১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

এনবিআর কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিধবার জমি দখলের অভিযোগ

-

- ১৫ বিঘা চাষের জমি জবরদখল
- ভুক্তভোগীকে ঘায়েল করতে নানান তদবির

নিঃসন্তান মোশরিফা খান লাকির বাড়ি গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের পারইহাটি গ্রামে। পেশায় একজন সাংবাদিক। ২০১৭ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর তার স্বামী নূর মোহাম্মদ মিয়াও না ফেরার দেশে চলে যান। স্বামী-সন্তান না থাকায় বড় দুঃখী ও অসহায় লাকি। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে এনবিআর কর্মকর্তা কামাল হোসেন রিপন লাকির স্বামীর ১৫ বিঘা জমি জবরদখল করে মাছের খামারসহ নানাবিধ আবাদ করছেন। এমনকি লাকিদের বর্গাচাষি সেলিম শেখও জবরদখলকারীর বেয়াই হওয়ায় এখন আবোলতাবোল বকছেন।
বর্গাচাষি সেলিম শেখ এ প্রতিবেদককে বলেন, লাকির স্বামী নূর মোহাম্মদ মারা যাওয়ার পরপরই তাদের সব সম্পত্তি এনবিআর কর্মকর্তা কামাল হোসেন রিপন ক্রয় করেন। আর আমাকেও কিছু দিবে বলে জানিয়েছেন রিপন ও তার ছোট ভাই সোহেল।
অভিযুক্ত এনবিআর কর্মকর্তা কামাল হোসেন রিপন নয়া দিগন্তকে বলেন, নূর মোহাম্মদ মিয়া মারা যাওয়ার পরে শোকের ভাগওয়ালারা তার কাছে বিক্রি করেন জমি। তিনি বলেন, নূর মোহাম্মদ নিঃসন্তান ছাড়াও তার আপন কোনো ভাই-বোন নেই।
ভুক্তভোগী লাকি নয়া দিগন্তকে বলেন, একসময়কার কাজের লোক ও পরে বর্গাচাষি ছিল রিপনের বাবা মজিবর শেখ। পলাশ ঢালী নামে একজন ২০ বছর ধরে বর্গাচাষি এবং আমার ইরিগেশন প্রজেক্টের ম্যানেজার ছিল। আমার স্বামীর মৃত্যুর পর ২০১৮ সালে কামাল হোসেন রিপন পলাশকে ভয় দেখিয়ে প্রজেক্ট থেকে বের করে দেয় এবং গুরুপদ নামে এবং হিন্দু লোককে ওই প্রজেক্টের দায়িত্ব দেয়। সেই থেকে আজ অবধি গুরুপদ ওই ইরিগেশন প্রজেক্টের সব ফসল ভোগ করে যাচ্ছে।

আর সেলিম হচ্ছে কামাল হোসেনের বড় ভাই লুৎফর রহমানের শ্যালক। লুৎফর রহমান শেখ বাংলাদেশ তিতাস গ্যাসে চাকরি করে। এ ঘটনার পরে থানায় জিডি, এলাকায় বিচার-সালিস ডাকা ছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেও কোনো সুফল পাননি লাকি। তিনি অভিযোগে উল্লেখ করেন, নানাবিধ জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে ২০১৭ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর আমার স্বামী মৃত্যুবরণ করেন। আমার স্বামীর মৃত্যুর পর পূর্বশত্রুতার জের ধরে কামাল হোসেন রিপন আমাকে আমার স্বামীর ভিটাবাড়ি ও সম্পত্তি থেকে উচ্ছেদের নানা অপকৌশল ও সম্পত্তি অবৈধভাবে দখলের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ইতঃপূর্বে সরকারের পুলিশ বিভাগসহ বিভিন্ন দফতরে লিখিত অভিযোগ দিয়েও আমি কোনো প্রতিকার পাইনি। ফলে বর্তমানে কামাল হোসেন রিপন এবং তার পোষা কিছু খারাপ লোক আমাকে নানাভাবে হয়রানি এবং ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। তারা আমাকে মামলা এবং হত্যার হুমকিও দিয়েছে। শুধু তাই নয়, এলাকার (মুকসুদপুরের) স্থানীয় কামাল হোসেনের পোষা কিছু লোক আমাকে নানাভাবে হয়রানি এবং প্রাণে মেরে ফেলার চেষ্টা করছে। সে আমার জমিসহ নিরীহ হিন্দু সম্প্রদায়ের সম্পত্তি জাল দলিলের মাধ্যমে কৌশলে দখল করেই যাচ্ছে। বর্তমানে রিপনের তাণ্ডবে আমি মানবেতর জীবন যাপন করছি। আমার শ্বশুর নাজির হোসেন মিয়া এবং শাশুড়ি আনোয়ারা বেগমের একমাত্র সন্তান ছিলেন আমার স্বামী নূর মোহাম্মদ মিয়া। স্বামীর মৃত্যুর বহুকাল আগেই আমার শ্বশুর এবং শাশুড়ি মারা গেছেন আর আমিও নিঃসন্তান। সেই সুযোগে কামাল হোসেন নিজের তৈরি সন্ত্রাসী বাহিনী দ্বারা আমাকে এলাকা থেকে উচ্ছের এবং অবৈধভাবে আমার সম্পত্তি দখলের চেষ্টা করেই যাচ্ছে। ইতঃপূর্বে মুকসুদপুর থানায় কয়েক জনের নাম উল্লেখ করে অভিযোগ দায়ের করেছি এবং আমার জমি থেকে জোরপূর্বক ধান কেটে নেয়ার সময় এবং আমার ধানের জমিতে পুকুর কাটার সময় আমি ৯৯৯-এ ফোন করে সাহায্য চেয়েও আজ পর্যন্ত তার কোনো সুফল পাইনি। আমার সম্পত্তি দখলে নিতে কামাল হোসেন রিপন নানা লোকের মাধ্যমে আমার বিরুদ্ধে মামলাসহ নানাবিধ হয়রানির হুমকি দিচ্ছে। আমি বর্তমানে প্রাণহানিসহ জীবনের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি; উল্লেখ করেন সাংবাদিক মোশরিফা খান লাকি। একই সাথে স্থানীয় কামাল হোসেন রিপনসহ তার বাহিনীর কঠোর বিচার দাবি জানান।

এ দিকে বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের পারইহাটি গ্রামের স্থানীয় একাধিক লোক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, কামাল হোসেন রিপনসহ তারা তিন ভাই সরকারি চাকরি করেন। গত ১০ বছরে তারা শত কোটি টাকার সম্পত্তি করেছেন। এলাকায় নিরীহ লোককে ঠকিয়ে যাচ্ছেন। কেউ কোনো টুঁ শব্দ করতে পারছে না। তারা বলেন, নাজির হোসেনের একমাত্র সন্তান ছিল নূর মোহাম্মদ। নিঃসন্তান ছিল নূর মোহাম্মদ দম্পতি। ২০১৭ সালে মারা যাওয়ার পরে এ সম্পত্তি আস্তে আস্তে ভুয়া কাগজ করে দখলে নেয় ওই এনবিআর কর্মকর্তা। যেসব জমি দখলে নেয় তার দাগ, খতিয়ান, বিএস ও মৌজা উল্লেখ করা হলো দলীল নম্বর অনুযায়ী।


আরো সংবাদ



premium cement