১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

খামারিবান্ধব নন-প্রাণিসম্পদ ডিজি ঘুষ ছাড়া মিলে না পশুচিকিৎসা

অভিযোগ ডেইরি ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশনের
-

প্রাণিসম্পদ অধিদফদরের মহাপরিচালক (ডিজি) ডা: মোহাম্মদ রেয়াজুল হক খামারিবান্ধব নন। এটা আমাদের জন্য খুবই দুঃখের ব্যাপার যে, একজন ডিজি যদি অভিভাবক হয়ে খামারিবান্ধব না হন, উনি যদি হিমায়িত গোশত আমদানিকারকদের বন্ধু হন, যদি পাউডার মিল্ক আমদানিকারকদের বন্ধু হোন, তাদের সহায়ক ভূমিকা পালন করেন তাহলে আমরা কার কাছে যাব?
কথাগুলো বলছিলেন বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশনের (বিডিএফএ) সভাপতি মোহাম্মদ ইমরান হোসেন। তিনি বলেন, উনি (ডিজি) খামারিদের কোনো সহযোগিতা করছেন না। তার কার্যক্রমে বোঝাচ্ছেন, দেশের দুধ উৎপাদনে তাদের চিকিৎসক ও মিল্ক প্রসেসিং কোম্পানিগুলোই সব কাজ করছে।
গতকাল শনিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন। কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে দেশে চোরাই পথে গরু আসা বন্ধ, রেমালে ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের সহায়তা ও গুঁড়া দুধের শুল্ক বাড়ানোর দাবিতে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
বিডিএফএ সভাপতি মো: ইমরান হোসেনের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক মো: শাহ ইমরান, সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট এ কে এম নাজীব উল্লাহ, আলী আজম রহমান শিবলী, অর্থ সম্পাদক জাফর আহমেদ পাটোয়ারী প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলন চলাকালেই রাজধানীর কেআইবি মিলনায়তনে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের আয়োজনে ডেইরি আইকন পুরস্কার অনুষ্ঠান চলছিল। যেখানে প্রধান অতিথি ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী আব্দুর রহমান। ওই অনুষ্ঠান বয়কট করে সংবাদ সম্মেলন করা হচ্ছে কি না প্রশ্ন করা হলে ইমরান হোসেন তা অস্বীকার করেন। বলেন, ওই অনুষ্ঠানে খামারিদের দাওয়াত দেয়া হয়নি। পশু চিকিৎসক এবং আমরা খামারিরা একে অপরের পরিপূরক।

সংবাদ সম্মেলনে জামাল হোসেন নামে এক প্রান্তিক খামারি বলেন, ‘আমি ডিজির সঙ্গে দেখা করতে গেলে তিন দিন পরে দেখা করার জন্য সময় দেন। গরু অসুস্থ হলে ডাক্তারদের সহযোগিতা পাওয়া যাচ্ছে না।’ মোহাম্মদপুরের আদাবরের খামারি রাশিদা বেগম জানান, তার ২০টি গাভীর মধ্যে ১৫টি মারা গেছে। গরু যখন অসুস্থ হয়ে পড়ে, তখন ডাক্তারদের ফোন দিলে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা দিতে হবে বলে দাবি করেন। বাধ্য হয়ে ৮ হাজার টাকা দেয়া হয়। ডাক্তারের সামনেই দুটি গাভী মারা গেছে। কী রোগ হয়েছিল তা জানতে তারা পরীক্ষার জন্য আলামত নিলেও এখনও রিপোর্ট দেননি। আমি এখন নিঃস্ব।
এ সময় বিডিএফএ সভাপতি ইমরান হোসেন বলেন, আগে ডাক্তাররা মোটরসাইকেলযোগে আসতেন, তাদের ২০০, ৩০০ বা ৫০০ টাকা দিলেই হতো। সরকার (উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাদের) মোবাইল ভ্যাটেরিনারি ক্লিনিক (গাড়ি) দেয়ার পর ডিমান্ড আরো বেড়েছে। এক হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত দিতে হয়। ঘুষ ছাড়া সেবা পাওয়া যাচ্ছে না।

গুঁড়া দুধের ওপর আমদানি শুল্ক বাড়ানোর দাবি জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, আমদানি করা গুঁড়া দুধ আমাদের সাঙ্ঘাতিকভাবে ক্ষতি করছে। এসব দুধের মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। মেয়াদোত্তীর্ণের কাছাকাছি বস্তা আকারে বাল্ক ফিল্ড মিল্ক নামক গুঁড়া দুধ এনে নতুন মোড়কে বাজারজাত করে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা ঘটনা ঘটে। গুঁড়া দুধ আমদানির মাধ্যমে দেশের দুগ্ধশিল্প এক ধরনের বাধার মুখে পড়েছে। গুঁড়া দুধ আমদানিতে কঠোরতা আরোপ করে সঠিক ও কার্যকর উদ্যোগ নিলে দেশ দুই বছরের মধ্যে দুধে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়া সম্ভব।
তিনি বলেন, নানা অজুহাতে বিদেশ থেকে বাল্ক ফিল্ড নামের গুঁড়া দুধ আমদানি বাংলাদেশের দুগ্ধ শিল্পের জন্য হুমকিস্বরূপ। শিশুখাদ্য সেরেলাক বাংলাদেশে তৈরি হয় না। বাল্ক ফিল্ড মিল্ক আমদানির বিপরীতে শুল্ক বাড়িয়ে দেশীয় শিল্পকে আরও বেগবান করার আহ্বান জানাচ্ছি।
মানুষের মতো গরু-ছাগলের জন্যও ত্রাণ সহায়তার দাবি জানিয়ে ইমরান হোসেন বলেন, বাংলাদেশে আঘাত হানা প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’ দেশের প্রাণিসম্পদ খাতে বড় ক্ষত তৈরি করেছে। বিশেষ করে কোরবানির হাটের উদ্দেশ্যে যারা গবাদিপশু লালন করেছেন, তারা বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছেন। দুর্গত অনেক এলাকায় পশুর প্রয়োজনীয় খাবার নেই। অনাহারে কিংবা পচা খাদ্য খেয়ে অনেক পশু নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে, মারাও পড়ছে। চারণভূমি ডুবে যাওয়ায় পাওয়া যাচ্ছে না সবুজ ঘাস। এ মুহূর্তে চিকিৎসা, গরুর ঘর তৈরি করে দেয়া ও আর্থিক প্রণোদনা প্রয়োজন। খামারিদের ব্যাংক ঋণ মওকুফ করতে হবে। সহজ শর্ত ও সুদবিহীন কৃষিঋণের ব্যবস্থা করতে হবে। খামারিদের ক্ষতি নিরূপণ করতে হবে দ্রুত। সরকারকে আপৎকালীন খাদ্যের (সাইলেস) ব্যবস্থা করতে হবে।
চোরাই পথে গরু আসছে অভিযোগ করে ইমরান হোসেন বলেন, ২০১৪ সালে ভারতে বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর সেখান থেকে বাংলাদেশে গরু আসা বন্ধ করে দেয়। চাহিদা মেটানোর জন্য বাংলাদেশে গবাদিপশুর লালন-পালন বেড়ে যায়। আর সেটাই বাংলাদেশকে এখন স্বয়ংসম্পূর্ণ করেছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement