান্তরের দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন তারা।
সূত্র মতে শিক্ষা ভবনের নিজেদের নানা অস্থিরতার মধ্যে গতকাল নতুন করে যুক্ত হয়েছেন ভিকারুন নিসা স্কুলের ১ম শ্রেণীতে ভর্তি বাতিল হওয়া বিষয়টি। গতকাল বৃহস্পতিবার ভর্তি পুনর্বহালের দাবিতে শিক্ষা ভবনে অবস্থান নিয়েছিলেন ভিকারুননিসা নূন স্কুলের প্রথম শ্রেণীর ১৬৯ ছাত্রী ও অভিভাবক। গতকাল সকাল থেকেই দেখা যায় তারা শিক্ষা ভবনে জড়ো হয়েছেন। অধিদফতরের কলেজ শাখার পরিচালককে চাপ দিয়েছেন তাদের ভর্তির অনুমতি দেয়ার জন্য। এ সময় অধিদফতরে এক ভীতিকর পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
অভিভাবকরা জানান, চলতি শিক্ষাবর্ষে রাজধানীর বেইলি রোডের ভিকারুননিসা নূন স্কুলে প্রথম শ্রেণীতে ভর্তি হয় তাদের সন্তানেরা। তারা তিন মাস ক্লাস করার পর জানতে পারেন বয়স সংক্রান্ত জটিলতায় ভর্তি বাতিল হয় ১৬৯ ছাত্রীর। শিক্ষাবর্ষের মাঝখানে স্কুলের এমন সিদ্ধান্তে ভর্তি পুনর্বহালের দাবিতে আন্দোলনে নামেন তারা।


আরো সংবাদ



premium cement
ভারতে এবার ৭ বছরের মুসলিম ছাত্রের টিফিন নিয়ে বিতর্ক বঙ্গোপসাগর হয়ে মেরিন ড্রাইভ দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকছে রোহিঙ্গারা সিলেটে গৃহকর্মী শিশুর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার রাষ্ট্র সংস্কারের পর নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নেবে সরকার উপদেষ্টা রিজওয়ানা শৈলকুপায় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে ভ্যানচালকের মৃত্যু তাইম হত্যাকারীদের গ্রেফতারের দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ বেসরকারি ব্যাংক থেকে জনগণের টাকা ফেরত পেতে উদ্যোগ আমতলীতে ছাত্রলীগ নেতার অস্ত্রের আঘাতে যুবদল নেতা জখম সামিটের এলএনজি টার্মিনালের মেরামত সম্পন্ন, পরিষেবা পেতে লাগবে ২০ দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস শুরু ২২ সেপ্টেম্বর খাদ্যনিরাপত্তা নিয়ে বড় চ্যালেঞ্জের আশঙ্কা

সকল