ইউনিয়ন ফি বাবদ কোটি টাকা আদায় তবুও ডাকসু নির্বাচন নিয়ে গড়িমসি
- ঢাবি প্রতিনিধি
- ১৪ জুন ২০২৪, ০০:০৫
প্রতিষ্ঠার সূচনালগ্ন থেকেই বাংলাদেশের ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য অধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু)। ’৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ’৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থান, মুক্তিযুদ্ধসহ, স্বাধীনতা পরবর্তীকালে স্বৈরশাসকবিরোধী আন্দোলন ও শিক্ষার্থীদের নায্য অধিকার আদায়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে ছাত্র সংসদটি।
১৯২৩ সালে ডাকসুর প্রতিষ্ঠার পর থেকে মোট ৩৭ বার নির্বাচন হয়েছে। তন্মধ্যে ২৯টি নির্বাচন হয়েছে স্বাধীনতার পূর্বে। স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে ৮টি নির্বাচন হয়েছে। ১৯৯০ সালের পরে দীর্ঘ ২৮ বছর পেরিয়ে সর্বশেষ ডাকসুর নির্বাচন হয়েছিল ২০১৯ সালের মার্চ মাসে। নতুন কমিটি গঠনের মেয়াদ পাঁচ বছরে গড়ালেও নির্বাচন নিয়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেয়া হয়নি পদক্ষেপ। সুষ্ঠু পরিবেশের দোহাই দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কালক্ষেপণ করছে বলে অভিযোগ করেছে ছাত্র সংগঠনগুলো।
এ দিকে ডাকসুর হল সংসদ কক্ষে একচেটিয়া প্রভাব বিস্তার করে রেখেছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। সেখানে অন্যান্য রাজনৈতিক সংগঠনের কর্মসূচি দেখা যায় না বললেই চলে।
হল সংসদের বরাদ্দ দেয়া কক্ষেও ছাত্রলীগের হল সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের জন্য আসন বরাদ্দ রয়েছে। অন্য কোনো ছাত্র সংগঠনের প্রভাব না থাকায় রুমটি ছাত্রলীগের ‘হল অফিস’ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
ঢাবি ছাত্রদল শাখার সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহস ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, ‘ছাত্রলীগ ক্যাম্পাসে ত্রাস কায়েম করে রেখেছে। কোনো সংগঠনই বাধাহীনভাবে তাদের রাজনৈতিক কর্মসূচি করতে পারছে না। অবৈধভাবে মধুর ক্যান্টিন, ডাকসুতে একচেটিয়া প্রভাব বিস্তার করেছে তারা।
১৯৭৩ সালে ঘোষিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশে ডাকসুর কথা বলা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের গঠনতন্ত্রে উল্লেখ করা আছে, প্রতি বছর ডাকসুর নির্বাচন হবে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সুুষ্ঠু পরিবেশের অভাব বলে দোহাই দিয়ে কালক্ষেপণ করছে। সাধারণত ডাকসুর জয়ী প্যানেলে পাঁচজন শিক্ষার্থী সিনেটের সদস্য হন। সেখানে শিক্ষার্থীদের দাবি-দাওয়াগুলো তুলে ধরে তারা। কিন্তু চার বছর ধরে শিক্ষার্থী প্রতিনিধি ছাড়াই চলছে সিনেটের সার্বিক কার্যক্রম।
সাধারণ শিক্ষার্থীদের মন্তব্য , ঢাবিতে সব নির্বাচন হয়, হয় না শুধু ডাকসুর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সিনেট সদস্য নির্বাচন থেকে শুরু করে চতুর্থ শ্রেণী কর্মচারীদের নির্বাচন ঘটা করে অনুষ্ঠিত হলেও হয় না শুধু ডাকসুর নির্বাচন। কেন হয় না এ প্রশ্ন সবার মনে।
এ দিকে ডাকসুর নির্বাচন না হলেও থেমে নেই ফি নেয়া। প্রতি বছর অন্যান্য ফির মতো শিক্ষার্থীদের থেকে ইউনিয়ন ফি বাবদ প্রায় ৫০ লাখ টাকা আদায় করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। চার বছরে দুই কোটি টাকা আদায়ের পরেও নির্বাচনে গড়িমসি করছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
‘ফি নিয়েও কেন নির্বাচন নেই’ এমন প্রশ্নের জবাবে ভিসি বলেন, ইউনিয়ন ফি বাবদ যে টাকা নেয়া হয় সেটা সঞ্চিত আছে। পরবর্তী নির্বাচনে সেটা ব্যয় করা হবে।
ডাকসু নির্বাচন দাবি করে ঢাবি শাখার ছাত্রদলের সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহস বলেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ছাত্র সংগঠনের প্রকৃত সহাবস্থান নিশ্চিত করে সুষ্ঠু প্রক্রিয়া অনুসরণ করে অতি দ্রুত ডাকসু নির্বাচন চায়।
গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির আহ্বয়াক ডাকসুর সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসাইন বলেন, ২০১৯ সালের ডাকসু নির্বাচনের পর ক্যাম্পাসে বাকস্বাধীনতার আবহ তৈরি হয়েছিল। শিক্ষার্থীদের সমস্যাগুলো সরাসরি প্রশাসনকে বলার সুযোগ হয়েছিল। হলের গণরুম-গেস্টরুমে শিক্ষার্থী নির্যাতন অনেকাংশে কমেছিল। ডাকসু নির্বাচন বন্ধ করে সেই আবহ নষ্ট করা হয়েছে। তাই শিক্ষার্থীদের কল্যাণে ডাকসু নির্বাচন হওয়াটা জরুরি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও ডাকসুর সাবেক সদস্য তানভীর হাসান সৈকত বলেন, শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের জন্য ডাকসু অতীতেও যেভাবে ভূমিকা রেখেছে। ভবিষ্যতেও ভূমিকা রাখবে। সেজন্য পুনরায় ডাকসু নির্বাচন দেয়া প্রয়োজন। ঢাবি ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে আমরা ভিসি স্যারের সাথে দেখা করেছি। শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রশাসন যেন ডাকসু নির্বাচনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে, সেজন্য আমরা দাবি জানিয়েছি।
তিনি আরো জানান, সংসদ কক্ষ ছাত্রলীগের দখলের অভিযোগ ভিত্তিহীন। শুধু ছাত্রলীগ নয়, অন্যান্য সংগঠন যেমন- ছাত্রফ্রন্ট ও ছাত্র ইউনিয়নও ডাকসুর কক্ষে মাঝেমধ্যে মিটিং করে থাকে।
ঢাবি ভিসি ডাকসু নির্বাচন প্রসঙ্গে গণমাধ্যম কর্মীদেরকে জানান, সুষ্ঠু পরিবেশ পেলে আমরা ডাকসু নির্বাচনের আয়োজন করব। এ ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংগঠনগণ ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের ঐক্যবদ্ধ সহযোগিতা দরকার।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা