০৬ জুলাই ২০২৪, ২২ আষাঢ় ১৪৩১, ২৯ জিলহজ ১৪৪৫
`

ঢাকাকে বাসযোগ্য করতে প্রয়োজন নগর সুশাসন ও সংস্থাগুলোর সমন্বয়

বিআইপির সুপারিশ
-

ঢাকাকে বাসযোগ্য করতে শুধু বড় প্রকল্প নয়, নগর সুশাসন ও নগর সংস্থাগুলোর সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন বলে সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি)। গতকাল বুধবার বাংলামোটরের বিআইপি টাউয়ারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ঢাকাকে বাসযোগ্য করে গড়ে তুলতে আরো কিছু সুপারিশ করা হয়। এতে বলা হয়, ঢাকাকে বাসযোগ্য করতে বিগত সময়ে বড় ধরনের প্রকল্পে বিনিয়োগকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। কম গুরুত্ব দেয়া হয়েছে নগর সুশাসন, উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর কার্যকর সমন্বয়, সেবা সংস্থাগুলোর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা, উন্নয়ন পরিকল্পনায় কমিউনিটির অংশগ্রহণ এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠাসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে। বিআইপি বলছে, ঢাকার যানজট ও বায়ু-পানিসহ পরিবেশদূষণ ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সাশ্রয়ী, কার্যকর ও টেকসই সমাধান বের না করতে পারলে ঢাকা বাসযোগ্য হবে না।
‘বাসযোগ্যতা সূচকে ঢাকা কেন এত পিছিয়ে’ শীর্ষক সেমিনারে নগর পরিকল্পনাবিদরা উপরি উক্ত মতামত প্রদান করেন। বিআইপি সাধারণ সম্পাদক পরিকল্পনাবিদ শেখ মুহম্মদ মেহেদী আহসানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ পরিবেশন করেন বিআইপি সভাপতি পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান। আরো বক্তব্য রাখেন বিআইপির সাবেক সভাপতি ড. আকতার মাহমুদ, পরিকল্পনাবিদ মোহাম্মদ ফজলে রেজা সুমন, পরিকল্পনাবিদ মুহাম্মদ আরিফুল ইসলাম প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, ঢাকা শহরের বেশির ভাগ এলাকা অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠায় নাগরিক সুবিধা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। পাশাপাশি জনঘনত্বের বৈশ্বিক মানদণ্ডের তিন-চারগুণ জনসংখ্যা এই শহর ধারণ করে। ফলে শহরে বাসযোগ্যতার উন্নতি হচ্ছে না। তবে নাগরিক সুবিধা বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন নগর সংস্থাগুলোর উদ্যোগ আছে, যার মাধ্যমে নতুন করে নাগরিক সুবিধা তৈরি করা হয়। কিন্তু নতুনভাবে যুক্ত সুবিধার চেয়েও কয়েক গুণ বেশি নতুন জনসংখ্যা ঢাকা শহরে নানা প্রয়োজনে চলে আসে। নাগরিক সুবিধা ও মোট জনসংখ্যার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না বলে এই নগরী বাসযোগ্যতা হারাচ্ছে।
ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, মেট্রোরেলের পাশাপাশি গণপরিবহনব্যবস্থার উন্নয়ন করা প্রয়োজন। এজন্য মানসম্মত বাস সার্ভিস ও প্যারা ট্রানজিট সার্ভিস নিশ্চিত করে হাটার উপযোগী ফুটপাথ নিশ্চিত করতে হবে। একই সাথে এলাকাভিত্তিক সবার জন্য খেলার মাঠ-পার্ক-উদ্যান তৈরি করা এবং বিদ্যমান সুবিধাদীগুলো সকলের জন্য উন্মুক্ত থাকতে হবে। এ ছাড়া আবাসিক এলাকায় পর্যাপ্ত নাগরিক সুবিধাদি নিশ্চিত করতে পরিকল্পনার মানদণ্ড (প্ল্যানিং স্ট্যান্ডার্ড) সংশোধন করা, আবাসিক এলাকায় অনুমোদনহীন শিল্প কারখানা-গুদাম প্রভৃতি সরানোর উদ্যোগ নেয়া, প্রয়োজনের নিরিখে নি¤œবিত্ত ও নি¤œমধ্যবিত্তদের মানসম্মত আবাসন নিশ্চিত করতে নীতিমালা তৈরি করা এবং ভূমি বরাদ্দ ও সাশ্রয়ী আবাসন প্রকল্প গ্রহণ করা দরকার। বিআইপি সাধারণ সম্পাদক পরিকল্পনাবিদ শেখ মুহম্মদ মেহেদী আহসান বলেন, বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নীতি এবং সেগুলোর লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য বাসযোগ্যতার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। সামগ্রিক পরিবেশের কথা ভেবে পরিকল্পনা করলে ঢাকা শহরের বাসযোগ্যতা বাড়ানো সম্ভব।

বিআইপির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ বলেন, এলাকাভিত্তিক প্রাথমিক বিদ্যালয় ও প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করবার জন্য প্রয়োজন পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন। শহরের বিশাল জনগোষ্ঠীকে বস্তিতে রেখে বাসযোগ্যতার উন্নতি করা সম্ভব নয়। পরিকল্পনাবিদ মোহাম্মদ ফজলে রেজা সুমন বলেন, বিগত এক যুগে অবকাঠামোতে প্রচুর বিনিয়োগের পরও ঢাকার সূচকে কোনো উন্নতি হয়নি। গণপরিবহন নিয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে, ফুটপাথ ও রোড নেটওয়ার্ক বৃদ্ধিতে সংস্থাগুলোকে আরো মনোযোগী হওয়ার জন্য আহ্বান জানান তিনি। পরিকল্পনাবিদ মুহাম্মদ আরিফুল ইসলাম বলেন, ঢাকার বসবাসযোগ্যতা বাড়াতে বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা কার্যকর ভূমিকা রাখতে সক্ষম হলেও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতার অভাবে এই পরিকল্পনার পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন সম্ভব হচ্ছে না।


আরো সংবাদ



premium cement