১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৮ ভাদ্র ১৪৩১, ৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

কৃষির পিডি নিয়োগে যোগ্যতার চেয়ে দলীয় পরিচয়ই ছিল মুখ্য

দুর্নীতি অনিয়মে বেশির ভাগ প্রকল্পের উদ্দেশ্য লক্ষ্য ব্যাহত হচ্ছে
-

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) আওতায় ২০২৩ সালের জুলাই থেকে বাস্তবায়িত হচ্ছে ‘নতুন ৬টি আঞ্চলিক কার্যালয় স্থাপনের মাধ্যমে স্থানভিত্তিক ধানের জাত ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন এবং বিদ্যমান গবেষণাগার উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্প। প্রায় ৩৬৯.৩০২ কাটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়নাধীন এই প্রকল্পটি দীর্ঘ প্রায় পাঁচ বছর দিনরাত পরিশ্রম করে ডিপিপি (ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রপোজাল) প্রণয়ন করেন ব্রির প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো: আনোয়ার হোসেন। ২০২৩ সালের ৬ জুন একনেকে প্রকল্পটির অনুমোদন এবং ১৪ সেপ্টেম্বর কৃষি মন্ত্রণালয় হতে প্রশাসনিক আদেশ জারি করা হয়। প্রকল্প প্রণয়ন ও অনুমোদন প্রক্রিয়াকরণের ফোকাল পয়েন্ট ছিলেন ব্রির বিজ্ঞানী ড. মো: আনোয়ার হোসেন। ডিপিপিতে সংশ্লিষ্ট প্রকল্প প্রণয়ন ও অনুমোদন প্রক্রিয়াকরণে সম্পৃক্ত অর্থাৎ ফোকাল পয়েন্ট কর্মকর্তা এবং প্রকল্প বাস্তবায়নে অভিজ্ঞ কর্মকর্তাকে প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ দেয়ার বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট প্রকল্প প্রণয়ন ও অনুমোদন প্রক্রিয়াকরণ এবং বাস্তবায়নে কোন পর্যায়েই সম্পৃক্ত না থাকা সত্ত্বেও প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ পান ড. মো: মোফাজ্জল হোসেন। তিনি ব্রির মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা। তৎকালীন কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাকের পারিবারিক বন্ধুর নিকটাত্মীয় বলে জানা যায়। জানা যায়, ড. মো: আনোয়ার হোসেন প্রকল্প প্রণয়ন থেকে শুরু করে, অনুমোদন পর্যন্ত সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করলেও বিএনপিপন্থী কর্মকর্তা অভিহিত করে তাকে বাদ দিয়ে পিডি নিয়োগ দেয়া হয়। এ কারণে থমকে দাঁড়ায় প্রকল্প কার্যক্রম। এ অবস্থায় গত ৭ আগস্ট প্রকল্প পরিচালক থেকে ‘অনভিজ্ঞ’ পিডি ড. মো: মোফাজ্জল হোসেনকে বাদ দেয়ার জন্য কৃষি সচিব বরাবর আবেদন করা হয় ব্রির পক্ষ থেকে। আবেদনে বলা হয়, ড. মো: মোফাজ্জল হোসেনের অনভিজ্ঞতা এবং মন্ত্রণালয় ও পরিকল্পনা কমিশনের সাথে সমন্বয় ও যোগাযোগের ঘাটতির দরুন ২০২৩ সালের ০৬ জুন প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদিত হওয়া স্বত্ত্বেও ২০২৪-২৫ অর্থবছরের এডিপিতে অর্থ বরাদ্দ পাওয়া সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে আরএডিপিতে অর্থ বরাদ্দ পাওয়া গেলেও প্রকল্প পরিচালকের দক্ষতার অভাবে কর্ম-পরিকল্পনা অনুযায়ী আউটসোর্সিং জনবল নিয়োগ, নতুন আঞ্চলিক কার্যালয় ও স্যাটেলাইট অফিস ভাড়া, আসবাবপত্র সংগ্রহ, গবেষণা যন্ত্রপাতি ক্রয় ইত্যাদি বিলম্বিত হওয়ায় যথাসময়ে মাঠপর্যায়ে গবেষণা কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হয়নি।
কৃষির গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা ব্রির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই প্রকল্পের আওতায় নতুন ৬টি এবং বিদ্যমান ২টি আঞ্চলিক কার্যালয়ের জন্য মোট ১২০ একর ভূমি অধিগ্রহণ, ভূমি উন্নয়ন, স্থানভিত্তিক জাত ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন, প্রযুক্তি গ্রাম স্থাপনের মতো গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম রয়েছে, যা বর্তমান প্রকল্প পরিচালকের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না মর্মে কৃষি মন্ত্রণালয়কে লিখিতভাবে জানিয়েছে ব্রি।
কৃষি খাতের সবচেয়ে বড় প্রকল্প পার্টনার। দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, খাদ্যশস্য উৎপাদনে বৈচিত্র্যতা আনায়ন, কৃষি উদ্যোক্তা তৈরি ও উন্নয়ন এবং জলবায়ুসহিষ্ণু এগ্রিফুড ভ্যালু চেইনের সম্প্রসারণসহ কৃষি খাতের আমূল পরিবর্তনের উদ্দেশে এ প্রকল্পের উদ্যোগ নেয় কৃষি মন্ত্রণালয়। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরসহ কৃষি মন্ত্রণালয়ের অন্য সাতটি সংস্থা হলো- কৃষি বিপণন অধিদফতর (ডিএএম), বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বিএআরসি), বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি), বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএআরআই), বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিআরআরআই) এবং বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ)।
প্রায় সাত হাজার কোটি টাকার (৬৯১০ কোটি ৯৩ লাখ টাকা) এ মেগা প্রকল্পের অর্থের বেশির ভাগই (পাঁচ হাজার ৭৬০ কোটি টাকা) দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক ও ইফাদ। ২০২৩ সালের জুলাই থেকে শুরু হওয়া প্রকল্পটি আগামী ২০২৮ সালের জুনে শেষ হওয়ার কথা।
জানা যায়, প্রকল্পটির ডিপিপি প্রণয়ন ও একনেকে পাসসহ সব কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে কৃষিবিদ ড. সাখাওয়াত হোসেনের নেতৃত্বে। ফোকাল পয়েন্ট হিসেবে তার নেতৃত্বে একটি টিম কাজ করলেও প্রকল্প পাসের পরে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কুমিল্লা জেলায় উপপরিচালকের (ডিডি) দায়িত্বে থাকা মিজানুর রহমানকে পিডি বা পিসি প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর) নিয়োগ দেয় কৃষি মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে দৈনিক নয়া দিগন্তসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে ফলাও করে খবর প্রকাশ করে।
জানা যায়, প্রকল্পের অর্থ ছাড়ের আগেই ২০২৩ সালের ১১ অক্টোবর রাজধানীর কেআইবিতে পার্টনার প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক যাত্রার উদ্বোধন করেন তৎকালীন কৃষি সচিব ওয়াহিদা আক্তার। দিন ওয়াহিদা আক্তার তার বক্তৃতায় বলেন, প্রকল্পের শুরু থেকে সাখাওয়াত হোসেন অনেক দক্ষতার সাথে কাজ করেছেন। মেধাবী মানুষটি অনেক কষ্ট করে ডিপিপি বানিয়েছেন। কিন্তু নানা কারণে তাকে প্রকল্প পরিচালক করা যায়নি। আশা করি, তিনি এ প্রকল্পের কার্যক্রমে সব সময় সহায়তা করবেন।
কৃষি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিদায়ী কৃষিসচিব ওয়াহিদা আক্তার এসব কথা বললেও প্রকল্পের ফোকাল পয়েন্ট ড. সাখাওয়াত হোসেনকে বাদ দিয়ে মিজানুর রহমানকে পিডি বানানোতে বড় হাত ছিল। ওই সময়কার কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক ঘনিষ্ঠরা মিলে সাখাওয়াতকে বিএনপি-জামায়াতপন্থী হিসেবে চিহিৃত করে প্রকল্প থেকে বাদ দেয়া হয়।
শুধু এই দু’টি প্রকল্পই নয়। মন্ত্রণালয়ভুক্ত ১৭টি অধিদফতর, সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশ প্রকল্পের পিডি নিয়োগ হয়েছে দলীয় বিবেচনায়। রয়েছে অর্থ বিনিময়ের অভিযোগ।


আরো সংবাদ



premium cement
স্বাস্থ্যসেবার নতুন মহাপরিচালক নাজমুল হোসেন সুনামগঞ্জ সীমান্তে পাচারকালে বিপুল পরিমাণ মালামাল আটক ফ্যাসিবাদের দোসরদের পরিকল্পিতভাবে প্রশাসনে প্রতিস্থাপন করা হচ্ছে : বুলবুল ফ্যাসিবাদি সরকার সব সময় শাসন ও শোষণ করেছে নীলফামারীতে ডিবি পরিচয়ে যুবককে অপহরণ, গ্রেফতার ৪ অন্যায় প্রতিহত করতে ছাত্র-জনতাকে সব সময় সোচ্চার থাকবে : সমন্বয়ক সারজিস আলম নতুন বাংলাদেশ গড়তে এ সরকারকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবে জামায়াত : গোলাম পরওয়ার মানিকগঞ্জ কৃষকদলের নতুন কমিটি, সভাপতি সাইদ, সাধারণ সম্পাদক বাদল সাভারে টোল বন্ধের দাবিতে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ বিদেশে চিকিৎসার জন্য খালেদার ফিটনেস পরীক্ষা করছে মেডিক্যাল বোর্ড চাঁদপুরে ছেলের হাতে বাবা খুন

সকল