০৫ অক্টোবর ২০২৪, ২০ আশ্বিন ১৪৩১,
`

বোটানিক্যাল গার্ডেনের প্রবেশমূল্য বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত অবিবেচনাপ্রসূত : আইপিডি

-

রাজধানীর মিরপুরের বোটানিক্যাল গার্ডেন, ওয়ারী এলাকার বলধা গার্ডেনসহ দেশের ছয় উদ্যান ও ইকোপার্কের প্রবেশমূল্য বাড়ানোয় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি)। উদ্যান-পার্কে সর্বজনীন ও অবাধ প্রবেশাধিকারের রাষ্ট্রীয় এবং বৈশ্বিক অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতির সাথে প্রবেশমূল্য কয়েক গুণ বাড়ানোর ঘটনাটি বৈসাদৃশ্যপূর্ণ এবং জনগণের বিনোদন ও জনস্বাস্থ্য সুবিধাদির সর্বজনীন ধারণার প্রতি বৈষম্যমূলক। এই পরিপ্রেক্ষিতে মিরপুরের বোটানিক্যাল গার্ডেন (জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান), ওয়ারী এলাকার বলধা গার্ডেন, কক্সবাজারের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক, মৌলভীবাজারের লাউয়াছড়া ইকোপার্ক, সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান, চট্টগ্রামের বাঁশখালী ইকোপার্ক এবং ময়মনসিংহ বন বিভাগের মধুটিলা ইকোপাকের্র প্রবেশমূল্য বাড়ানোর প্রস্তাবনা সংশ্লিষ্ট পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনটি বাতিল করার দাবি জানিয়েছে আইপিডি। উদ্যান-পার্কে সব শ্রেণী-পেশার মানুষের প্রবেশগম্যতা নিশ্চিত করতে প্রবেশমূল্যে অযাচিত মূল্য বৃদ্ধি অবিলম্বে বন্ধ করে জনসাধারণের জন্য যৌক্তিক প্রবেশমূল্য নির্ধারণেরও জোর দাবি জানাচ্ছে আইপিডি।

প্রতিষ্ঠানটি বলছে, আধুনিক নগর পরিকল্পনায় উদ্যান-পার্ক-খেলার মাঠকে বিনোদন সুবিধাদি বিবেচনার সাথে সাথে স্বাস্থ্য অবকাঠামো হিসেবে বিবেচনা করা হয়। যেসব শহরে যথাযথ পরিমাণ উদ্যান-পার্ক-খেলার মাঠ থাকে এবং জনগণের সেখানে অবাধ প্রবেশাধিকার আছে, সেই শহরের অধিবাসীদের জনস্বাস্থ্য তুলনামূলকভাবে ভালো থাকে। ফলে নগরের হাসপাতাল-ক্লিনিক প্রভৃতি স্বাস্থ্য অবকাঠামোয় চাপ পড়ে কম।
আইপিডি স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেছে, বাংলাদেশের সংবিধানের ১৫ ধারায় বিনোদনকে মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে এবং ১৭ ধারায় জনস্বাস্থ্যের উন্নতিসাধনকে অন্যতম প্রাথমিক কর্তব্য বলে বিবেচনা করতে বলা হয়েছে। একইসাথে সংবিধানের ১৯ ধারায় রাষ্ট্রকে সব নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। তা সত্ত্বেও বিগত বছরগুলোতে পার্ক-উদ্যান-খেলার মাঠে সাধারণ জনসাধারণের প্রবেশাধিকার ক্রমান্বয়ে সঙ্কুচিত হয়ে আসছে। পার্ক-উদ্যাননসহ বিভিন্ন গণপরিসরকে ইজারা দেয়ার নামে গোষ্ঠীস্বার্থ রক্ষা করা হয়েছে। পার্ক-উদ্যান-খেলার মাঠকে পুনঃউন্নয়নের নামে মাত্রাতিরিক্ত কংক্রিটের ব্যবহার করে সেগুলোর চরিত্রকে ধ্বংস করে, এমন নকশা প্রণয়ন করে উদ্যানের রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবস্থাপনাগত ব্যয় বাড়ানো হয়েছে। এর ফলে ইজারামূল্য বাড়ানোর পাশাপাশি অতিরিক্ত প্রবেশমূল্য নির্ধারণ করায় অনেক পার্ক-উদ্যান-ইকোপার্কে সাধারণ ও নিম্নবিত্ত মানুষের নিয়মিত প্রবেশ করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে।

আইপিডি বলছে, বোটানিক্যাল গার্ডেনসহ অন্যান্য উদ্যান-ইকোপার্ক আমাদের শিশু-কিশোর, শিক্ষার্থী-গবেষকসহ সবার জন্যই প্রকৃতিকে জানার ও প্রকৃতি থেকে শেখার জন্য উন্মুক্ত বিদ্যালয়। এসব উদ্যানের ‘প্রবেশমূল্য সবার জন্য সাশ্রয়ী’ হবে এই বিবেচনাটিই প্রাধান্য পাওয়া উচিত। একইসাথে উদ্যান-পার্কে প্রবেশের সময়সীমাকে সঙ্কোচনেরও কোনো সুযোগ নেই। এসডিজি প্রতিশ্রুত অন্তর্ভুক্তিমূলক নগর ও জনবসতি গড়তে উদ্যান-ইকোপার্ক থেকে কোনো ধরনের মুনাফা লাভের আকাক্সক্ষা রাষ্ট্রের থাকা উচিত নয়। সংবিধানে প্রতিশ্রুত সুযোগের সমতা এবং বিনোদন ও জনস্বাস্থ্যের অধিকার নিশ্চিত করতে উদ্যান-ইকোপার্কের অতিরিক্ত প্রবেশমূল্য কমানোর জোর দাবি জানাচ্ছে আইপিডি।

 


আরো সংবাদ



premium cement