০৫ জুলাই ২০২৪, ২১ আষাঢ় ১৪৩১, ২৮ জিলহজ ১৪৪৫
`

মূল্যায়ন পদ্ধতিতে মেধা যাচাইয়ে আস্থা পাচ্ছেন না অভিভাবকরা

নতুন শিক্ষাক্রম
-

নতুন শিক্ষাক্রমে এসএসসি পরীক্ষার মূল্যায়ন কাঠামো নিয়ে অভিভাবকদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। বর্তমান সময়ের গ্রেডিং পদ্ধতি বাতিল করে বর্ণমালা দিয়ে শিক্ষার্থীদের মেধার মূল্যায়নে আস্থা পাচ্ছেন না অভিভাবকদের অনেকেই। নতুন এই মূল্যায়ন পদ্ধতি নিয়েও অসন্তুষ্টির কথা জানিয়েছেন তারা।
গত সোমবার নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী কেন্দ্রভিত্তিক পাবলিক পরীক্ষার (এসএসসি) মূল্যায়ন কাঠামো চূড়ান্ত করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, লিখিত অংশের ওয়েটেজ হবে ৬৫ শতাংশ এবং কার্যক্রমভিত্তিক অংশের ওয়েটেজ ৩৫ শতাংশ। একেকটি বিষয়ের মূল্যায়ন হবে সর্বোচ্চ এক স্কুল দিবস (দিনে যতক্ষণ স্কুল চলে)। আগের মতো জিপিএর ভিত্তিতে ফল প্রকাশ হবে না। এনসিটিবি সূত্র জানিয়েছে, শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নে গ্রেড পদ্ধতি বাতিল করে মেধা যাচাইয়ের জন্য ৭টি স্কেলের ঘরে আলাদা ইংরেজি বর্ণ দিয়ে বোঝানো হবে। অবশ্য এই লেটার গ্রেড নম্বরের ভিত্তিতে হবে না।
নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী, মূল্যায়ন কাঠামোতে একেকটি বিষয়ে ৫ ঘণ্টায় পরীক্ষা নেয়ার কথা প্রস্তাবনায় থাকলেও সোমবারের এনসিসিসির সভায় এ বিষয়ে আরো নমনীয় হওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এ ক্ষেত্রে প্রতিটি বিষয়ে সর্বোচ্চ এক স্কুল দিবসে মূল্যায়নের সিদ্ধান্ত হয়। মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলের একজন শিক্ষার্থীর অভিভাবক জানান, গ্রেড পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের মেধার একটি স্তর নির্ধারণ করা সহজ হতো। শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভালো রেজাল্ট বা গ্রেড পাওয়ার জন্য একটা প্রতিযোগিতাও থাকত। কিন্তু নতুন প্রবর্তিত পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে মেধার কোনো প্রতিযোগিতা থাকবে না।

