মোবাইল ব্যাংকিং অপারেটরগুলোকে আইনের আওতায় আনা উচিত
ই-মানি ট্রানজেকশন অপরাধ প্রসঙ্গে সিআইডি প্রধান- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ০১ জুলাই ২০২৪, ০১:১৫
সন্দেহজনক লেনদেন বা ই-মানি ট্রানজেকশন অপরাধের জন্য মোবাইল ব্যাংকিং অপারেটরগুলোকে আইনের আওতায় আনা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন পুলিশের সিআইডি প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ আলী মিয়া। তিনি বলেন, বিকাশ, নগদ রকেট বা উপায় যেটাই হোক, এদের সরাসরি বা পরোক্ষভাবে এজেন্ট বিতরণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো অপরাধ করছে। এসব এমএফএস বা মোবাইল ব্যাংকিং অপারেটরগুলোকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা খুবই জরুরি। যাদের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানগুলো অর্থ লেনদেন করে তাদেরও আইনের আওতায় আনা উচিত।
গতকাল রোববার দুপুরে সিআইডি সদর দফতরে ‘সাবমিশন অব রিসার্চ রিপোর্ট অন চ্যালেঞ্জ অব কন্ট্রোলিং ইলিগ্যাল মানি ট্রান্সফার থো মোবাইল অ্যাপস : এ স্টাডি অন অনলাইন গ্যাম্বলিং’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
সিআইডি প্রধান বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মানিলন্ডারিংয়ের ডেটা থাকলেও বাংলাদেশে পাচারসহ অর্থনৈতিক অপরাধ নিয়ন্ত্রণে সুনির্দিষ্ট ডেটা নেই। অর্থপাচার রোধে জরুরি ভিত্তিতে একটি কেন্দ্রীয় ডেটা সেন্টার প্রয়োজন। বিশেষ করে ফিন্যান্সিয়াল সাইটের জন্য। যেখানে সিআইডির প্রবেশাধিকার থাকবে। আগে সিআইডিসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান পরিচালনা ও ডিভাইস জব্দসহ অপরাধীদের গ্রেফতার করতে পারত। কিন্তু নতুন সাইবার নিরাপত্তা আইনে অবৈধ অর্থ পাচারের ধারায় এখন সেটি সম্ভব হচ্ছে না। আমরা সহজে কিছু করতে পারছি না। নতুন আইন হওয়ার পর অনলাইন গ্যাম্বলিংয়ের অভিযোগে কোনো মামলা হয়নি। অথচ অনলাইন গ্যাম্বলিংয়ে অবৈধভাবে অর্থপাচার বাড়ছে।
তিনি বলেন, আমাদের একটা ট্র্যাডিশনাল আইন আছে। প্রকাশ্যে যারা জুয়া খেলে, তিন বা চার তাস... এর শাস্তি ছিল ৫০/১০০ টাকা জরিমানা। কিন্তু এখন যেটা হচ্ছে সেটি অনলাইন জুয়া, যা অনলাইন ভিক্তিক অপরাধ। এটা নিয়ন্ত্রণে কিন্তু দেশে আলাদা কোনো আইন নেই। যে আইনটা ধরে আমরা কাজ করেছি, সেটি হলো সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট। সেটিতে বলা হয়েছে, অবৈধ ই-মানি ট্রানজেকশন। এই ধারা তখন ছিল কগনিজেবল। এখন সেটি ননকগনিজেবল করা হয়েছে। অর্থাৎ প্রমাণের আগে পুলিশ কাউকে ধরতে না পারায় বিষয়টি এখন আমাদের জন্য অনেক কঠিন।
তিনি বলেন, ই-মানির ক্ষেত্রে যখন কোনো বিতরণকারী প্রতিষ্ঠান মোবাইল ব্যাংকিংয়ে টাকা প্রেরণ করে তখন কিন্তু টাকার সোর্স তারা কখনো দেখে না। এজেন্টরা যখন টাকা মাঠ থেকে বিতরণকার প্রতিষ্ঠানকে দেয় তখন তারাও কিন্তু যাচাই করে না, এজেন্ট কেন কিভাবে কী উদ্দেশ্যে ই-মানি বেশি নিচ্ছে। এই টাকা সে কোথায় পেলো, খতিয়ে দেখে না। আমরা সিআইডি এখন এই জায়গায় হাত দিয়েছি। আমরা এজেন্টদের সোর্স অব ইনকাম, কেন বেশি টাকা ই-মানি করতে চাইছে? এটা কি বৈধ না অবৈধ আয়ের টাকা? এটা কি তারই না অন্য কারো বা অন্য কোনো উদ্দেশ্যে করা হচ্ছে? কারণ বৈদেশিক রেমিট্যান্স বণ্টন করে দিয়ে বাংলাদেশী টাকা বাংলাদেশেই সার্কুলার করা হচ্ছে। এই বিষয়গুলো আমরা খতিয়ে দেখছি। ইতোমধ্যে বেশ কিছু মামলাও হয়েছে।
সিআইডি প্রধান বলেন, যেসব তথ্য আমরা পাচ্ছি তা বেশ কষ্টকর যে, আমাদের প্রবাসীদের অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রা (ডলার/রিঙ্গিত/রিয়াল) বাংলাদেশে ঢুকছে না। এগুলো দুবাইসহ অন্য সব দেশে থেকে যাচ্ছে। সেখানকার নির্দেশনা অনুযায়ী এজেন্টগুলো বিভিন্ন সোর্সের মাধ্যমে টাকা নিয়ে বিতরণ প্রতিষ্ঠানগুলোকে নগদ, বিকাশ, রকেট বা উপায়কে দিয়ে ই-মানি করে বিতরণ করা হচ্ছে। এই জায়গায় হাত দেয়ার পর আমরা দেখছি ইতঃপূর্বে এসব প্রতিষ্ঠান আনটাচ ছিল। সঙ্গত কারণে তারা অনেক অপরাধ করেছে।
এক প্রশ্নের জবাবে মোহাম্মদ আলী মিয়া আরো বলেন, আমাদের ক্রিমিনাল ডেটাবেইজ নেই। সন্দেহজনক লেনদেন ধরারও আমাদের কোনো অ্যাকসেস নেই। বাংলাদেশ ব্যাংকের ড্যাশ বোর্ডে যদি আমাদের লোক থাকে তাহলে আমরা সন্দেহজনক লেনদেন দেখলেই দ্রুত ব্যবস্থা বা অপারেশন করতে পারি। কিন্তু বিএফআইইউ সেটা করতে পারে না। তারা তথ্য পেলে সিআইডিকে জানায়, তারপর কার্যক্রম শুরু। এজন্য সিআইডির এসব জায়গায় অ্যাকসেস থাকলে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ আছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা