০৫ জুলাই ২০২৪, ২১ আষাঢ় ১৪৩১, ২৮ জিলহজ ১৪৪৫
`

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ঝুঁকিতে দেশের স্বাস্থ্য ও কৃষি

-

বাংলাদেশের তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ঝুঁকিতে আছে স্বাস্থ্য ও কৃষি খাত। দেশের ইতিহাসে গত ৫২ বছরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৩.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয় এবার। যদি তাপমাত্রা বৃদ্ধির বর্তমান প্রবণতা অব্যাহত থাকে তাহলে ২০৩০ সালের মধ্যে তাপমাত্রা ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস অতিক্রম করতে পারে। অনুমান অনুযায়ী ২০৫০ সালের মধ্যে তা ৪৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোস্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন-এসডোর গবেষণায় এমন তথ্য উঠে এসেছে। গতকাল উইমেনস ভলান্টারি অ্যাসোসিয়েশন (ডব্লিউভিএ) অডিটোরিয়ামে এ সংক্রান্ত গবেষণার ফলাফল তুলে ধরেন এসডোর গবেষকরা। এর ফলাফলগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবগুলোকে তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণ হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে।
গবেষণায় বাংলাদেশে তাপমাত্রা বৃদ্ধির পেছনে চারটি প্রধান কারণ দায়ী বলে উল্লেখ করা হয়। সেগুলো হলো- বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান; জলবায়ুর পরিবর্তন; জীবাশ্ম জ্বালানি এবং শিল্পকারখানা থেকে কার্বন নির্গমন বৃদ্ধি, যা গ্রিন হাউজ গ্যাস বৃদ্ধিতে সহায়তা করে এবং এল নিনো ইভেন্টের মতো মহাসাগরীয় প্রভাব। এই কারণগুলো সম্মিলিতভাবে সাম্প্রতিক তাপপ্রবাহকে আরো তীব্র করে তুলেছে। এসডোর গবেষণা বলছে, মানুষের পরিবেশ বিরোধী কার্যকলাপের কারণে দ্রুত গতিতে জলবায়ু পরিবর্তন এবং প্রতিদিন তাপ প্রবাহ বাড়ছে, যার ফলে পৃথিবী দ্রুত শীতল থেকে উষ্ণতর সময়ে রূপান্তরিত হচ্ছে। বাংলাদেশে, এই পরিবর্তনের ফলে প্রায়ই তীব্র তাপপ্রবাহ হচ্ছে, যেখানে দৈনিক সর্বোচ্চ এবং সর্বনি¤œ তাপমাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ছে, বিশেষ করে শীতকালে। যদি এই প্রবণতা নিয়ন্ত্রণ না করা হয়, তবে ভবিষ্যতে উষ্ণ সময় মানবজাতির জন্য অসহনীয় হয়ে উঠতে পারে। যদিও আমরা এই প্রাকৃতিক অগ্রগতিকে থামাতে পারব না, কিন্তু আমরা বিশ্ব উষ্ণনায়নে অবদান রাখে এমন কার্যকলাপগুলো কমিয়ে এবং কার্যকর ব্যবস্থা বাস্তবায়নের মাধ্যমে এর প্রভাব হ্রাস করা সম্ভব। এর মধ্যে রয়েছে পরিবেশবান্ধব কৃষি উৎপাদন ও নগর পরিকল্পনা করা এবং উচ্চ তাপমাত্রার হুমকি থেকে মানুষকে রক্ষা করার জন্য স্বাস্থ্যসেবা জোরদার করা। এই তীব্রতর অবস্থার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের অবস্থান শক্ত করতে আন্তর্জাতিক সমর্থন এবং তহবিল জরুরি।

গবেষণায় আরো জানা যায়, ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় উচ্চ তাপপ্রবাহের কারণে অনেকেই স্বাস্থ্য সমস্যায় ভোগেন কিন্তু এই সমস্যা মোকাবেলার বিষয়ে তাদের সচেতনতার অভাব রয়েছে। ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা ইতোমধ্যে উল্লেখযোগ্যভাবে কৃষি খাতে ক্ষতিসাধন করছে, যেমন ২০২১ সালের তাপপ্রবাহে ২১ হাজার হেক্টরের বেশি ধান নষ্ট হয়েছে।
এসডোর চেয়ারপারসন ও সরকারের সাবেক সচিব সৈয়দ মার্গুব মোর্শেদ বলেন, ‘এসডো পূর্ববর্তী তথ্যের ওপর ভিত্তি করে এই গবেষণাটি করেছে এবং যদি তাপপ্রবাহের এই প্রবণতা অব্যাহত থাকে তবে ভবিষ্যতে তাপমাত্রা আমাদের জন্য অসহনীয় হবে। গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমন কমানোর মাধ্যমে তাপপ্রবাহ প্রবণতা কমানো সম্ভব এবং এই লক্ষ্যে দীর্ঘমেয়াদি নীতি বাস্তবায়ন করা জরুরি।’
এসডোর মহাসচিব ড. শাহরিয়ার হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশে বর্তমানে যে চরম তাপপ্রবাহ চলছে, যার তাপমাত্রা ইতোমধ্যে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ছাড়িয়ে গেছে। এর ফলে লাখ লাখ মানুষের স্বাস্থ্য সমস্যাসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলো গুরুতর সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে।’
এসডোর নির্বাহী পরিচালক সিদ্দীকা সুলতানা বলেন, ‘বাংলাদেশে চলমান তাপপ্রবাহ স্বাস্থ্য, কৃষি এবং জীবিকা নির্বাহের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে। চলমান পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে এবং আমাদের ভবিষ্যতকে সুরক্ষিত করার জন্য বর্তমান উচ্চ তাপমাত্রাকে কমিয়ে আনার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।’


আরো সংবাদ



premium cement