প্রভাবশালীদের নামে অবৈধ দখল ফুঁসে উঠছেন বেরাইদবাসী
সরকারের দুর্নীতিবিরোধী পদক্ষেপ- আমিনুল ইসলাম
- ২৩ জুন ২০২৪, ০২:৩১
প্রভাবশালীদের নাম ভাঙ্গিয়ে জোর করে দখলে নেয়া সম্পত্তি ফিরে পেতে ফুঁসে উঠছেন রাজধানীর বেরাইদ পূর্ব হারারদিয়া চিনিদিয়ার বাসিন্দারা। এতদিন ভয়ে চুপসে থাকলেও সম্প্রতি প্রভাবশালীদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের নেয়া নানা পদক্ষেপে উজ্জীবিত হয়ে উঠেছেন ভুক্তভোগীরা। তারা বলছেন, সাবেক সেনাপ্রধানের ভাই ও সাবেক এমপির প্রভাব ঘাটিয়ে নামমাত্র মূল্যে ৬০ থেকে ৭০ বিঘা জমি কিনলেও জোর করে ৭৫০ বিঘা জমি দখলে নিয়েছে একটি চক্র। খাল-বিল-জলাশয় এমনকি মসজিদের জমিও ছাড়েনি চক্রটি। তবে সরকারের দুর্নীতিবিরোধী পদক্ষেপ নেয়ায় ইতোমধ্যে বিভিন্ন জমি থেকে সাইনবোর্ড সরাতে শুরু করেছে অবৈধ দখলদারিরা।
অভিযোগ উঠেছে সাবেক সেনাপ্রধানের ভাই হাসান হারিস আহম্মেদ ও ঢাকা-১১ আসনের সাবেক এমপি এ কে এম রহমতুল্লাহর ছেলে হেদায়েত উল্লাহ রণের নাম ভাঙ্গিয়ে এলাকায় বিভিন্ন জমিতে সাইনবোর্ড লাগিয়েছিল অ্যাপেক্স গ্রুপ নামে একটি প্রতিষ্ঠান। এছাড়াও দু’জনের নামেও কয়েকটি সাইনবোর্ড রয়েছে। শুধু সাধারণ জনগণের জমিতে নয়, মসজিদের জমি খাল বিল পর্যন্ত রেহাই পায়নি তাদের করাল গ্রাস থেকে। কিন্তু সম্প্রতি সরকারের দুর্নীতিবিরোধী নানা পদক্ষেপে ভয়ে দখলদার বাহিনী কিছু কিছু জায়গায় সাইনবোর্ড নামাতে বাধ্য হচ্ছে।
ভুক্তভোগীরা জানান, বাড্ডার সাঁতারকুলে মগারদিয়ার পূর্ব হাররদিয়া মৌজায় প্রায় ২৩৫ বিঘা জমি দখলে রয়েছে হারিছ আহমেদ ও রনের দখলে। বাড্ডা মডেল টাউনের ২৩৫ বিঘা জমির বড় বড় খণ্ডগুলোতে বিশাল বিশাল সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। কালো রঙের সাইনবোর্ডে সাদা কালিতে লেখা রয়েছে এই সম্পত্তির মালিক হাসান হারিছ আহমেদ ও হেদায়েত উল্লাহ রন। তবে সাইনবোর্ডে জমির পরিমাণ ও দাগ খতিয়ান কিছুই লেখা নেই। কিছু কিছু সাইনবোর্ডে আবার হারিছ আহমেদের সাথে অ্যাপেক্স প্রপার্টিজ ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের নাম রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, বাড্ডা থানার বড় বেরাইদ পূর্ব হারারদিয়া, চিনাদিতে ছোট খাল বিলের উৎপত্তি বালু নদী থেকে। এই খাল বিলে বর্ষা মৌসুমে ডাঙ্গি খনন করে মাছ ধরেন জেলেরা। আর শুষ্ক মৌসুমে চাষ হয় বোরো ধান ও রবিশস্য। আইনে জলাধার ভরাট করে আবাসন প্রকল্প গড়ে তোলার কোনো সুযোগ না থাকলেও আবাসন প্রকল্প করছেন তারা। স্থানীয় কয়েকটি পরিবারের কাছ থেকে ভয়ভীতি দেখিয়ে নামমাত্র মূল্যে ৬০-৭০ বিঘা জমি কিনেন তারা। অথচ অ্যাপেক্সের নামে প্রায় ৭৫০ বিঘা জমির ওপরে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দিয়েছে। ১৯৭২ সালের নদী আইনের ১৩৫ নং অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, ভরা মৌসুমে পানি যতদূর পর্যন্ত যাবে, তার পুরোটাই নদী বা বিলের জমি। পানি শুকিয়ে গেলে ফোরশোর ভূমি হিসেবে পূর্ববর্তী মালিক পুনরায় ওই জমির দখল পাবেন। কিন্তু সেখানে কোনোভাবেই স্থাপনা নির্মাণ বা বালু ভরাট করা যাবে না। শুধু চাষাবাদের কাজে ওই জমি ব্যবহার করা যাবে। অথচ আইন ভঙ্গ করে খালের জমিতে তারা বালু ভরাট করছে বলে অভিযোগ করেন স্থানীয় মানুষ।
খাল বিলের জমি আবাসন প্রকল্পের জন্য নামজারির সুযোগ নেই। যদি হয়ও তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথা প্রশাসনের।
বেরাইদ মোড়লপাড়া জামে মসজিদের সভাপতি মাজেদুর রশিদ বলেন, মসজিদের জন্য খালের মধ্যে থাকা ৪২ বিঘা জমি মসজিদ উন্নয়নের জন্য ভরাটের উদ্যোগ নিলে অ্যাপেক্স গ্রুপের লোকজন বাধা দেয়। এ ব্যাপারে এলাকাবাসী ফুঁসে উঠলে সাবেক এমপির ছেলে মুসল্লিদের বলে ‘তার কোম্পানি মসজিদের ৪২ বিঘা জমি ভরাট করে দিবে। কিন্তু এটা মানতে পারছেন না মুসল্লিরা। কারণ কোম্পানিটি মসজিদের জমি দখল করে রেখেছে। এতে করে পুরো এলাকাবাসী ক্ষোভে ফুঁসে উঠছেন। যেকোনো মুহূর্তে বড় ধরনের অঘটন ঘটার আশঙ্কা রয়েছে বলেও জানান তিনি। এলাকার স্কুলশিক্ষক তাজুল ইসলাম বলেন, এই চক্রটি জমি ক্রয় করেছে। কিন্তু যা কিনেছে তার থেকে কয়েক গুণ বেশি ভয় দেখিয়ে দখল করে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দিয়েছে। ৪২ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক শের মোহাম্মদ বলেন, এখানে তাদের পৈতৃক সম্পত্তিতেও বালু ভরাট করতে দিচ্ছে না অ্যাপেক্স প্রপার্টিজ । যেখানে মসজিদের সম্পত্তি জোর করে দখলে রেখেছে সেখানে আমি তো কিছুই না।
এ বিষয়ে বাড্ডা থানার ওসি ইয়াসীন গাজী বলেন, আমি শুনেছি মসজিদের জায়গাতে বালু ভরাট করা হবে। তবে কেউ বাধা দিচ্ছে সেই বিষয়ে কোনো অভিযোগ পাইনি। আইনশৃঙ্খলা বিঘœকারী যেই হোক অভিযোগ পেলে তার ভিত্তিতে আমরা প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নিবো।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা