১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

সামাজিক সুরক্ষা খাতে বরাদ্দের দাবি গার্মেন্টশ্রমিক সংহতির

-


অর্থ পাচারকারী-অপ্রদর্শিত-অবৈধ সম্পদ মালিকদের বাজেটে কর ছাড় বাতিল এবং পোশাক শ্রমিক ও নিম্ন আয়ের জনগণের জন্য রেশনিং ও সামাজিক সুরক্ষা খাতে বরাদ্দের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতি। গতকাল শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এ বিক্ষোভ হয়।
কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক বাবুল হোসেনের সঞ্চালনায় বিক্ষোভ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সভাপ্রধান তাসলিমা আখতার। বক্তব্য রাখেন সহসাধারণ সম্পাদক এফ এম নুরুল ইসলাম, সম্পাদক প্রবীর সাহা, সহসাংগঠনিক সম্পাদক জিয়াদুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় নেতা শামীম হোসন, হযরত বিল্লাল, আকলিমা বেগম, আসলাম শিকদার ও আঞ্চলিক নেতারা। তারা বলেন, সাত লাখ ৯৭ হাজার টাকার দেশের ৫৩তম প্রস্তাবিত বাজেট রফতানি আয়ের শীর্ষ খাতের কারিগর পোশাক শ্রমিকসহ শ্রমজীবীদের জীবনে স্বস্তির সুবাতাস আনতে পারেনি। এনেছে দুর্ভোগ আর অনিশ্চয়তার শঙ্কা।

বাজেটে দ্রব্যমূল্যের কশাঘাত থেকে রক্ষা করতে কোনো সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেই। পোশাক শ্রমিক ও শ্রমজীবীদের জন্য রেশনিং, আবাসনসহ শ্রম খাতে বাজেটে বরাদ্দর দাবি দীর্ঘ দিন থেকে উঠলেও প্রস্তাবিত বাজেটে তার ছাপ নেই। নেই, দেশের জনগণ ও সৎ করদাতার স্বস্তি বা মূল্যস্ফীতির লাগাম টানার উদ্যোগ। উল্টো অপ্রদর্শিত আয় ও অবৈধ সম্পদের মালিক ও পাচারকারীদের জন্য আছে প্রশ্নাতীত কর ছাড়। বৈধ ও প্রদর্শিত আয়কারীদের সর্বোচ্চ কর ৩০ শতাংশ অন্য দিকে অবৈধ-অপ্রদর্শিত সম্পদ মালিকদের কর মাত্র ১৫ শতাংশ। ফলে নিয়মিত বৈধ সৎ করদাতাদের উপর চাপ বাড়বে।
নেতারা বলেন, এই বিশেষ ছাড় ক্ষমতাবান বিশেষ ব্যক্তি-গোষ্ঠী-প্রতিষ্ঠানকে সরকারের ছত্রছায়ায় রক্ষা পাওয়ার সুযোগ তৈরি করে দিচ্ছে। সরকারের জবাবদিহিতাহীন, অস্বচ্ছ অগণতান্ত্রিক সব তৎপরতাকে টিকিয়ে রাখতেই দুর্নীতিগ্রস্তদের সুযোগ দেয়া হয়েছে। যা বাজেটে আরেকবার সামনে এসেছে। অথচ শ্রমজীবীদের বর্তমান বাজারে বেঁচে থাকাই দায় হয়েছে।

