১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

কোটা পুনর্বহালের প্রতিবাদে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ

সরকারি চাকরির নিয়োগে কোটা বহাল রাখাঢ হাইকোর্টের রায়ের প্রতিবাদে রাবিতে বিক্ষোভ : নয়া দিগন্ত -

সরকারী চাকরিতে কোটা পদ্ধতি পুনর্বহালের প্রতিবাদ এবং কোটা পদ্ধতি বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ, সমাবেশ ও মানববন্ধন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবাদ, বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধন করেছেন শিক্ষার্থীরা।
ঢাবি প্রতিনিধি জানান, সরকারি চাকরিতে বেতনকাঠামোর ৯ম থেকে ১৩তম গ্রেডে (আগের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর) মুক্তিযোদ্ধা কোটাসহ কোটা পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্তকে অবৈধ ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। এই রায়ের প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থীরা।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়টির কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে সমবেত হতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। এরপর কয়েক শ’ শিক্ষার্থী একটি মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ স্থান প্রদক্ষিণ করে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে একটি সমাবেশ আয়োজন করেন।
পুরো কর্মসূচিতে তাদেরকে ‘মানি না মানব না, কোটা পদ্ধতি কোটা পদ্ধতি’; ‘বাতিল চাই বাতিল চাই, কোটা পদ্ধতি কোটা পদ্ধতি’; ‘মানি না মানব না, কোটা পদ্ধতি পুনর্বহাল’; ‘আমার সোনার বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই’; কোটা বৈষম্য নিপাত যাক, মেধাবীরা মুক্তি পাক’; ‘সারা বাংলায় খবর দে, কোটা প্রথার কবর দে’; ‘১৮ এর হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার’; ‘সকল কোঠা বাতিল হোক, যোগ্যতার ভিত্তিতে চাকরি হোক’; ‘আমজনতার হাহাকার, গর্জে উঠুক আরেকবার’; ‘কোটামুক্ত নিয়োগ হোক, যোগ্য প্রার্থীর চাকরি হোক’ ইত্যাদি সংবলিত স্লোগান দিতে দেখা যায়।
এ ছাড়া সমাবেশে অবিলম্বে সরকারি চাকরিতে সর্বপ্রকার কোটা বাতিলের দাবি জানান শিক্ষার্থীরা। অন্যথায় বৃহত্তর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন তারা।
শিক্ষার্থীরা বলেন, আমরা ২০১৮ সালে কোটা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছি। আমরা তখন রক্ত দিয়েছি। তার পরিপ্রেক্ষিতে সরকার এ কোটা পদ্ধতি বাতিল করেছিল। আবারো হাইকোর্ট সেই কোটা পুনর্বহাল করেছে, আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। আমরা হাইকোর্টের এ রায়কে প্রত্যাখ্যান করছি।
তারা বলেন, একটা দেশে কখনো ৫৬ শতাংশ কোটা থাকতে পারে না। এটা সেই দেশের মেধাবীদের সাথে তামাশা করার মতো। আমরা আমাদের সাথে এ তামাশা মেনে নেবো না। আমরা রাজপথে এসেছি, আজকের এটা তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া। আমরা আবারো কালকে আসব। যদি এ রায় বহাল থাকে তাহলে আমরা রাজপথে আবারো নামতে বাধ্য হবো। আমরা আমাদের দাবি আদায় না করে ঘরে ফিরে যাবো না।
চবি সংবাদদাতা জানান, বাংলাদেশে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটাব্যবস্থা পুনর্বহালের প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শিক্ষার্থীরা। এ সময় শিক্ষার্থীদের ‘বৈষম্যমূলক কোটা প্রত্যাহার চাই’; ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলায় বৈষম্যের ঠাঁই নাই’ ইত্যাদি দাবি সংবলিত প্লেকার্ড হাতে প্রতিবাদ করতে দেখা যায়।
গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
মানবন্ধনে রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী শাহিজুল ইসলাম বলেন, আমরা ২০ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে স্বাধীন দেশ পেয়েছি। আমরা বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান জানাই, তারা দেশের
সূর্য সন্তান। কিন্তু তাই বলে তাদের সন্তান এমনকি নাতি-নাতনিরাও পরিশ্রম কম করে কোটার ভিত্তিতে চাকরিতে যোগদান করবে এটা মেনে নেয়া যায় না। সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ কোটা কোনো দেশের স্বাভাবিক শিক্ষাব্যবস্থা হতে পারে না।
একই বিভাগের মাশরুর আহমেদ বলেন, দেশের বিপুলসংখ্যক বেকার সমস্যার মধ্যে শিক্ষার্থীদের ওপর কোটার মতো বৈষম্যমূলক নিয়ম চাপিয়ে দেয়া হলে বেকার সমস্যা আরো বৃদ্ধি পাবে। আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান জানাই কিন্তু এই রায়ে অসন্তুষ্ট।
এর আগে বুধবার রাত ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় জিরো পয়েন্ট এলাকায় সমবেত হয়ে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের জন্য আন্দোলন করে শিক্ষার্থীরা।
রাবি প্রতিনিধি জানান, বাংলাদেশে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা ব্যবস্থা পুনর্বহালের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীরা।
গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে আন্দোলনে সমবেত হন শত শত শিক্ষার্থী। এ সময় কোটাবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দেয় তারা।
এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী মারুফের সঞ্চালনায় আইন বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী সানজিদা বলেন, আমি একজন নারী এবং আমার প্রথম শ্রেণীর কোটা থাকা সত্ত্বেও আমি এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। কারণ আমি বিশ্বাস করি আমার মধ্যে যদি মেধা থেকে থাকে, দক্ষতা থেকে থাকে তবে আমি আমার মেধা, দক্ষতা দিয়ে প্রথম শ্রেণীর চাকরি অর্জন করতে পারব। আমি বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের প্রতিটা মেয়েরই এই সক্ষমতা আছে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী যখন প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন তার জন্য কোনো কোটার দরকার হয়েছিল? নিশ্চয়ই হয়নি। তাই আমরা যারা মেয়েরা আছি আমাদেরও কোনো কোটা দরকার নেই।
জবি সংবাদদাতা জানান, সরকারি দফতর, স্বায়ত্তশাসিত বা আধা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন করপোরেশনে চাকরিতে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে (৯ম থেকে ১৩তম গ্রেড) মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলসংক্রান্ত পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। হাইকোর্টের এ রায়ের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
বৃহস্পতিবার বেলা ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে এ আন্দোলন শুরু হয়। পরে মিছিল নিয়ে বাহাদুর শাহ পার্ক ঘুরে প্রধান ফটকের সামনে সমাবেশ করেন আন্দোলনকারীরা।
এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘চাকরিতে কোটা, মানি না, মানবো না’, শেখ হাসিনার বাংলায়/শেখ মুজিবের বাংলায়, কোটার ঠাঁই নাই’, মুক্তিযুদ্ধের বাংলায়, কোটার ঠাঁই নাই’ সহ নানা স্লোগান দেন।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বলেন, স্বাধীনতার তিপ্পান্ন বছর পরে এই বৈষম্য মানা যায় না। বঙ্গবন্ধু একটি বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য আজীবন কাজ করেছেন। ২০১৮ সালে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকল কোটা বাতিল করেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের অমান্য করে হাইকোর্ট এ সিদ্ধান্ত দিয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement
সিরাতুন্নবী সা: মানবজাতির জন্য একটি বিশ্বজনীন বার্তা : ধর্ম উপদেষ্টা এখন দলকে শক্তিশালী করতে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে : নাসের রহমান খাগড়াছড়িতে গাড়ি উল্টে যুবক নিহত ডিসেম্বরের পর নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা করতে হবে : গোলাম পরওয়ার অন্তর্বর্তী সরকার সমৃদ্ধ-সুশাসিত বাংলাদেশ গঠনে অঙ্গীকারবদ্ধ : প্রধান উপদেষ্টা ইউক্রেনে শান্তিরক্ষী মোতায়েনের প্রস্তাব : ম্যাক্রোঁ ও টাস্কের বৈঠক বেনাপোল বন্দরে এলো আমদানি করা ৪৬৮ টন আলু রাজশাহীতে পাহারাদারের লাশ উদ্ধার, শরীরে আঘাতের চিহ্ন শ্রমিকদের মাঝে বেতন বৈষম্য দূর করতে হবে : গোলাম পরওয়ার হেলাল হাফিজ : একটি কবিতা লিখে যিনি ছাত্রাবস্থায় তারকাখ্যাতি পেয়েছিলেন পার্লামেন্টে প্রথম বক্তৃতায় যা নিয়ে কথা বললেন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী

সকল