এদিকে নতুন শিক্ষাক্রমে মূল্যায়ন কাঠামোর খসড়ায় বলা হয়েছিল, শিক্ষার্থীর নির্ধারিত পারদর্শিতা অনুযায়ী ৭টি স্কেল বা সূচকে ফল বা রিপোর্ট কার্ড প্রকাশ করা হবে। এই ৭ স্কেলের নাম হবে অনন্য, অর্জনমুখী, অগ্রগামী, সক্রিয়, অনুসন্ধানী, বিকাশমান ও প্রারম্ভিক। যেমন সর্বোচ্চ স্কেল ‘অনন্য’ বলতে বোঝানো হবে শিক্ষার্থী সব বিষয়ে পারদর্শিতার চূড়ান্ত স্তর অর্জন করেছে। প্রারম্ভিক স্তর বলতে পারদর্শিতার সবচেয়ে নিচের স্তরকে বোঝানো হবে। অভিভাবকদের অভিব্যক্তি হলো এসএসসিতে ফেল করার পরেও যদি শিক্ষার্থীকে কলেজে ভর্তির সুযোগ দেয়া হয় তাহলে আমাদের সন্তানদের মধ্যে পড়াশোনার কোনো ইচ্ছাই আর থাকবে না। কেননা শিক্ষার্থীরা ধরেই নেবে যে ফেল করলেও সে কলেজে ভর্তি হতে পারবে এবং পরবর্তী এক’ বা দুই বছর পরেও তার পরীক্ষা দিয়ে পাস করার সুযোগ আছে। নতুন মূল্যায়ন পদ্ধতিতে বলা হয়েছে প্রথমবার ফেল করার পরেও পরবর্তী সময়ে এসএসসি পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ বিষয়ে পাস করতে হবে। আর তিন বা তার বেশি বিষয়ে অনুত্তীর্ণ হলে একাদশ শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হওয়া যাবে না। কোনো বিষয়ে একের বেশি পারদর্শিতার ক্ষেত্রে ‘প্রারম্ভিক’ স্তরে থাকলে শিক্ষার্থী ওই বিষয়ে উত্তীর্ণ হিসেবে বিবেচিত হবে না। লিখিতি ও কার্যক্রমভিত্তিক এই দুই ভাগে মূল্যায়ন হলেও প্রশ্নের ধরন এখনকার মতো থাকছে না।
নতুন নিয়মে শুধু দশম শ্রেণীর পাঠ্যসূচির ভিত্তিতে হবে এসএসসি পরীক্ষা। পদ্ধতিগত পরিবর্তন থাকলেও এখনকার মতো শিক্ষা বোর্ডগুলোর অধীনেই কেন্দ্রভিত্তিতে হবে এই পরীক্ষা বা মূল্যায়ন। বর্তমান মূল্যায়ন পদ্ধতিতে নবম শ্রেণী থেকেই শিক্ষার্থীদের মধ্যে পড়াশোনায় মনোযোগী হতে দেখা গেলেও নতুন শিক্ষাক্রমে যেহেতু এসএসসির মূল্যায়ন হবে শুধু দশম শ্রেণীর পাঠ্যসূচি অনুযায়ী তাই আগে থেকে তারা পড়াশোনায় মন দেবে না।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি জিয়াউল কবির দুলু গতকাল নয়া দিগন্তকে বলেন, নতুন মূল্যায়ন পদ্ধতি নিয়ে অনেক অভিভাবকের মধ্যেই কিছুটা সন্দেহ সংশয় কাজ করছে। এসএসসির মূল্যায়ন শুধুমাত্র দশম শ্রেণীতে হলে নবম শ্রেণীতে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করবে না অথবা তারা কম মনোযোগী হবে। এখন যেমন নবম শ্রেণী থেকেই প্রত্যেক শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকরাও সতর্ক থাকেন পরীক্ষায় ভালো করতে হবে কিন্তু নতুন মূল্যায়ন পদ্ধতিতে নবম শ্রেণীতে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার চাপ অনুভব করবে না।
উল্লেখ্য গত বছর প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীতে নতুন শিক্ষাক্রম শুরু হয়েছে। চলতি বছর দ্বিতীয়, তৃতীয়, অষ্টম ও নবম শ্রেণীতেও চালু হয় এ শিক্ষাক্রম। ২০২৭ শিক্ষাবর্ষে দ্বাদশ শ্রেণীতে চালু হবে নতুন শিক্ষাক্রম। বর্তমানে যেসব শিক্ষার্থী নবম শ্রেণীতে পড়ছে, তারাই প্রথমবারের মতো নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী এসএসসি পরীক্ষা দেবে। নতুন শিক্ষাক্রমে এসএসসি পরীক্ষা ২০২৬ সালের জানুয়ারিতে।
এনসিটিবির চেয়ারম্যানের রুটিন দায়িত্বে থাকা অধ্যাপক মো: মশিউজ্জামান মনে করেন নতুন মূল্যায়ন পদ্ধতি নিয়ে প্রথম দিকে কিছুটা অসঙ্গতি মনে হলেও এক দুই বছর পরে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যেও কোনো বিভ্রান্তি আর থাকবে না। এ ছাড়া আমাদের মূল্যায়ন পদ্ধতিতে যেসব বিষয়ে এনসিটিবি কৌশল ঠিক করেছিল, সেখানে কিছু সংশোধনী নিয়ে এনসিসিসির সভায় অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এখন কার্যপত্র হলে সবাইকে তা জানিয়ে দেয়া হবে।


আরো সংবাদ



premium cement