তারা অবিলম্বে পাচারকারী-অপ্রদর্শিত-অবৈধ সম্পদ মালিকদের তোষণ বন্ধ করে প্রস্তাবিত বাজেটে কর ছাড় বাতিল করার আহ্বান জানান।
সেই সাথে পোশাক শ্রমিকসহ নিম্ন আয়ের জনগণের জীবন মানোন্নয়নে এবং শ্রম খাতে যথাযথ নির্দিষ্ট বরাদ্দর দাবি জানান।
তারা বলেন, বর্তমানে বাজারে দ্রব্যমূল্যর ঊর্ধ্বগতিতে জনগণের জীবন নাভিশ্বাস চরমে পৌঁছেছে। বাজার সিন্ডিকেট দ্বারা লাগাহীনভাবে নিয়ন্ত্রিত। দ্রব্যমূল্য জনগণের ক্রয়সীমার বাইরে চলে গেছে। পোশাক শ্রমিকরা যে ১২ হাজার ৫০০ টাকা মজুরি পান তা তাদের মৌলিক চাহিদা পূরণে ব্যর্থ। অক্লান্ত পরিশ্রম করে ওভার টাইম করেও তারা জীবন নির্বাহ করতে পারছে না। সুচিকিৎসারও ব্যবস্থা নেই। দেশে কোনো জাতীয় ন্যূনতম মজুরি নেই। এই পরিস্থিতিতে পোশাক শ্রমিকসহ শ্রমজীবীদের জীবন রক্ষায় বাজেটে বরাদ্দ রাখা এখন তাই সময়ের দাবি।

নেতারা আরো বলেন, বর্তমানে অনিয়ন্ত্রিত মূল্যস্ফীতির নিষ্ঠুরতা ভাগীদার হবে নিম্ন আয়ের মানুষরা। মূল্যস্ফীতি সরকারের ভাষ্য অনুযায়ী ৯ শতাংশ। অন্য দিকে বিআইডিএসের মতে ১৫ শতাংশ সিপিডির মতে ২০ শতাংশের বেশি। এর জন্য জীবনে চড়া দাম দিতে হবে শ্রমজীবীকে। এক দিকে মুদ্রাস্ফীতি অন্য দিকে দুই লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা ঘাটতি বাজেট এবং ঋণের সুদে পরিশোধে মোট বাজেটের ১৪.৪ শতাংশ বরাদ্দ প্রস্তাব অর্থনীতিকে এবং সাধারনের জীবনকে আরো বিপদে নিয়ে যাবে। ‘ঋণের ফাঁদে আটকে পরোক্ষ করের বোঝায় জর্জরিত হবে নিম্ন আয়ের মানুষ।
নেতারা আরো বলেন, এই সঙ্কট থেকে মুক্ত হতে সামাজিক সুরক্ষা খাতে বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনকারী পোশাক শ্রমিকসহ শ্রমজীবীদের রেশনিং, ফ্যামিলি কার্ড ও শ্রম খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি ছাড়া পথ খোলা নেই। গত ২৩-২৪ অর্থ বছরে এক কোটি ফ্যামিলি কার্ড বা আগামীতে কাদের এই কার্ড দেয়া হবে তা জনগণের কাছে অস্পষ্ট। যতদূর জানা যায়, ক্ষমতাসীন সরকারের দলীয় সুবিধা ও ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে এগুলো ব্যবহৃত হয়। তাই এই বাজেটে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার সাথে বাজেটে রেশনিং ও অন্যান্য সামাজিক সুরক্ষার খাতে বরাদ্দ দাবি জানান তারা।

শ্রমিক নেতারা বলেন, সামাজিক সুরক্ষা খাতের শ্রমজীবীদের কিছুটা স্বস্তির জায়গা তৈরি করতে পারত। কিন্তু শুভঙ্করের ফাঁকি আছে এ খাতেও। এই খাত থেকে সরকারি চাকরিজীবীদের পেনশন, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা, স্কুল-কলেজ শিক্ষা বৃত্তি, সিটি করপোরেশনের কর্মচারীদের কলোনি নির্মাণ, চাকরিরত অবস্থায় সরকারি কর্মকর্তাদের পেনশন, আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা ইত্যাদিতে বরাদ্দ দেয়া হয়। অথচ নিম্ন আয়ের পোশাক শ্রমিক ও শ্রমজীবীদের জোটে না কিছুই। টাকার অঙ্কে সামাজিক সুরাক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়লেও তা সাধারণ মানুষের দোড় গোড়ায় পৌঁছায় না। বর্তমান বাজেটে সামাজিক সুরক্ষা খাত থেকে পোশাক শ্রমিকসহ শ্রমজীবীর জন্য বরাদ্দ বাড়াতে হবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement